চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভিন পপি বিদায়ী শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান প্যানেল থেকে। কিন্তু এবার এই প্যানেলে নেই তিনি। কেন প্যানেল ছাড়লেন, কেনই বা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না-এসব বিষয়সহ সাম্প্রতিক সময়ে আসন্ন শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে নানা তর্ক-বিতর্ক নিয়েও এই নায়িকা বুধবার সকালে কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে…
সেক্রেটারি জায়েদ খানের উদ্যোগে ড্রিম হলিডে পার্কে অস্বচ্ছল শিল্পীদের জন্য অনুষ্ঠিত চ্যারিটি কনসার্ট থেকেও আপনি নাকি ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন?
গত আড়াই বছরে কি আমরা শুধু ফান্ড সংগ্রহের জন্য এই একটাই চ্যারিটি শোতে অংশ নিয়েছি? আমার কথা হলো: আমি রিয়াজ-ফেরদৌস কি শুধুই ৫০ হাজার টাকার আটির্স্ট? এতো অল্প টাকা আমাদের পারিশ্রমিক হতে পারে? এতো বড় অভিযোগ জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে, এই টাকা যে জায়েদ খান আমাদের টাকা দিয়েছে এর কোনো ‘মানি রিসিট’ আছে? জায়েদ খান অসুস্থ শিল্পীকে দেখতে যাওয়া, জানাজা পড়া থেকে ফকিরকে টাকা দেয়ার সময়ও সেলফি তুলে রাখে। ফেসবুকে পোস্ট দেয়। তাহলে নিশ্চয়ই এই ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে এর ‘মানি রিসিট’ রেখেছে! অথবা ছবি তুলে রেখেছে! এটা যদি দেখাতে পারে তারপর এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো। আমি আগে মানি রিসিটটা দেখতে চাই।
ওই টাকা নাকি জোর করেই নিয়েছেন?
আমাদের হাদিসে উল্লেখ আছে, ডান হাতে সাহায্য করলে যেন বাম হাত না জানে। দুই দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ইন্ডাস্ট্রির অনেক উত্থান পতনের সাক্ষি আমি। কম সামর্থ্যবান অনেক শিল্পীর পরিবারের কারও বিয়ে, অসুস্থতা এসব মিলিয়ে বহু মানুষকে সাহায্য করেছি। কিন্তু কখনও শো-অফ করিনি। কাজের বাইরে অন্যকিছু নিয়ে প্রচারে আসতে চাইনি। এই ইন্ডাস্ট্রির মানুষের কাছে আমি লাখ লাখ টাকা পাবো। তাদের থেকে কখনো প্রেসার দিয়ে টাকা নেইনি। আর সামান্য ৫০ হাজার টাকা আমি প্রেসার দিয়ে নেব? এটা যারা পপিকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা কোনোভাবেই বিশ্বাস করবে না।
এই চ্যারিটি শো ছাড়াও তো আপনাকে জায়েদ খানের সঙ্গে প্রায়শই শো করতে দেখা গেছে?
জায়েদ খানের তত্বাবধানে বহু শো করেছি পুলিশ, র্যাবের। বিভিন্ন অজুহাতে ওইসব শো-এর পারিশ্রমিক আমার কাছে আসেনি। আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর সদস্যের সম্মান দেখিয়ে অন্যান্য কর্পোরেট শো থেকেও অনেক কম পারিশ্রমিক দেয়ার কথা থাকে। নামমাত্র যাতায়াত এবং ড্রেস ও নৃত্যশিল্পী যারা থাকে, তাদের খরচটাই শুধু দেয়ার কথা থাকে। কিন্তু এই টাকাগুলো জায়েদের তত্বাবধানে থাকতো। সে সবকিছু অ্যারেঞ্জ করতো। সেসবের একটি টাকাও আমার হাতে আসেনি। আমি টাকা চাইলে জায়েদ একেক সময়, একেক টাল-বাহানা করতো। বলতো- পুলিশ, র্যাব তাদের কাছে টাকা চাওয়া যায় না, আবার বলেছে পরে পৌঁছে দেবে। সেসব কোনোকিছুই আমার হাতে আসেনি। এসব টাকা জায়েদ কী করেছে আমার জানা নেই।
তারমানে জায়েদ খানের সাথে শোগুলো থেকে কোনো পারিশ্রমিক পাননি?
