ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হলগুলো থেকে গণরুম সংস্কৃতি বন্ধে কাজ করবেন। নির্বাচনে জিতে ডাকসুর সদস্য হয়েছেন তিনি। তারপর থেকে নিজের প্রতিশ্রুতি রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্তও সেই গণরুমের অভিশাপমুক্ত করতে পারেননি।
তবে একটি জায়গায় তানভীর প্রচণ্ড সফল। অন্যভাবে হলেও নিজের কথা রেখেছেন তিনি। বারবার চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসযোগিতায় যখন গণরুম সংস্কৃতি বন্ধ করতে পারেননি; তখন নিজের নামে বরাদ্দ রুম ছেড়ে এই গণরুমের বাসিন্দা হয়েছেন তিনি। কথা আর কাজে মিল রেখেছেন। এই সময়ের নেতাদের মধ্যে যা দেখা যায় না বললেই চলে।
আমরা অনেকেই জানি, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গণরুম যেন এক অভিশপ্ত স্থান। ছোট্ট একটা রুমে গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি করে ২৫-৩০ শিক্ষার্থীকে বসবাস করতে হয়। আর এই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের। অথচ তাদের স্বপ্নের জীবন শুরু হওয়ার কথা ছিল ভিন্নভাবে, স্বাছন্দ্য-আনন্দের মধ্যে। কিন্তু গণরুমের সেই পরিবেশ তাদের কারো কারো পুরো জীবনকেই দুর্বিষহ করে তোলে। এই দুর্বিষহ জীবন থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করাই ছিল তানভীরের চাওয়া।
এ জন্য নানা পদক্ষেপের পর গত ১ অক্টোবর গণরুম সমস্যার সমাধানে ১৫ কার্যদিবসের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি হিসেবে আজ গণরুমের শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে ওঠার ঘোষণা দেন। যদিও স্বাভাবিকভাবেই তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। প্রক্টরিয়াল টিমের বাধার মুখে পড়ে মূল ফটকের সামনে বসে বিক্ষোভ করেন।
তবে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন, চলতি বছর থেকেই গণরুম সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করবে ঢাবি প্রশাসন। এমনকি নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের এ বছর থেকেই প্রশাসনের মাধ্যমে হলে সিট দেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
উপাচার্য যতোই আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি দিন না কেন, আমরা জানি এই সমস্যা অন্য জায়গায়। এদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সিট বরাদ্দ হয় ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ছাত্র সংগঠনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে। তাই যতদিন না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে না পারবে; ততদিন এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।
তানভীর হাসান সৈকতের এই আন্দোলন ঘুমিয়ে থাকা ঢাবি প্রশাসনকে যে ঝাঁকুনি দিয়েছেন, তা দেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জাগিয়ে তুলবে। আমাদের আশা, এভাবেই একদিন গণরুমের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।