কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে কয়েক মাস থেকেই চিন্তিত সেখানে কর্মরত সহায়তা সংস্থাগুলো। জনবহুল পরিবেশে সেখানে বাস করা সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা করোনার মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
কক্সবাজারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনকে সনাক্ত করা হয়েছে। সহায়তাকর্মীদের ভয় খুব দ্রুত ক্যাম্পেও ছড়িয়ে পড়বে করোনাভাইরাস। আর তার ফলাফল হবে সর্বনাশা।
করোনা রুখতে বা প্রাদুর্ভাব বিলম্বিত করতে সবধরনের পদক্ষেপই নিচ্ছে সহায়তা সংস্থাগুলো। তারপরও যদি করোনা এসেই পরে তাহলে কী করা হবে সে প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে। কিন্তু এই ভাইরাস সুসজ্জিত স্বাস্থ্য কাঠামোর ধনী পশ্চিমা এবং এশিয়ান দেশগুলোকেই বিহ্বল করে ফেলেছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটা পারবে এই লাখ লাখ রোহিঙ্গার সংক্রমণে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিতে?
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা কেয়ারের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক দীপমালা মহলা বলেন, ক্যাম্পে প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে কী হবে, তা ভাবতেও ভয় হয়। আমি বলবো, এমন কিছু হবে যা আগে কখনো হয়নি।
ক্যাম্পের ভেতরে ভাইরাসের বিস্তার রোধে যেসব পদক্ষেপ, যেমন বারবার হাত ধোয়া বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা সেসবের চর্চা করা অসম্ভব। প্রতি স্কয়ারমাইলে সেখানে ১০৩,০০০ মানুষের বাস। দুর্বল আশ্রয়ে গাদাগাদি করে থাকে পরিবারগুলো। ক্ষত বয়ে চলা অপুষ্টির শিকার এই জনগোষ্ঠী গণশৌচারগার ও হাত ধোয়ার পদ্ধতির উপর নির্ভর করে আর সেগুলো সবসময় জনাকীর্ণ থাকে। গৃহকর্মে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পানির অর্ধেকই তারা পায় না আর তিনভাগের দুই ভাগ রোহিঙ্গা সাবান ব্যবহারের সুযোগ পায়।
যুক্তরাজ্যের অ্যাকশন এগেনস্ট হাঙ্গারের ডিরেক্টর অব অপারেশন্স জুলিয়েট পারকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ‘টিকটিক করা টাইম বোমা’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন। উন্নত দেশগুলোকেই নাড়িয়ে দিয়েছে করোনা সেখানে ভঙ্গুর বা যুদ্ধপ্রবণ অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে অবস্থা তো আরো ধ্বংসাত্বক হবে।
সামনেই বাংলাদেশে আসছে বর্ষার মৌসুম। জুনে শুরু হওয়া এই মৌসুমে ঝোড়ো হাওয়া, বন্যা ও পাহাড়ধস নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
রোহিঙ্গাদের জন্য সেভ দ্য চিলড্রেনের হেড অব অ্যাডভোকেসি অ্যাথেনা রেবার্ন বলেন, খুব খুব কঠিন হবে। আমরা যা করতে পারি করছি। কিন্তু আমাদের বেশি স্বাস্থ্যসেবা নেই। যথেষ্ট ডাক্তারও নেই। নেই যথেষ্ট পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট(পিপিই)। হয়তো সামনে খুব দ্রুতই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।
কক্সবাজারে একবার কারো সংক্রমণ পাওয়া গেলে তা দ্রুতই স্থানীয়ভাবে ছড়াবে এবং ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের ভয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোভিড-১৯ হয়তো পৌঁছে গেছে, এখনো তো কাউকে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। পুরো বাংলাদেশেই করোনা পরীক্ষা সক্ষমতা কম, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তো নেই-ই। আবার যেসব রোহিঙ্গার মধ্যে কোনো না কোনো লক্ষণ উপসর্গ আছে তারা মোটেও চিকিৎসা নিতে আগ্রহী না।
ক্যাম্পে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মানবাধিকার কর্মীদেরও ক্যাম্পে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। কিন্তু সেটা কি ঝড় সামলাতে যথেষ্ট? রেবার্ন বলেন, নজীরবিহীন এক পরিস্থিতি তৈরি হবে। পুরো কক্সবাজারের জন্যই সেটা সর্বনাশা হবে।
কক্সবাজার শহর থেকে ২০ মাইল দূরে অবস্থিত এই ক্যাম্প। ২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে স্থানীয় জনগণের মধ্যে বাস করে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা।
আর গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপি আক্রান্ত ৬৬৪,১০৩ জন। আর প্রাণ হারিয়েছে ৩০,৮৮৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৪২,৩৬১ জন।