ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ঠেকিয়ে সুন্দরবন আবারও দেখিয়ে দিল

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর আঘাত বুক পেতে নিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে প্রাকৃতিক বেষ্টনি বলে পরিচিত সুন্দরবন। প্রায় ১৩০/১৪০ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ প্রথমে ভারতের সুন্দরবন অংশে প্রবেশ করে, তারপরে তা বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে এসে দুর্বল হতে থাকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ রোববার ভোর পাঁচটার দিকে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা উপকূল অতিক্রম করে। পরে আঘাত হানে সাতক্ষীরায়। ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল রাত নয়টায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবন দিয়ে অতিক্রম শুরু করে। এর ফলে উপকূলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে, হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। আজ (রবিবার) বিকেলে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে।

এর আগে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা একইভাবে সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আর এবারও বুলবুলকে রুখে দিয়ে ভৌগলিক বিচারে তার প্রয়োজনীয়তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

সুন্দরবনের ওই অংশ দিয়ে না প্রবেশ করে ঘূর্ণিঝড় যদি মাঝ বরাবর প্রবেশ করতো, তাহলে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় তা অতীতের অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের পরের পরিসংখ্যান দেখলে পরিষ্কার হয়। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের আগে সময়মতো সরকারী নানা সংস্থার যথাযথ উদ্যোগ ও স্থানীয় জনগণ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ায় হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য কম হয়েছে।

চলতি বছর এ নিয়ে মোট সাতটি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্টি হলো। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় পামুক চীনে, ফণী ভারতের উড়িষ্যা ও বাংলাদেশে, বায়ু ভারতে, হিক্কা, কায়ার ও মাহা ভারতে আঘাত করে। ভৌগলিক বিচারে এই অঞ্চল বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট ওইসব আপদ আগে থেকে ঠেকানোর কোনো প্রক্রিয়া না থাকলেও ঝুঁকি মোকাবিলায় নানা পদ্ধতি বেশ কার্যকর। আমরা মনে করি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি, সামাজিক বনায়ন বাড়ানো ও দেশের প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিত। এসব বিবেচনা করে বহুল পরীক্ষিত সুন্দরবনের আশেপাশে অনাকাঙ্খিত শিল্পায়ন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু না করে আমাদের মহামূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবন সুরক্ষায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে সচেষ্ট থাকবেন বলে আমাদের আশাবাদ।

ঘূর্ণিঝড়সুন্দরবন রক্ষা