কে আছেন পাবলিকের পক্ষে?

পরিবহণ শ্রমিক-মালিকদের কাছে শেষ পর্যন্ত কি নতি স্বীকার করাই হলো? প্রশ্নটা উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। নাকি দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল অবস্থায় পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কঠোর মনোভাব দেখাতে চাচ্ছে না সরকার।

আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি বুয়েটে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির পদত্যাগ দাবির আন্দোলন এখনো নেভেনি। ট্রেন দুর্ঘটনা ও কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। পেঁয়াজের বৃদ্ধিসহ লবণ নিয়ে গুজব। চালসহ শাকসব্জির মূল্য বৃদ্ধি। সবশেষে সড়ক পরিবহণ আইন নিয়ে এক ধোয়াটে পরিস্থিতির সৃষ্টি। এতগুলো সংকট সামলাতে সরকারের অবস্থা এমনিতেই লেজেগোবরে।

তাই হয়তো এই পরিস্থিতিতে পরিবহণ খাত নিয়ে একটু নমনীয় ভাব প্রদর্শন করছে সরকার। কারণ জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে নানা ছুঁতোয়। পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে তা চরমে গিয়ে ঠেকবে।

সরকারের মন্ত্রীরা তাই ২৪ নভেম্বর বসেছিলেন সড়কের নৈরাজ্য দূর করে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য। সড়ক মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামালউদ্দীন, তথ্য সচিব আব্দুল মালেক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে নিয়ে চার সদস্যের সাব কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী দু’মাসের মধ্যে কমিটিকে তাদের সুপারিশ জমা দিবে।

একটি দেশকে অচল করার জন্য এমন সোনার পরিবহণ শ্রমিক-মালিক সংগঠনই যথেষ্ট। যাদের নেতৃত্বে আছেন এক সময়ের প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান ও জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গা। যাদের পরোক্ষ অঙ্গুলি নির্দেশেই দেশ অচল করে দেয়া সম্ভব। এটা সরকারকে তারা এর আগেও বুঝিয়েছেন। এবারও বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন। যদিও শাজাহান খান বলেছেন, পরিবহণ শ্রমিকদের ফাঁসির কথা বলে ভুল বোঝানোর কারণে সড়কে তারা গাড়ি নামায়নি ভয়ে। আসলে ধর্মঘট ডাকা হয়নি। এটা অপপ্রচার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সড়ক আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। সর্বোচ্চ ও সর্বোনিন্ম কত বছরের সাজা হবে এবং সর্বোচ্চ ও সর্বোনিন্ম কত টাকা জরিমানা হবে সেটা লেখা আছে। অপপ্রচারে চালকদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল। বাহ্ কি সুন্দর কথা। যেন ফুটপাতের সেই টিয়া পাখির শেখানো বুলি আর কি!

কতটা নমনীয় হয়েছে তার আরও কিছু নমুনা দেয়া যাক: মন্ত্রী বলেছেন, ‘এখনো অনেকে লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেনি। আগামী বছরের ৩০জুনের মধ্যে নবায়ন কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। যারা ফিটনেস ট্যাক্স দেননি তাদের জরিমানা মাফ করার আবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সুপারিশসহ আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিলে ট্যাক্স মাফ করে দেয়া হবে।

তার মানে আগামী সাত মাস সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলবে। এই গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটালো কি না সেটা কোনো ব্যাপার না। মরলে তো পাবলিক মরবে। পরিবহণ শ্রমিক মরবে না। আর লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ সাত মাসের কথা মাথায় রেখে গাড়ি চালাবে তারা। ঠিক মে-জুন মাসের দিকে গিয়ে তাদের মনে পড়বে লাইসেন্সের কথা। তখন সবাই ভিড় করবে একসাথে বিআরটিএ তে। তখন আবার দেরি হবে। বলা হবে অনেকেই করতে পারেনি। আবারও সময় বাড়ানোর সুযোগ চাই। আর ফিটনেস এর আবেদন সময় মতো করতে না পারায় অনেকে আবদার করবে- সময় আরো বাড়ানো হোক। মামার বাড়ির আবদার কথাটা তো আর এমনি এমনি চালু হয়নি।

সব মিলিয়ে পরিবহণ খাত নিয়ে সরকার আজ পর্যন্ত কোনো বড় রকমের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। রাজপথে কত শিক্ষার্থী প্রাণ দিল। কত আন্দোলন হলো। কই কারো সাজা হয়েছে সর্বোচ্চ? হয়নি। কারণ সাজা দিলেই গাড়ি বন্ধ। দেশ অচল করার হুমকি প্রত্যক্ষভাবে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন। তাদেরকে সান্তনা দিবেন। কিছু টাকা পয়সা দিবেন। বিচারের আশা দিবেন। আর শ্রমিকরা তাদের কাজ তারা করেই যাবে।

আমরা আমজনতা শুধু দেখে যাব সড়কে গাড়ির প্রতিযোগিতা। কার আগে কে যাবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হবে পরিবেশ। দু’চারটা পাবলিক মরলে মরবে, গাড়ির হেলপার-চালকদের তো একজন ডাকসাইটে শাজাহান খান আছেন, মসিউর রহমান রাঙ্গা আছেন। পাবলিকের পক্ষে কে আছেন?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পরিবহণ ধর্মঘট