‘ছিনতাইকারী বাইক না আমার রিযিক নিয়ে গিয়েছিল’

বাইক হারানোর ১৪ ঘন্টা পর সেটি ফেরত পেলেও এক মিনিটের জন্য হেলমেটটি মাথা থেকে খোলেননি জীবিকা হিসেবে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং বেছে নেওয়া শাহনাজ আক্তার পুতুল।

শাহনাজ বলেন, আমি হেলমেট পড়ে থাকলে মনে হয় আমার সঙ্গে বাইক আছে, আসলে ছিনতাইকারী বাইক না আমার রিযিক নিয়ে গিয়েছিল।

বুধবার দুপুরে তেজগাঁও পুলিশের বিভাগীয় উপ কমিশনারের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

শাহনাজ বলেন, আমার দুই ছেলেমেয়েকে সকাল হলেই টিফিন বাবদ ১০০ টাকা দিতে হয়, আমি দিন আনি দিন খাই। ছিনতাইকারী জনি আমার রিযিকটাই নিয়ে গিয়েছিল।

‘বাইক হারানোর পর আমি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম, সবাই আমাকে বলেছে এই বাইক আর ফিরে পাওয়া যাবে না, পুলিশ বাইক খুঁজে দিতে দিতে বাইক বিক্রি করা হয়ে যাবে। বাসায় মা বকেছে কেন অপরিচিত মানুষকে বাইক দিলাম।’

পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শাহনাজ বলেন, সত্যি আমি পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ, আপনারা আমার রিযিক ফিরিয়ে দিয়েছেন। পুলিশ চাইলে সব পারে, আমি অভিভূত যে এক রাতের মধ্যেই পুলিশ আমার বাইক ফিরিয়ে দিয়েছে।

শাহনাজ বলেন, বাইক হারানোর পর অনেকেই আমাকে নতুন বাইক দিতে চেয়েছেন, কিন্তু আমার কারো কাছে হাত পাতার স্বভাব নেই। এটা আমার অহংকার না এটা আমার নীতি।

আমাকে পারলে বাইক চালানো সম্পর্কিত কোন স্থায়ী কাজ দেন, যেটা করে আমি আমার সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিয়ে লালন পালন করতে পারি। সন্তানদের সময় না দিয়ে আমি টাকা আয় করতে চাই না।

সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমাদের কাছে বিষয়টি আমলে আসার পর থেকেই আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে যাই। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জনির বোনের ঠিকানায় যাই, সেখান থেকে বেশ কিছু তথ্য পাই, পরে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার রঘুনাতপুরের বাসায় জনি (জোবায়দুল ইসলাম জনি) থাকতে পারে। পরে ঢাকা থেকে তেজগাঁও বিভাগের সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফের নেতৃত্বে শের এ বাংলা নগর থানার ওসি (অপারেশন) আহাদসহ একটা ফোর্স ওই এলাকায় যায়। রঘুনাতপুরের এলাকাবাসী আর আমাদের কিছু প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাইকসহ জনিকে রাত সাড়ে তিনটার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামি জনি সম্পর্কে জানতে চাইতে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, জনির উদ্দেশ্য ছিল শাহনাজের বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারণা করে বাইক চুরি করা। তবে জনি আরো কোনো বাইক চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা সেটা রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তা জানা যাবে। আমরা আদালতের কাছে আজ রিমান্ড চাইব।

সংবাদ সম্মলনের শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের পক্ষ থেকে শাহনাজকে আর্থিক সহায়তা করা হয়। সবশেষে শাহনাজকে তার বাইকের চাবি হাতে তুলে দেন বিপ্লব কুমার সরকার। শাহনাজ মাতৃস্নেহে বাইকটি জড়িয়ে ধরে বীরদর্পে বাইক চালিয়ে উপ-কমিশনারের অফিস ছেড়ে যান।

মোটরসাইকেল ছিনতাইরাইড শেয়ারিংলিড নিউজ