গর্বের ২১ বছরে দর্শকই যখন অনুপ্রেরণা

একুশ বছরে চ্যানেল আই

একুশ। এ শুধু সংখ্যা নয়। একুশ মানে বাঙালির অহংকার, সম্মান ও মর্যাদার স্মারক। আর এমন একটি অর্থবহ প্রতীকী সংখ্যায় পদার্পণ করতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল বাংলা টেলিভিশন, চ্যানেল আই। ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’কে ধারণ করে ১ অক্টোবর ২০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে চ্যানেলটি।

চ্যানেল আইয়ের হাত ধরে এদেশের টেলিভিশন জগতে উন্মোচিত হয় এক নতুন দিগন্তের। গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষী মানুষ এবং টেলিভিশন শিল্পকে অনেক ‘প্রথম’ উপহার দিয়েছে চ্যানেল আই।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রিয় চ্যানেলকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাচ্ছেন শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সব অঙ্গনের মানুষ।

দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে চ্যানেল আই। সেখানে চ্যানেল আইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণী দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। চ্যানেল আইকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন দেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন থেকে শুরু করে বাংলা চলচ্চিত্রের শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খান।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে স্বাধীনতার সাথে দায়িত্বও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমি আশা করি, এ দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেমের প্রতি অবিচল থেকে ‘চ্যানেল আই’সহ সকল গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, নির্মল বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে জাতি গঠনে অব্যাহত অবদান রেখে যাবে।

‘‘প্রতিষ্ঠার পর হতে চ্যানেল আই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে বিভিন্ন অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করে আসছে। বিশেষ করে কৃষি উন্নয়ন তথা গ্রামনির্ভর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অগ্রযাত্রায় ‘চ্যানেল আই’-এর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তা ছাড়াও পরিবেশ ও প্রকৃতির সংরক্ষণ ও উন্নয়নে এ চ্যানেলটি কাজ করে যাচ্ছে। দেশে-বিদেশে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে ‘চ্যানেল আই’ অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’’

চ্যানেল আইয়ের উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, কলাকুশলী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চ্যানেল আই সংবাদ পরিবেশনে বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এবং রুচিশীল শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে।

চ্যানেল আইয়ের ২১ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্যও কামনা করেন তিনি।

শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, কল্যাণ আর আনন্দের বার্তা নিয়ে চ্যানেল আই পৌঁছে যাক দেশের সর্বত্র এবং বিশ্বময়।

চ্যানেল আইয়ের ২১ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘চ্যানেল আই আমার কাছে এক বিস্ময়। হাসতে হাসতে একেকটি অবাক করার মতো কাজ উপহার দেয় এই চ্যানেলটি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত কত যে চ্যানেল আইয়ে অনুষ্ঠান করেছি, তাদের আমন্ত্রণে দেশে-বিদেশে গান গাইতে গেছি, হিসাব নেই।’

‘‘দেখেছি, মানুষ এই টেলিভিশনকে কত ভালোবাসে। কারণ, আমার ভাই তুল্য ফরিদুর রেজা সাগর ও শাইখ সিরাজ অন্যরকম যাদুকরি ক্ষমতায় মানুষকে মুগ্ধ করতে পারেন। তারা তাদের প্রতিটি কাজে সমাজের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মানুষদের সম্পৃক্ত করেন। তারা শুদ্ধধারার চর্চা করেন ও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেন। এগুলো অনেক বড় কাজ। এগুলোই দেশের কাজ, সংস্কৃতির কাজ।’’

চ্যানেল আইয়ের দর্শকই সকল অনুপ্রেরণার উৎস। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এমনই মন্তব্য করেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর।

তিনি বলেন, ‘কী অবাক ব্যাপার! দেখতে দেখতে কেটে গেল বিশটি বছর। লাল-সবুজকে হৃদয়ে আর চোখের পাতায় ধারণ করে চ্যানেল আই পদার্পণ করছে গর্বের ২১ বছরে। লাল-সবুজের পাশাপাশি, আপামর দর্শক- যারা দেশ বিদেশের মাটিতে বসে চ্যানেল আই দেখছেন, এক কথায় তারা সবাই আমাদের পরম শক্তি। অনুপ্রেরণার উৎস। জন্মদিনের এই উচ্ছ্বাস-লগ্নে সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।’

চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ‘একুশ বাঙালি জাতির অহংকার। এর সঙ্গে মিশে আছে আমাদের ভাষার স্বাধীনতা অর্জনের মহান স্মারক। বিশ পেরিয়ে একুশ মানে তারুণ্যের সবচেয়ে সেরা সময়। চ্যানেল আই ঠিক সেই জায়গাটিতে আজ। শুভক্ষণে চ্যানেল আইয়ের সামনে পেছনের সব মানুষের প্রতি উষ্ণ অভিনন্দন।’

সংবাদে চ্যানেল আই:
মানুষ থেকে মানুষে মুহূর্তে সংবাদ পৌঁছে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিপ্লব ঘটালেও গণ আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে এখনো গণমাধ্যমের অবস্থান। মানুষের এই চিন্তা ও প্রত্যাশার সম্প্রসারণটিই ঘটিয়েছে আদর্শ গণমাধ্যম। গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের এই আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টির পেছনেই নিবিড় কর্মসাধনা রয়েছে চ্যানেল আই ‘সংবাদ’-এর।

