জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব কী হবে?

মহামারি করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠার চেষ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশও নানা সমস্যা মোকাবেলা করছে। এরমধ্যে আবারও একধাপ জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি! যা অনেকটা ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ পরিস্থিতি হয়ে দেখা দিয়েছে।

কোনো রকম আগাম ঘোষণা ছাড়াই গত ৫ আগস্ট (শুক্রবার) রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে। এরআগে গত ৪ নভেম্বর ২০২১ জ্বালানি তেল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে স্বাভাবিকভাবে পণ্য পরিবহনের ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ভোগ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, জ্বালানি তেলের দামের বিষয়টি সরাসরি জনস্বার্থ তথা ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামগ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত।

সারাবছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিক্রি করা মোট জ্বালানি তেলের ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে পরিবহন খাত। প্রায় ১৬ শতাংশ ব্যবহৃত হয় কৃষি খাতে। শিল্প খাতে ৭ ও বিদ্যুৎ খাতে ১০ শতাংশ তেল ব্যবহৃত হয়। এইসব ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব যে পড়বে, তা বোঝাই যাচ্ছে।

হুট করে তাই দাম বৃদ্ধির কারণে করোনাকালে কষ্টের মধ্যে থাকা মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ের আকার যে আরও স্ফীত হবে- এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ফলে, এই প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তকে সুচিন্তিত বলে মনে হয়নি। যদিও সরকার এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নানা যুক্তি তুলে ধরেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশী দাতা ও ঋণদাতাদের নানা পরামর্শ ও তাদের কাছ থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নেবার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। সেধারাতেই এই আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি বলেও অনেক বিশেষজ্ঞ গণমাধ্যমে কথা বলতে শুরু করেছেন। কারণ যাইহোক, এই বাড়তি চাপ জনগণকে মারাত্মক সমস্যার দিকে যে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই পরিস্থিতির প্রভাব শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে, সেটার উপরে নির্ভর করছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জনগণে বর্তমান জীবন আর ভবিষ্যত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ মনোযোগী হবেন বলে আমাদের জোরালো আশাবাদ।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতেলের দাম বৃদ্ধি