ছাত্রলীগের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নজরে যুবলীগের একাধিক নেতা

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ছাত্রলীগের নেতাদের পাশাপাশি আলোচনায় ছিল যুবলীগের কয়েকজন নেতার প্রসঙ্গও। যুবলীগের একাধিক নেতার নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: যেভাবে আমি জঙ্গি দমন করেছি, ঠিক সেভাবে তাদেরও দমন করা হবে।

শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠকের শেষ দিকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

ওই বৈঠকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ‘দানব’ বলে সম্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে যুবলীগের কিছু নেতাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন: এরা শোভন-রাব্বানীর থেকেও খারাপ।

আলোচনার এক পর্যায়ে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন কীভাবে উদযাপন করা হবে, সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এরপর বৈঠকে উপস্থিত সবাই জাঁকজমকের সাথে তার জন্মদিন পালনের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেন।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনকে সামনে রেখে যুবলীগের মাসব্যাপী কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘২৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্মদিন’ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ আয়োজিত আলোচনা সভা, কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের কথা জানান। এছাড়া তিনি নিজেসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদেরের কথার জেরে প্রধানমন্ত্রী বলেন: আমার জন্মদিন ঘিরে কোনো জাঁকজমক আমি চাই না। এসময় যুবলীগের কয়েকজন নেতার নাম ধরে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে তার কাছে থাকা অভিযোগগুলো পড়ে শোনান এবং বলেন, চাঁদাবাজির টাকা বৈধ করতেই যুবলীগ এমন মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। চাঁদাবাজির টাকায় আমি এমন আয়োজন চাই না।

এসময় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে আগেও তাকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। ১১ বছরে এদের অনেকে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। কিন্তু আমার ত্যাগী কর্মীদের আগের সেই দুরাবস্থা রয়েই গেছে। এরা এখন অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। কই, বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়েছিল, তখন তো কাউকে অস্ত্র নিয়ে বের হতে দেখা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী ওইসব যুবলীগ নেতারা এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে জঙ্গি দমনের আদলে তাদের দমনের সতর্কবার্তা দেন।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন: এই মেয়াদে তোমরা শুধু একটি জেলা ইউনিটের সম্মেলন করতে পেরেছো। এভাবে তো দল চলতে পারে না।

উপস্থিত নেতারা তখন জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নেতাদের ব্যস্ততার কথা তুলে ধরেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের এমন অজুহাত আমি শুনতে চাই না। তোমরা না পারলে বলো আমি দলের নারী নেত্রীদের দায়িত্ব দেবো।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পর্যায়ের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, সব ঠিক করা আছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে ডিসেম্বরের আগে সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করা সম্ভব। এর প্রতিউত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন: ও, টিকেট কেটেই রেখেছো!

প্রধানমন্ত্রীযুবলীগ