সম্প্রতি এক সময়ের একটি শীর্ষ দৈনিকের প্রধান খবর হচ্ছে-আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ। রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের উত্তরসূরিরা এখন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। এ খবরে বিচলিত হওয়া মানেই বোকামি।
কারণ অনেক, জামায়াত-শিবির বা স্বাধীনতাবিরোধী যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, তাদের ব্যাপারে কোনো কথা বলার আগে তাদের মতো যোগ্য হতে হবে। কি সেই যোগ্যতার মাপকাঠি? কেউ কেউ জানতে চাইতে পারেন।
যোগ্যতা হচ্ছে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের পোলাপানের মতো বা যুবলীগ বা যুবদলের কর্মীদের মতো তাদের মাথা মোটা না যে, দখল-চাঁদাবাজি-ঠিকাদারি করে টাকা পয়সার কামিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রচার পাবে। তারা খুবই সাংগঠনিক, তাদের প্রতিটি কাজই রুটিন মাফিক। তারা ধর-মার-খা- এই রাজনীতিতে বিশ্বাসী না। তারা ধীরে চলো রাজনীতি করে। তবে তাদের ভিত বেশ মজবুত। তারা চড় খেয়ে পাল্টা চড় দিবে না। সহ্য করে আবার এগিয়ে আসবে। এসে আস্থা অর্জন করার নানা ফন্দি ফিকির করবে। এবং তাদের পরের প্রতিশোধটা হবে ভয়ংকর ধরনের। কেউ টেরই পাবে না কার ক্ষতি করে ছাড়বে এরা।
সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত বলেই এখনো মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কাদের মোল্লাকে ‘শহিদ’ বলতে ভয় পায় না। তাদের রাজনীতির মূল শক্তি হচ্ছে সুদূরপ্রসারী চিন্তা। আস্তে আস্তে করে আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে ঢুকে এরা ওই দলের ইমেজ নষ্ট করার জন্য যা যা করা দরকার সব করবে। দেশবাসী নিশ্চয়ই এ রকম বহু নমুনা দেখতে পেয়েছেন।
ওই দৈনিকের খবরের মূল বিষয় হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে রাজাকারদের উত্তরসূরিরা জেলা উপজেলা শাখার পদ-পদবি কিনে নানা রকমের ব্যবসা বাণিজ্য করে সবকিছু নিজেদের আয়ত্তে আনছে। এটাই তো স্বাভাবিক। এটাই তো তাদের রাজনীতির মূলমন্ত্র।
ওই খবরে আরো বলা হয়েছে, ২০০৯ এবং ২০১৪ সাল থেকে ঢালাওভাবে এরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও সাংসদদের হাত ধরেই অনুপ্রবেশ করেছে। একটি তথ্য দেয়া হয়েছে- দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ বছরে ৫৫ হাজার বিরোধী মতাদর্শী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে অনুপ্রবেশ করেছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকবারই দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এখন প্রশ্ন হলো: কারা এই ভিন্ন মতাদর্শীদের দলে ঠাঁই দিয়েছে। তাদের নাম প্রকাশ হয়েছে কখনো? তাদেরকে কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়েছে? যা পত্রপত্রিকায় আসার মতো। জাতি কি জানতে পেরেছে কারা সেই একাত্তরের পাকিস্তানীদের সহায়তাদানকারীদের মতোই ২০২০ সালে এসে ‘প্রগতিশীল রাজাকার’ এর ভূমিকায় আছেন। সেখানেও সমস্যা আছে।
তাদেরকেও রক্ষা করার জন্য খোদ আওয়ামী লীগেও লোকজন আছেন। ছোটোখাটো নয়, প্রভাবশালী নেতাকর্মী নিশ্চয়ই তারা। আসলে রাজনীতিতে এখন রাজনৈতিক আদর্শ বলে কিছু নেই-এটা অনেককেই বলতে শোনা যায়। হতাশা আর বাস্তবতার নিরীখেই এই খেদোক্তি বিভিন্ন সময় এসে থাকে আমাদের সামনে।
আমরা এখন রাজনীতি বলে কিছু পাই না। যা আছে তা হচ্ছে পেটনীতি। নিজের আখের গোছানো ছাড়া আর কিছু নেই তাতে। দেশ ও সমাজের কথা ওই বক্তৃতাবাজি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। কিভাবে একটার জায়গায় দুইটা বাড়ি হবে, ফ্ল্যাট হবে। গাড়ির মডেল চেঞ্জ করা লাগবে ছ’মাস অন্তর-এই হচ্ছে সার্বক্ষণিক চিন্তা।
ওই খবরে একটি আশার কথা আছে শেষের দিকে। তা হলো প্রধানমন্ত্রী অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকা দলের সাধারণ সম্পাদকের পাঠিয়েছেন।
এখন দেখা যাক কি ধরণের ব্যবস্থা তিনি নেন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)