গ্রাম আদালতের আর্থিক এখতিয়ার বাড়ানোর সুপারিশ

গ্রাম আদালতের আর্থিক এখতিয়ার ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেছেন এই আদালত আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা। একই সাথে তারা এই আইন বাস্তবায়নে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর উপরও দিয়েছেন।

রোববার দুপুরে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প বিষয়ে’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এই সুপারিশ করেন।

ইউনাইটেড নেশনস ডেভোলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প- দ্বিতীয় পর্যায়ের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ইকরামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইইউ ডেলিগেশনের হেড অব কো-অপারেশন মারিও রোনকনি, ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদিপ্ত মুখার্জি । এছাড়াও অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

এসময় প্রধান অতিথি বলেন, উচ্চ আদালত হতে মামলার চাপ কমাতে, একই সঙ্গে জনগণের কাছে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থার সুযোগ পৌছে দিতে সরকার ২০০৬ সালে গ্রাম আদালত আইন পাশ করে, যা পরে ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়। এই আইন ইউনিয়ন পরিষদকে ছোটখাটো মামলার নিষ্পত্তির ক্ষমতা প্রদান করেছে।

তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউএনডিপি ও সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ “অ্যাকটিভিটিং ভিলেজ কোর্টস ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি পাইলট প্রকল্প ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়ন করে। এই পাইলট প্রকল্পটি দেশের ওই সময়কালে দেশের ১৪টি জেলার ৫৭ টি উপজেলার ৩৫১টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হয়েছিল।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক আরও বলেন, এই পাইলট প্রকল্পের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে ২০১৬ সালের জানুয়ারি হতে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, যা ডিসেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলবে। ২য় পর্যায়ের এ প্রকল্প দেশের ৮টি বিভাগের ২৭ জেলার ১২৮টি উপজেলার এক হাজার ৮০টি ইউনিয়নে কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘অ্যাকটিভেটিং ভিলেজ কোর্টস ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের সাত বছরের সাফল্য ৭০ লাখের বেশি গ্রামীণ জনগণকে বিচার পেতে সাহায্য করেছে, যা দেশ ও দেশের বাইরের স্টেকহোল্ডারদের মনোযোগ বাড়িয়েছে। একইসঙ্গে তা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনডিপির মধ্যকার অংশীদারিত্ব অব্যাহত রেখেছে।

এসময় আরও জানানো হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ প্রকল্পের প্রথম ও ২য় পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ৪০ মিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। এর সঙ্গে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কাছে বিচারিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার আরো ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার সহায়তা করেছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইইউ ডেলিগেশনের হেড অব কো-অপারেশন মারিও রোনকনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সামাজিক বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, বেশিরভাগ লোক বিশেষ করে নারী ও শিশুরা যাতে বিচারের সুযোগ এবং বিবাদের সমাধান পেতে পারে সেজন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর অঙ্গীকার বজায় রেখেছে।’

এছাড়া মাগুরা থেকে আগত সুবিধাভোগী পবিত্র বালা জানান, তিনি গ্রাম আদালতের বিচারের মাধ্যমে ১৬ হাজার টাকা ক্ষতি পূরণ পেয়েছেন। তিনি গ্রাম আদালতের মাধ্যমে পাওয়া এই সহযোগিতার জন্য আনন্দ প্রকাশ করেন।

ফরিদপুরের একজন চেয়ারম্যান তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, তিনি তার চেয়ারম্যানের মেয়াদকালে গ্রাম আদালত পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন। এখানে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা অপর্যাপ্ত। এখানে আমার অভিজ্ঞতা হলো, বিরোধী পক্ষ নোটিশ গ্রাহ্য করতে চায় না।

 

ইউরোপিয় ইউনিয়নগ্রাম আদালতস্থানীয় সরকার