ওই যে ‘মানি রিসিট’ যদি দেখতে পারতাম, তাহলে উত্তর দিতে সহজ হতো। বিভিন্ন সময়ে সমিতির কাজে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। সেখান থেকে কি টাকা নিয়েছি? পুলিশের একজন সাবেক আইজিপির একটি ফান্ড কালেকশনের জন্য আমরা সবাই মিলে গিয়েছি, শো করেছি। সেখান থেকেও টাকা এসেছে, কিন্তু আমি কি পেয়েছি? থাক এসব নিয়ে আর নাই বা বলি!
কিন্তু জায়েদ খান বলছেন, সাবেক আইজিপির ফান্ড গঠন করতে উনি একাই খেটেছেন…!
হাস্যকর কথা! তার চেহারা দেখে টাকা দেইনি। সেখানে আমি, রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা সবাই ছিলাম। উনি আমাদের সবাইকে দেখে টাকা দিয়েছেন। শুধু এটা নয়, সমিতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেসব স্পন্সর আনা হতো সেগুলো আমাদের ফেস দেখেই দেয়া হতো। সবাই আমরা এসবের জন্য খেটেছি? এখানে কোনো একজন ব্যক্তিকে দেখে দেয়া হতো না। এতো কাজ করলাম টাকা নিলাম না, আর অস্বচ্ছল শিল্পীদের জন্য চ্যারিটি শো করে শুধু ৫০ টাকা হাজার নিলাম? এটা প্রাপ্ত সম্মানি হতে পারে? হয়তো তার অপকর্মের সহযোগী হচ্ছি না, তাই সে এখন উল্টাপাল্টা কথা বলছে।
এবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অংশ নিলেন না কেন?
কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে সমিতির সবাই মিলে নিতে হয়। আমি এখানে তেমনটা পাইনি। অনেকদিন ধরে আমি মিটিংয়ের মেসেজগুলো পেতাম না। কবে, কখন মিটিং কিছুই পেতাম না। আমার ধারণা স্বেচ্ছায় এগুলো করা হতো। প্রমাণ হওয়ার পর জায়েদ খান ওপেনলি আমার কাছে মাফ চেয়েছিল। পরে সে একই কাজ আবার করেছে। সর্বশেষ যেদিন মিটিং হয় সেই মেসেজ আমি পাইনি। আমি রিয়াজ এবং ফেরদৌস জানতে পেরেছিলাম পরে। আমি সিলেট থাকায় ইচ্ছে থাকার পরেও আসতে পারিনি। নির্বাচন তারা তাদের সুবিধামত তারিখ অনুযায়ি ঘোষণা দিয়েছে। যেসব শিল্পী বেশি আগ্রহী তারা কেউই প্রস্তুত না। কারণ, নির্বাচন করতে হলে প্রস্তুতি লাগে। আমি বলবো, এক তরফাভাবে নির্বাচন হচ্ছে।
আসন্ন নির্বাচনে নেতৃত্ব নিয়ে আপনার চাওয়া কী থাকবে?
আমি নেতৃত্ব বুঝি না, আমি যেটা বুঝি তা হলো শিল্পীর কল্যাণ। গত দুই বছরে দেখলাম না যে, শিল্পী সমিতির উদ্যোগে ছবি হয়েছে। শিল্পীরা বাঁচে সাহায্য দিয়ে নয়, কাজ দিয়ে। ছবির শুটিং হলে শিল্পীরা সেখানে কাজ করে ভালো থাকতে পারে। ভালো কাজের পরিবেশ যারা আনতে পারবে তাদের আসা উচিত। এই কমিটির কার্যক্রম তো আমরা দেখেছি, কিন্তু সাধারণ শিল্পীরা নিয়মিত কাজ করতে পারবেন সেই ব্যবস্থা দেখলাম না। দেখলাম শুধু হানাহানি, কাটাকাটি, বিভাজন। ইন্ডাস্ট্রির তাতে কতোটুকু এগিয়েছে? দিনের পর দিন ছবি নির্মাণ কমে আসছে। যারা কাজ করার পরিবেশ দেবে তারাই আসুক এটাই আমার চাওয়া।
ছবি: তানভীর আশিক