গ্রাহকের আমানত ফেরতের বিষয়ে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের কোনো গ্রাহকের গচ্ছিত আমানতের যেন ক্ষতি না হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক আমানতকারী যেন সময় মত তাদের আমানত ফেরত পান সে বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত আর্থিক খাতের গ্রাহকদের মধ্যে যেন আস্থার কোনো ঘাটতি দেখা না দেয় সেজন্য আমানত ফেরত দেয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

মঙ্গলবার নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে এ খাতের সাম্প্রতিক অস্থিরতার বিষয়ে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারল্য সহায়তা চেয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো ভাল প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়ে তারল্য সংকট মেটাতে পারে। অথবা যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্বল অবস্থানে রয়েছে সেগুলো ভাল প্রতিষ্ঠানের সাথে একীভূত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বৈঠকের পর আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি পিপলস লিজিংয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এভাবে যেন আর কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান খারাপ না হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

পিপল’স লিজিংয়ের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২/১ একটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ হওয়ায় সব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা যে খারাপ তা নয়। কারণ প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন শিল্পখাতে বিনিয়োগ রয়েছে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর।

‘কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর অবস্থা ব্যাংকের চেয়েও অনেক ভাল। কিন্তু দুঃখের বিষয় একটি প্রতিষ্ঠানের কারণে পুরো আর্থিক খাতের বদনাম হয়ে গেছে। তবে এর থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে।’

মমিনুল ইসলাম বলেন, যে উদ্দেশে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে যেমন দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পের উন্নয়ন, গৃহায়নে বিনিয়োগ, বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দেয়ার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বন্ড মার্কেটের অনুপস্থিতির কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গভর্নর বলেছেন- অর্থনীতিতে অবদান রাখতে হলে বন্ড মাকের্টের দরকার আছে। এ বিষয়ে যতটুকু প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা দিবে।

আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ২/১টি প্রতিষ্ঠানের কারণে যেন আর্থিক খাতে সমস্যা না হয় বিশেষ করে তারল্য সংকট যেন না হয়, সেজন্য ব্যাংক বা অন্য কোনো ভাবে আমাদের তারল্য দিয়ে সহযোগিতা করার আবেদন জানিয়েছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কী বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তারা দেখবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো অর্থ সরবরাহ করবে না। অর্থাৎ তারা অন্য কোনোভাবে অর্থ আনার কাঠামো তৈরি করে দিতে পারে। তবে গ্রাহকের কোনো চেক যেন ডিসঅনার বা প্রত্যাখ্যান না হয় সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে।

আইডিএলসি’র ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, আর্থিক খাতের তারল্য ফেরাতে  বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছি। সেটা হতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো স্কিমের মাধ্যমে অথবা শক্ত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের বিনিয়োগের মাধ্যমে। সমস্ত বিষয়টা বিবেচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।

উদাহারণ হিসেবে তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারতের একাটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তারল্য ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপর এক ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। আমাদের দেশের বিষয়টাও সেরকম হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুব বেশি ভাল নয়। ওইসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এখন বাকি ২৯টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেন এমন অবস্থা না হয় সে লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ব্যাংকে টাকা না রেখে ওই টাকা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখে। এতে উভয়ই উপকৃত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সব আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বলা হয়েছে, আমানতকারীদের কোনো চেক যেন ডিসওনার (প্রত্যাখ্যান) না হয়। এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এতে আমানতকারীদের আস্থায় ফাটল ধরবে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসায়িক কার‌্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দিবে।

আমানতআর্থিক প্রতিষ্ঠানপিপলস লিজিংব্যাংক