২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে চাকরির উদ্দেশে বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। চলতি বছরের ৯ মাসেই বিদেশে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ৩ লাখ। শতাংশের হারে বছর শেষে এই অভিবাসনের প্রবাহ কমে দাঁড়াতে পারে ২৭ শতাংশে।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিফিউজিস অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতিপ্রকৃতি-২০১৮’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিবাসীদের নিয়ে করা এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রামরু’র চেয়ারম্যান ড. তাসনীম সিদ্দিকী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে জানুয়ারি মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৯ মাসে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মী গেছেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৫ জন। কিন্তু ২০১৭ সালে গিয়েছিল ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর বিদেশে কর্মী কম গেছে ২ লাখ ৭১ হাজার ২৩ জন। বছরের বাকি নভেম্বর ও ডিসেম্বর এই ২ মাসেও যদি কর্মী যাওয়ার হার বিগত মাসগুলোর মত অব্যাহত থাকে তাহলে বছর শেষে অভিবাসনের হার ২৭ শতাংশ কমে যাবে।
অভিবাসী কমে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো নারী অভিবাসীর সংখ্যা কমে যাওয়া। গত বছর প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার জন নারী কর্মী বিদেশে গেলেও এবার তা অনেক কমে গেছে। শতাংশের হারে বছর শেষে নারী অভিবাসীর হার ২০ দশমিক ০৩ শতাংশ কমে আসবে।
বিদেশে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণেই নারী অবিবাসীর সংখ্যা কমেছে, এর প্রভাবে মোট অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে অভিবাসীর সংখ্যা কমলেও রেমিট্যান্স বেড়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার। কিন্তু এই পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১ হাজার ৫৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ রেমিট্যান্স বৃদ্ধি হতে পারে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ।
কিন্তু চলতি বছর ব্যাপক হারে অভিবাসীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় আগামী বছর রেমিট্যান্সের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালেক বলেন, সৌদিতে সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হন। সৌদিয়ানরা নারী শ্রমিকদের ভোগ্যপণ্য মনে করে। শুধু সৌদি নয় যেসব দেশ নারী শ্রমিকদের ভোগ্য পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে সেসব দেশে নারী শ্রমিক পাঠানো থেকে বিরত থাকা দরকার।
প্রতিবেদনে তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, এ বছরই বিদেশে সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ কারণে এই পর্যন্ত ৮শ’র বেশি নারী কর্মী দেশে ফিরে এসছেন আরো শ’ খানেক ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। এর মধ্যে এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে সৌদি আরবে।
প্রতিবেদনের বলা হয়, ১২ ধরনের চাকরি বন্ধ করা হয়েছে সৌদি আরবে। বন্ধ করা কাজের মধ্যে রয়েছে বোরখা তৈরির কাজ। আর এই কাজে সৌদিতে যেত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী।
এতে আরো বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১২ সাল থেকে বন্ধ থাকা শ্রম বাজার ২০১৮ সালে খুলেছে বলে সরকার দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে পুরুষদের জন্য ওই শ্রমবাজার বন্ধই রয়েছে। দেশটিতে এ বছর মাত্র ২ হাজার ৬শ জন শ্রমিক গেছেন; যাদের অধিকাংশই নারী শ্রমিক।
অভিবাসনের কারণে দেশে দারিদ্রের হার কিছুটা কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিবাসীরদের কল্যাণে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে রামরু। এতে বলা হয়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালায় অভিবাসীদের শুধু লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে এর সুফল ভোগে অভিবাসী ও তাদের পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিদেশে বিপদে পড়া শ্রমিকদের আইনি সহায়তা, দোভাষী নিয়োগ ও সৃষ্ট মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দেশে শ্রমিকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বিদেশে কর্মী পাঠানো এ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে দালালদের দৌরাত্ম বন্ধ করে সরকারি ভাবে এসব কাজ সম্পাদন করার দাবি জানানো হয়।
এছাড়া প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের অর্থ প্রশাসনিক এবং কাঠামো নির্মাণে ব্যয় না করে তা শুধু অভিবাসীদের প্রত্যক্ষ সেবাদানে ব্যবহার ও বিদেশে ফ্রি ভিসা বাতিলের বিরুদ্দে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানানো হয় রামরুর পক্ষ থেকে।