শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় নিহত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের নাতি শিশু জায়ান চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হলেও এখন শোকের মাতম চলছে বনানীর ২ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়িটিতে।
শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে পরিবারের নিকট আত্মীয়রা এখনও অবস্থান করছেন শেখ সেলিমের বাড়িতে।
দাফন সম্পন্নের পর এ প্রতিবেদক চ্যানেল আই অনলাইনের মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট জাকির সবুজকে সঙ্গে নিয়ে এমন চিত্রই দেখতে পেয়েছেন।
শিশু জায়ানের জানাজা এবং দাফনকে সামনে রেখে সকাল সকাল থেকে নেয়া কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন তুলে নেয়া হলেও বাড়ির ভেতর যাতায়াত-সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। শুধু নিকটজনরাই বাড়ির ভেতর যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
তবে, বাড়ির সামনে এবং চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠে এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন। জায়ানের মৃত্যুর পর সারাদেশের মানুষ যেভাবে তার জন্য সহানুভূতি দেখিয়েছে এবং জায়ানের আত্মার মাগফিরাত করে প্রার্থনা করেছে তার জন্য অশ্রুসিক্ত নয়নে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে যাওয়া জামাতা মশিউল হক চৌধুরীর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। বলেছেন: আপনারা যেভাবে দোয়া করেছেন, জায়ানের জন্য ভালোবাসা দেখিয়েছেন। আমার বাড়িতে এসেছেন আর যারা আসতে পারেননি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জায়ানের জন্য প্রার্থনা করেছেন সকলের প্রতি আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সেই সঙ্গে অনুরোধ করছি আপনার যেন আমার জায়ানের জন্য প্রার্থনা করেছেন ঠিক তেমন ভাবেই আমার জামাতা মশিউলের জন্য প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন যেন আমার জামাতাকে আমার মাঝে ফিরিয়ে আনেন।
এদিকে সিরিজ বোমা হামলার জায়ানের পাশাপাশি তার বাবা মশিউল হক চৌধুরীও মারাত্মকভাবে আহত হন। তার পায়ে অস্ত্রপচার করা হয়েছে। পেটের ভেতর এখনও স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। চিকিৎসকরা শঙ্কামুক্ত না বললেও তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেখ সেলিম।
জায়ানের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার দাদা এম এইচ চৌধুরী (পারুল)। দাফন সম্পন্নের পর সকলে যখন একে একে বিদায় নিচ্ছিলো তখন দীর্ঘক্ষণ কবরের পাশে বসে বিলাপ করতে দেখা গেছে তাকে। পরে তাকে শেখ সেলিমের বাসার নিয়ে আসার পরও প্রিয় নাতিকে হারানোর বেদনায় কাতর দেখা গেছে৷
তিনি ছোট নাতিকে এতোটাই ভালোবাসতেন যে তার অকাল প্রয়াণের এ সংবাদ সহ্য করতে পারবেন না এমন আশংঙ্কায় জায়ানের মরদেহ ঢাকা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত জায়ানের মৃত্যুর সংবাদ তাকে জানানো হয়নি।
এর আগে দুপুর ১ টা ১০ মিনিটে শেষ যাত্রায় বনানীর ২ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসায় পৌঁছে শিশু জায়ানের মরদেহ। এরপর মরদেহ বিকাল সাড়ে ৪টায় বাসার পাশের চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠে নিয়ে আসা হয়। তারপর বাদ আসর বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে পরিবারের পক্ষে কথা বলেন শেখ সেলিম। জায়ানের জন্য দেশবাসী যে সহমর্মিতা দেখিয়েছে তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে আহত জামাতা মশিউল হক চৌধুরীর সুস্থতা কামনা করে সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে শেখ সেলিমের বাসায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ঘণ্টাখানেক অবস্থান শেষে বের হন প্রধানমন্ত্রী।
সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তা কাজে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে। জানাজার জন্য নির্ধারিত চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠেও নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রবেশের জন্য তিন গেটেই রাখা হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি ব্যবস্থা। পাশাপাশি প্রচুর মানুষের সমাগমের কথা মাথায় রেখে জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা রাখা হয়। বাসার বাইরেও বসানো হয়েছে একটি স্ক্রিন।
জায়ান্ট স্ক্রিনগুলোতে শিশু জায়ানের বিভিন্ন সময়ের ছবি, খেলার দৃশ্যসহ তার নানা রকমের প্রাণচাঞ্চল্যকর মুহূর্তের স্মৃতি প্রদর্শিত হচ্ছে।
রোববার শ্রীলঙ্কায় ৩টি গির্জা ও ৩টি হোটেলসহ মোট ৮টি স্থাপনায় সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। যাতে ৩৫৯ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাণ। যার একজন জায়ান চৌধুরী৷ জায়ানের বাবা মশিউল আহত হলেও নিরাপদে রয়েছেন তার মা এবং দুই ভাই।