বিশ্বের প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব বলা হয় ‘কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’কে। আর এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে প্রথমবার অফিশিয়াল সিলেকশনে স্থান করে নিলো বাংলাদেশের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ।
কানের ‘আনসার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে বাংলাদেশের সিনেমা জায়গা করে নেয়ার খবরে উচ্ছ্বাস, আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়েছেন দেশের সাধারণ সিনেমা প্রেমী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি ‘আনসার্টেন রিগার্ড’ বিভাগ নিয়ে কৌতূহলও তৈরি হয়েছে সিনেমাপ্রেমীদের মনে।
‘আনসার্টেন রিগার্ড’ (ফরাসি উচ্চারণে: আঁ সার্তেইন রিগার্দ) কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সিলেকশনের একটি বিভাগ। উৎসব কমিটির সভাপতি গিলেস জ্যাকব ১৯৭৮ সালে এই বিভাগটির সাথে সিনেমাপ্রেমীদের পরিচয় করিয়েছেন।
নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিবছর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য থেকে নির্বাচিত প্রায় ২০টি চলচ্চিত্র নিয়ে ‘আনসার্টেন রিগার্ড’ বিভাগটির আয়োজন করা হয় সেল ডেবাসি থিয়েটারে।
‘আন সার্টেন রিগার্ড’ মানে ‘ভিন্ন দৃষ্টিকোণ’। প্রচলিত ধারার বাইরের গল্পের সিনেমাগুলো এই বিভাগে নির্বাচিত হয়। ২০০৫ সাল থেকে এই বিভাগে যিনি বিজয়ী হন, তার হাতে গ্রৌপামা জিএএন ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে তুলে দেয়া হয় ৩০ হাজার ইউরো, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩১ লক্ষ। ‘আন সার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে সেরার পুরস্কার ছাড়াও জুরি, স্পেশাল জুরির মতো রয়েছে আরো কিছু পুরস্কার।
এক নজরে জেনে নিন গত দশ বছরে কোন সিনেমাগুলো জিতে নিয়েছিল ‘আন সার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে সেরার পুরস্কার।
২০১০: হাহাহা ( পরিচালক হং সাং সু, দক্ষিণ কোরিয়া)।
২০১১: আরিরাং (পরিচালনায় কিম কি দুক, দক্ষিণ কোরিয়া) এবং স্টপড অন ট্র্যাক (পরিচালনায় অ্যান্দ্রিয়াস ড্রেসেন, জার্মান)।
২০১২: আফটার লুসিয়া (পরিচালনায় মাইকেল ফ্র্যাঙ্কো, মেক্সিকো)।
২০১৩: দ্য মিসিং পিকচার (পরিচালনায় রিথি প্যান, কম্বোডিয়া)।
২০১৪: হোয়াইট গড (পরিচালনায় কর্নেল মান্দ্রুকজো, হাঙ্গেরি)।
২০১৫: র্যামস (পরিচালনায় গ্রিমুর আকোনারসন, আইসল্যান্ড)।
২০১৬: দ্য হ্যাপিয়েস্ট ডে ইন দ্য লাইফ অব ওল্লি মাকি (পরিচালনায় জুহো কুওসমানেন, ফিনল্যান্ড)।
২০১৭: অ্যা ম্যান অব ইন্টেগ্রিটি (পরিচালনায় মোহাম্মদ রাসুলফ, ইরান)।
২০১৮: বর্ডার (পরিচালনায় আলি আব্বাসি, সুইডেন)।
২০১৯: দ্য ইনভিজিবল লাইফ অব ইউরিডাইস গুসমাও (পরিচালনায় কারিম আইনৌজ, ব্রাজিল)।
২০২০ সালে করোনাভাইরাসের কারণে কানের আসর বসেনি। ২০২১ সালের আসরে ‘আন সার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে ১৫ টি দেশের ১৮ টি ছবি মনোনীত হয়েছে। তালিকার ১৩ নাম্বারে আছে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদে’র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিটি।
প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করেই এই সিনেমার গল্প। যেখানে রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক হিসেবে জটিল জীবনযাপন করে। এরমধ্যে এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় রেহানা একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হয়। এরপর থেকে সে এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করতে শুরু করেন এবং ক্রমশ একরোখা হয়ে ওঠেন। কিন্তু একই সময়ে তার ৬ বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ করা হয়। এমন অবস্থায় অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও তার সন্তানের জন্য ন্যায় বিচারের খোঁজ করতে থাকেন।
পোটোকল ও মেট্রো ভিডিও’র ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমী চুয়া, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু এবং সহ-প্রযোজনা করেছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব, সাঈদুল হক খন্দকার।