করোনা মহামারী: তরুণ ও যুবাদের মানসিক অবস্থা

মহামারী করোনাভাইরাস একদিকে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে আক্রান্ত করছে তার মনকেও। করোনার আগ্রাসনে কর্মক্ষেত্র কমে যাওয়ায় বাড়ছে বেকারত্ব, বিভিন্ন পেশায় কর্মরতরা বেকার হয়ে পড়ছে; ফলে শিক্ষিত তরুণদের কাজের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে। হতাশাগ্রস্ত তরুণদের অনেকেই হচ্ছে বিপথগামী। জড়িয়ে পড়ছে নেশা, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ নানা সন্ত্রাসী কমর্কাণ্ডে।

জাতিসংঘের এক জরিপে উঠে এসেছে, করোনার সময়ে বিশ্বের অর্ধেক তরুণ-তরুণী উদ্বেগ ও হতাশায় আক্রান্ত। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই ভুগছেন মানসিক সমস্যায়। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন অথবা ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার ঘরবন্দী থাকার কারণে বাড়ছে পারিবারিক কলহ-বিবাদ, এতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.২% হলেও যুব বেকারত্বের হার ১১.৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে জুন ২০২০ সাল নাগাদ সেটি কয়েকগুণে বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে প্রতি ছয়জনের একজন বেকার হয়েছে আর বাংলাদেশের প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার হয়েছে (২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ)। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এই বেকারত্ব বাড়ছে। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী বাংলাদেশের চাকরির বাজারে যোগদান করে। তাদের বড় একটি সংখ্যা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করে।

আইএলও বলছে, মহামারীতে তারা তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বেকারত্ব, সেই সঙ্গে তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণও ব্যাহত হচ্ছে। এতে চাকরিতে প্রবেশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। শিশু ও তরুণদের অংশগ্রহণে ‘চিলড্রেন ভয়েসেস ইন দ্যা টাইম অব কোভিড-১৯’ শিরোনামে এই জরিপে দেখা যায় যে শিশুরা এই পরিস্থিতিতে মানসিক বেদনা ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। মহামারীর সময়ে শিশু ও তরুণদের জীবনে ছন্দপতনের জন্য সরাসরি তিনটি সমস্যা বেড়ে গেছে।

সমস্যাগুলো হলো:
১. শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া
২. সামাজিক দূরত্বের কারণে মানসিক অবসাদ
৩. পরিবারে দারিদ্র বেড়ে যাওয়া

শতকরা ৯১ ভাগ শিশু ও তরুণরা বলছে, স্কুল বন্ধের কারণে তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ অনুভব করছে। এ অনিশ্চয়তা এবং বিচ্ছিন্নতা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে তারা উদ্বেগ, রাগ ও শঙ্কাসহ নানা ধরনের মানসিক চাপে রয়েছে।

আমরা জীবনে কখনো কখনো দুঃশ্চিন্তা, হতাশা, বিষন্নতা ও একাকীত্ব অনুভব করি। মাঝে মাঝে এই অনুভূতিগুলো এতটাই অসহনীয় হয়ে পড়ে যে, তা নিজের পক্ষে সামলানো সম্ভব হয় না। তখন আমরা মনে করি এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোন উপায় নেই এবং এটি আমাকে সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হবে।  ফলে, আমরা বিভিন্ন রকম ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এবং কেউ কেউ আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর পথও বেছে নেয়। যার ফলশ্রুতিতে, আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে এবং হারিয়ে ফেলছি অনেক মূল্যবান প্রাণ।

মানসিক এ ধরনের অবসাদ দূর করতে দরকার সঠিক কাউন্সেলিং। তার জন্য পরিবারের মানসিক সহযোগিতার পাশাপাশি একজন পেশাগত কাউন্সিলরের সহযোগিতা নেয়া দরকার। পেশাগত কাউন্সিলর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগত থেরাপি প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তির আত্ম-উন্নয়ন ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকেন। ফলে সমস্যা ও মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ওই ব্যক্তি নিজেই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

করোনাকরোনা ভাইরাসকরোনাভাইরাসতরুণমানসিক স্বাস্থ্য