শতভাগ পেশাদারিত্ব, নতুনত্ব, সৃজনশীলতা ও তারুণ্যের জয়গান গেয়ে চ্যানেল আইয়ের মতোই চ্যানেল আই ‘সংবাদ’-এর অভিযাত্রা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক বিকাশ, খাদ্য নিরাপত্তায় শতভাগ স্বনির্ভরতা অর্জন তথা বাংলাদেশের গঠনমূলক পরিবর্তনের সরব সঙ্গী চ্যানেল আই।

অনন্য উচ্চতায় ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’
যাত্রার শুরু থেকেই মাটি ও মানুষের কথা বলে চ্যানেল আই। কারণ চ্যানেল আইয়ের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ! ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’-নামটি বাংলার আপামর জনসাধারণের কাছে খুব পরিচিত। শাইখ সিরাজ প্রযোজিত, উপস্থাপিত ও পরিচালিত কৃষিবিষয়ক টিভি ধারাবাহিকটি বর্তমানে অনন্যমাত্রায় পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে বাংলার কৃষকের কাছে। শুধু চ্যানেল আইয়ের নয়, এটি বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে বাংলার গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থা ও কৃষক জীবনকে তুলে ধরেন শাইখ সিরাজ। যার ফলে কৃষকদের কাছে তিনি একজন কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

গণমানুষের হৃদয়ের কাছে ‘তৃতীয় মাত্রা’
বাংলাদেশের টেলিভিশন টকশো’র ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত চ্যানেল আইয়ের ধারাবাহিক টকশো ‘তৃতীয় মাত্রা’। শুধু তাই নয়, এটিকে বলা হয় বাংলাদেশের প্রথম টকশো। সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয় এই টকশোতে। তবে রাজনীতি নির্ভর আলোচনা অনুষ্ঠান হলেও এটিতে সমাজ, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, মানববিদ্যাসহ প্রতিটি বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে, অনুষ্ঠানটিতে রাজনীতির বাইরের বিষয়েও আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনাকারী, পরিচালক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান।

রিয়েলিটি শো
সংগীত, চলচ্চিত্র, নৃত্য, ভাষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে চ্যানেল আইয়ের বিভিন্ন রিয়েলিটি শো যে বড় অবদান রাখছে, সেটা অনস্বীকার্য। চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ, ক্ষুদে গানরাজ, গানের রাজার মতো রিয়েলিটি শো’র মাধ্যমে বাংলা সংগীত জগতে বেশকিছু তরুণ প্রতিভাকে খুঁজে বের করে এনেছে চ্যানেল আই। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার, মেনস ফেয়ার এন্ড লাভলি হেন্ডসাম আল্টিমেট-এর মতো রিয়েলিটি শো’র মাধ্যমে অভিনয় জগতেও বেশকিছু প্রতিভাধর তরুণ-তরুণীদের খুঁজে এনেছে চ্যানেল আই, যারা বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট ও বড় পর্দায় তুমুল আলো ছড়াচ্ছেন। প্রশংসা পাচ্ছেন সব মাধ্যমে। সেরা নাচিয়ে, উদ্ভাবকের খোঁজে, বাংলাবিদ কিংবা এসো রোবট বানাই-এর মতো রিয়েলিটি শো দেশের লুকানো মেধাবীদের সবার সামনে নিয়ে আসছে।

‘বিশেষ দিন মানেই চ্যানেল আই’
এছাড়া সারাবছর চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয়ে আসছে যুগোপযোগী ও শিল্পমান সম্পন্ন টেলিফিল্ম-নাটকসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। ঈদ, পূজা কিংবা যে কোনো বিশেষ দিবসে চ্যানেল আই প্রচার করে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। বিষয়টি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে একটি কথা প্রচলিতই হয়ে গেছে ‘বিশেষ দিন মানেই চ্যানেল আই’!

টেলিভিশন কিংবা গণমাধ্যম নিয়ে মানুষের তৃষ্ণা ও প্রত্যাশাগুলো পূরণ করে এগিয়ে চলেছে চ্যানেল আই। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ও আকাশ সংস্কৃতির নতুন নতুন অগ্রযাত্রার ভেতর চ্যানেল আইয়ের পথচলা নতুন নতুন উদ্ভাবনের ভেতর দিয়ে। প্রথম দিন যে নতুনত্বের মালা গেঁথেছিল, আজও তা গেঁথে চলেছে চ্যানেল আই।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ১ অক্টোবর দিনভর নানা আয়োজন রেখেছে চ্যানেল আই। যেখানে সমাজের সব অঙ্গনের বরেণ্যজনরা অংশ নেবেন।

১৯৯৯ সালের ১ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে চ্যানেল আই। যাত্রার ঠিক দুই বছর পর একই দিন চালু হয় চ্যানেল আই সংবাদ। অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে চ্যানেল আই অনলাইন।

আবদুল হামিদচ্যানেল আইচ্যানেল আই ২০১৯চ্যানেল আই অনলাইনডিজিটালতৃতীয় মাত্রাপ্রতিষ্ঠাবার্ষিকীপ্রধানমন্ত্রীফরিদুর রেজা সাগররাষ্ট্রপতিরিয়েলিটি শোলিড বিনোদনশাইখ সিরাজশেখ হাসিনাহাছান মাহমুদহৃদয়ে মাটি ও মানুষ