কুড়িগ্রামে বুড়ি তিস্তা নদীর খনন শুরু, কৃষিজীবীদের স্বস্তি

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় এলাকাবাসীর দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের পর বুড়ি তিস্তা নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে। আবারও পানির ঢল নামবে মরা বুড়ি তিস্তায়, বাড়বে ফসল উৎপাদন, জেলেরা ফিরে পাবেন নিজ পেশা, এই স্বপ্ন দেখছেন নদীর দু’পাড়ের মানুষ।

তিস্তা নদীর একটি শাখা বুড়ি তিস্তা। এটি উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে চিলমারী উপজেলার কাচকল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে। এক সময় বুড়ি তিস্তা নদীকে ঘিরে ব্যবসা বাণিজ্যে প্রসার ঘটে। দুইপাড়ের জমি ছিল উর্বর। প্রচুর ফসল আবাদ হতো। নদী পাড়ের মানুষ মাছ শিকার ও নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।

১৯৮৮ সালের বন্যায় তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। এতে থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার গ্রামে সুইচ গেটটি ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে বুড়ি তিস্তার উৎস মুখে বাঁধ নির্মাণ করে। এতে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। নদী কেন্দ্রিক জীবন জীবিকা থেমে যায়। কৃষিতে দেখা যায় বিপর্যয়। প্রভাবশালী ভুমি দস্যুরা দখল করে নেয় বুড়ি তিস্তার বিভিন্ন জায়গা।

গত দুই বছর আগে বুড়ি তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিক ও সুধী সমাজ। তারা নদী খনন করে এর পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা ও নদী দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছিল।

উলিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু বলেছেন, বুড়ি তিস্তা খনন শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখছে এলাকাবাসী। বুড়ি তিস্তায় আবারও পানির ঢল নামবে। ফসলের উৎপাদন বাড়বে। জেলেরা ফিরে পাবেন নিজ পেশা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ডেলটা প্ল্যান কর্মসূচির আওতায় ১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩১ কিলোমিটার ব্যাপী খনন কাজ শুরু হয়েছে। খনন শেষে নদীর পানিপ্রবাহ বহমান করতে নদীর উৎস মুখে রেগুলেটর স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এটি করা সম্ভব হলে বুড়ি তিস্তা তার পূর্বের অবস্থা ফিরে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম।

বুড়ি তিস্তা খনন শেষে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারলে দুই পাড়ের মানুষ যেমন কৃষিতে সুবিধা পাবে, তেমনি মৎস্যজীবীরা ফিরে পাবে তাদের সেই পুরনো পেশা। সেই সাথে বর্ষা মৌসুমে থাকবে না জলাবদ্ধতা।

আরও দেখুন ভিডিও প্রতিবেদনে:

কুড়িগ্রামনদী খনননদী খনন শুরু