আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট – ইরি’র (IRRI) মহাপরিচালক ম্যাথিউ মোরেল বলেছেন, যেসব প্রযুক্তি ইতোমধ্যে সহজলভ্য, সেগুলোকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে কৃষি আরও উন্নত হবে। আর এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দিতে ভূমিকা রাখছে চ্যানেল আই।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের কৃষি বিষয়ক কার্যক্রম দেখতে চ্যানেল আই কার্যালয়ে এসে এ কথা বলেন তিনি।
বুধবার সকালে ইরি’র পক্ষ থেকে একটি ম্যাথিউ মোরেলের নেতৃত্বে একটি ছোট প্রতিনিধি দল চ্যানেল আইয়ের পরিদর্শনে আসেন। দলটিকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। চ্যানেল আইয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত আলোচনার শুরুতে তিনি অতিথিদের স্বাধীনতার মাস উপলক্ষে বাংলাদেশের পতাকার রঙে রাঙানো ব্যাজ পরিয়ে দেন।
এরপর অতিথিদের উদ্দেশ্যে কৃষি উন্নয়নে চ্যানেল আই ও শাইখ সিরাজের কার্যক্রম নিয়ে একটি ভিডিও পরিবেশন করা হয়।
ম্যাথিউ মোরেল বাংলাদেশের কৃষির বর্তমান অবস্থা এবং সেখানে চ্যানেল আইয়ের পদক্ষেপ নিয়ে শাইখ সিরাজকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। জবাবে শাইখ সিরাজ জানান, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে চ্যানেল আই-ই প্রথম কৃষি বিষয়ক আলাদা বুলেটিন চালু করে। এছাড়া ‘হৃদযে মাটি ও মানুষ’-এর পাশাপাশি কৃষি বিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কৃষি ও উন্নয়ন সাংবাদিকতাকে নতুন মাত্রা দিতে ভূমিকা রাখছে চ্যানেল আই। কৃষি বরাবরই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বেশ অবহেলিত। কিন্তু চ্যানেল আইয়ের পথ ধরে এখন অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোও কৃষিকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত শাইখ সিরাজের ‘কৃষি দিবানিশি’ অনুষ্ঠানের কথাও উল্লেখ করা হয়।
ইরি মহাপরিচালক বলেন, সময়ের সঙ্গে মানুষের চাহিদা বদলাচ্ছে। এই পরিবর্তনশীল চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষি বিষয়ক কৌশল সম্পর্কে কৃষকরা যত বেশি তথ্য পাবে, তত বেশি তাদের হাতে সুযোগ থাকবে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সার্বিক উন্নয়ন করার। এতে যে শুধু কৃষকরাই আর্থিকভাবে লাভবান হবে তা নয়, এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্যও খুব জরুরি।
কৃষকদের প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়াই ভবিষ্যৎ উন্নত কৃষির জন্য চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আর এই তথ্য সরবরাহের কাজটিই গুরুত্বের সঙ্গে করছেন শাইখ সিরাজ ও চ্যানেল আই।
রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা এবং কৃষি বাজেট, কৃষকের বাজেট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মতামত সরকারের কাছে পৌঁছানোর কাজে চ্যানেল আইয়ের ভূমিকার প্রশংসা করেন ইরি’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. হুমনাথ ভান্ডারি।
শাইখ সিরাজ বলেন, কৃষকদের কাছে তথ্য পৌঁছানোর পাশাপাশি শহর ও মফস্বলে ছাদকৃষির মধ্য দিয়ে কৃষিকাজকে জনপ্রিয় করে তুলছে চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান।
ধান গবেষণা বিষয়ে প্রতিনিধি দলকে তিনি বলেন, চালের উৎপাদন বৃদ্ধি খুব প্রয়োজন। কিন্তু চালের উৎপাদন বাড়লে দাম কমে যায়। তখন কৃষকের লোকসান হয়। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে ধানের ফলন কমে গেলে বাজারে চালের দাম অনেক বেড়ে যায়। ফলে বিপদে পড়ে সাধারণ ভোক্তা জনগণ। তাই গবেষণার মধ্য দিয়ে এমন উপায় বের করা দরকার যেন ধানের ফলন অনেক বাড়ে; কিন্তু কৃষকদের লোকসান না হয়।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় কৃষিকে লাভজনকভাবে টিকিয়ে রাখার গবেষণা করতে সময় লাগে অনেক। তাই পরিবর্তিত জলবায়ুকে মাথায় রেখে গবেষণা পদ্ধতিকে দ্রুততর করার আহ্বান জানান শাইখ সিরাজ।
কৃষিতে সার্কভুক্ত দেশগুলো কীভাবে উন্নত করবে, এই ইস্যুতে ম্যাথিউ মোরেল বলেন, সার্কভুক্ত একেক দেশের জলবায়ু একেক রকম। কিন্তু তাই বলে সব দেশের কৃষির জন্য আলাদা প্রযুক্তির দরকার নেই। গবেষণার মাধ্যমে একটি উন্নত প্রযুক্তিকে একেক দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করে নিতে হবে।
ইরি’র কমিউনিকেশন অ্যান্ড স্টেকহোল্ডার এংগেজমেন্ট বিষয়ক পরিচালক তেমিনা লালানি-শরিফ বলেন, বিদেশি পর্যটকদের কৃষি সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করলে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রযুক্তি এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়া সহজ হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে শাইখ সিরাজ ইরি মহাপরিচালকের হাতে স্মারক ক্রেস্ট এবং অন্যান্য অতিথিদের হাতে উপহার তুলে দেন।
ছবি: তানভীর আশিক