কিংবদন্তি চিত্রগ্রাহককে অশ্রুসজল বিদায়

কিংবদন্তি চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খানের মৃত্যুতে শোকার্ত বাংলার চলচ্চিত্রাঙ্গন। তাঁকে শেষ বারের মতো বিদায় জানাতে এফডিসিতে জড়ো হন চলচ্চিত্রের নবীন-প্রবীন শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর দুপুর আড়াইটার দিকে শেষবারের মতো এফডিসিতে নিয়ে আসা হয় মাহফুজুর রহমান খানের মরদেহ। এসময় তাকে শেষ বিদায় জানাতে চলচ্চিত্রের এই আঁতুর ঘরে সমবেত হন চিত্রনায়িকা ববিতা, কবরী, সুচন্দা, আলমগীর, মুশফিকুর রজমান গুলজার, চম্পা, শাহনূর, অরুনা বিশ্বাস, অঞ্জনা, বাপ্পারাজ, সম্রাট, নাঈম, ওমর সানী, অমিত হাসান, সাইমন, জায়েদ, বাপ্পী, কায়েস আরজুসহ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বরেণ্য এফডিসিতে চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খানের দ্বিতীয় জানাজায় অংশ নেন। এরপর তিনি এই কিংবদন্তি চিত্রগ্রাহকের কর্মজীবন স্মরণ করে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

এরআগে শুক্রবার সকাল থেকেই মাহফুজুর রহমান খানের মরদেহ চকবাজারে তার নিজ বাসায় রাখা হয়। জুম্মার নামাজের আগে শাহী মসজিদে নেয়া হয়। সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাজা। এরপরই এফডিসিতে নিয়ে আসা হয় তাকে। এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মরদেহ দাফন করার জন্য আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে মাহফুজুর রহমানের মরদেহ এফডিসিতে নিয়ে আসার পর পরই রীতিমত হৃদয়বিদারক অবস্থার তৈরী হয়। তার চিত্রগ্রহণে বহু ছবিতে কাজ করেছেন এমন তারকা এদিন এফডিসিতে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। তারা জানান, যতো ভালো চিত্রগ্রাহক ছিলেন মাহফুজুর, তারচেয়ে ভালো ছিলেন মানুষ হিসেবে। ববিতা ও কবরী এই চিত্রগ্রাহককে মাটির মানুষ হিসেবে আখ্যা দেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মাহফুজুর রহমান খান। পরিবারের ভাষ্য, ২৫ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগের দিনও পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন মাহফুজুর। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় খেতে বসলে তার কাশির সাথে প্রচণ্ড ব্লিডিং শুরু হয়। এরপর দ্রুত হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখার পরামর্শ দেন।

এরপর থেকেই লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় এই চিত্রগ্রাহককে। কিন্তু ২৮ নভেম্বর ফুসফুস ও পাকস্থলীতে থেমে থেমে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো বলে জানান তার চিকিৎসকরা। এমনকি বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হয়ে পড়ে তার। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে মাহফুজুর রহমান খান ডায়াবেটিস ও ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন। তার স্ত্রী মারা যান ২০০১ সালে। তখন থেকেই ধীরে ধীরে তিনি অসুস্থতায় পড়েন।

পেশাদার চিত্রগ্রাহক হিসেবে দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া মাহফুজুর রহমান খান ১৯৭২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি আলমগীর কবির, আলমগীর কুমকুম, হুমায়ুন আহমেদ, শিবলি সাদিকদের মত কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালকদের সাথে কাজ করেন। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় সব চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক ছিলেন।

তার চিত্রগ্রহনে ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমার জন্মভূমি, অভিযান, মহানায়ক, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, ঢাকা ৮৬, অন্তরে অন্তরে, পোকা মাকড়ের ঘর বসতি, আনন্দ অশ্রু, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নন্দিত নরকে, হাজার বছর ধরে, বৃত্তের বাইরে, ঘেটুপুত্র কমলা।

অঞ্জনাঅন্তরে অন্তরেঅভিযানঅমিত হাসানঅরুনা বিশ্বাসআনন্দ অশ্রুআমার জন্মভূমিআলমগীরওমর সানীকবরীকায়েস আরজুঘেটুপুত্র কমলাচন্দ্রকথাচম্পাচাঁপা ডাঙ্গার বউজায়েদঢাকা ৮৬দুই দুয়ারীনন্দিত নরকেনাঈমপোকা মাকড়ের ঘর বসতিববিতাবাপ্পারাজবাপ্পীবৃত্তের বাইরেমহানায়কলিড বিনোদনশাহনূরশ্রাবণ মেঘের দিনসম্রাটসাইমনসুচন্দাহাজার বছর ধরে