‘বিশেষ কোনো আবহাওয়ায় করোনা ভাইরাস বেশি বা কম ছড়ায়’, এমন কোনো প্রমাণ কি আছে? বৈশ্বিক মহামারী করোনা নিয়ে দুনিয়াজুড়ে যখন এই প্রশ্ন, তখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন: বিশেষ করে গরমকালে করোনা বিলীন হয়ে যায়, তবে এখনও বিষয়টি আমরা প্রমাণ করতে পারিনি।
উহান থেকে শুরু করে ইরান, ইটালি ও সাউথ কোরিয়া সবাই একই অক্ষাংশে অবস্থিত। এসব দেশের তাপমাত্রাও একই এবং একই ধরনের আর্দ্রতা। ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এ তথ্যকেই ব্যবহার করেছেন বিশ্বের অন্যান্য জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে, যেখানে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে।
এই গবেষণা যদিও একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, তবুও গবেষণার তথ্য থেকে জানা যায়, নির্দিষ্ট আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে ভাইরাসটি টিকে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ছড়ায় কিনা সেটা জানা যায়।
অক্ষাংশের ভিন্নতা ও পরিবর্তনের সাথে জলবায়ুরও তারতম্য ঘটে। সূর্যের কিরণ সারাবছর লম্ব ভাবে পরার কারণে নিরক্ষিয় অঞ্চলে উষ্ণ জলবায়ু বিরাজ করে। একই ধরনের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং অক্ষাংশ অবস্থান থাকার পাশাপাশি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া দেশগুলো মধ্যে আরও একটি মিল আছে। অঞ্চলগুলোতে ভাইরাসটি ছড়ানোর সমানুপাতিক বার্ষিক তাপমাত্রা কম থাকা এবং এভাবে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল তাপমাত্রা থাকে।
নিউইয়র্কের সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ব্রিটানি কমুশ বলেন: মৌসুমী ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসঘটিত এক ধরণের ছোঁয়াচে সর্দিজ্বর দেখা যায়। যা মানবে দেহে প্রতিবছরই হয়ে থাকে এবং উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত দেশগুলোতে শীত শেষে ভাইরাসটি মরে যায়।
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন: কিন্তু আমরা এখনও জানি না করোনা ঠিক ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ছোঁয়াচে জ্বর কিনা।
রজার্স নিউ জার্সি মেডিক্যাল স্কুলে সংক্রামক রোগ বিষয়ে লেখাপড়া করছেন ডেভিড কেনিমিমো, তিনি বলছেন: সব বিশেষজ্ঞই আশার কথা বলছেন। আমিও সে কথাই বলতে চাই। এ মুহূর্তে ‘আশা’ করার চেয়ে আর কোনো শব্দ আমার জানা নেই। আমরা আশা করতেই পারি এই গ্রীষ্মেই ভাইরাসটি বিলীন হয়ে যাবে।
আশা প্রকাশ করে ব্রিটানি কমুশ বলেছেন: আমরা এখনো জানি না, এই অজানা ভাইরাসে উৎপত্তিস্থল কোথায়? যদি মৌসুমী আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে কোভিড-১৯ এর কোনো সম্পর্ক থাকে তাহলে আমরা ভাইরাসের উৎসের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এবং আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে দেখব কোভিড-১৯ মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত নাকি না।
রুটজার্সের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডেব্রা চিউ বলছেন: কোভিড-১৯ ভাইরাসটি সম্পর্কে আমাদের বোঝার ভুল রয়েছে। ভাইরাসটির আচরণ এই মুহুর্তে মৌসুমী আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে মিল থাকলেও বিষয়টি যে সঠিক সেটা কিন্তু অনেকাংশেই অসম্ভব।
শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে । কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে, এমনকি ভাইরাস মহামারি রূপ ধারণ করতে পারে।
ডেব্রা চিউ জানান: প্রতি বছর মৌসুমী ঋতু পরিবর্তনে ভাইরাসঘটিত ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে আমরা কাজ করছি না।
বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ভৌগলিক চিত্র ও আবহাওয়ার প্রভাব নিয়ে করোনা ভাইরাসের কারণ উল্লেখ করলেও ভাইরাসটি কিন্তু এখনও অজানাভাবেই সংক্রমণ করে চলেছে বিশ্ববাসীকে।
করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীনে শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৮০ হাজার ৭৯৩ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন তিন হাজার ১৬৯ জন।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ইটালিতে একদিনে ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৫১ জন। দেশটিতে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ১৬জন।
বিশ্বের ১২৭টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৬৭ জন, মৃত্যুবরণ করেছে ৪ হাজার ৯৪৭ জন। আশার কথা হলো: সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৭০ হাজারের বেশি মানুষ।