করোনা: দ্রব্যমূল্য বাড়ানোয় কারাদণ্ডসহ ব্যবসায়ীদের জরিমানা

করোনা ভাইরাসের আতঙ্ককে পুঁজি করে বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজারে হু হু করে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। চাল, ডাল ,পেঁয়াজ, রসুন, ডিমসহ নিত্যপণ্যের বাজার বেসামাল হয়ে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩৭ ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মনিটরিং করার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও চলছে। আদায় করা হচ্ছে জরিমানাও। ১ ব্যবসায়ীকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আদায় করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।  

করোনা ভাইরাস এর ঝুঁকি এড়াতে সরকারের সতর্কতামূলক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা জারি হওয়ার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার জন্য মানুষ বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগায় অসাধু মজুতদার কিছু ব্যবসায়ী। তারা ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়াতে থাকে চাল,ডাল, ডিম, দুধ, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পিয়াজ, রসুনসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য।

কক্সবাজার শহরের বড়বাজার, কালুরদোকান বাজার, বাহারছড়া বাজার, রামু চৌমুহনী বাজার, বাংলাবাজার, লিংক রোড বাজার, কলাতলী বাজার, রামুর কলঘর বাজার, চকরিয়ার চিরিংগা বাজার, ইলিশিয়া বাজার, বদরখালী বাজার, পেকুয়া চৌমুহনী বাজার, মহেশখালীর গোরকঘাটা বাজার, নতুন বাজার, উখিয়ার কোটবাজার সহ জেলার বেশকিছু বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বুধবার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য অনেক গুণ বেড়ে গেছ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ১৮শ’ টাকা দামের চালের বস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮শ’ টাকায়। ২২শ’ টাকার চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১শ’ থেকে ১২০ টাকায়। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। প্রতিটি ডিম ১২ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব বাজারে। একটি মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। মূল্য বাড়ানো হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারেরও।

মধ্যবিত্ত ক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন: ১৭শ’ টাকা দামের চালের বস্তা ২৮শ’ টাকা দিয়ে নিলাম। সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে।

আবুল কাশেম নামের আরেক ক্রেতা জানান: লকডাউন হওয়ার ভয়ে বাসার জন্য এক মাসের বাজার নিয়ে নিলাম। তবে সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে অনেক হারে।

ফরিদুল আলম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন: আমরা পাইকারদের কাছ থেকে বেশী মুল্য দিয়ে আনার কারণে বেশী মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে আমাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কক্সবাজার দোকান মালিক ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তাক আহমদ বলেন: কক্সবাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কোন ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য কেনার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সমিতির পক্ষ থেকেও ব্যবসায়ীদের আমরা অতিরিক্ত মুনাফা না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।

কক্সবাজারের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির কারণে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। এরপর বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ পৃথকভাবে মনিটরিং শুরু করে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহজাহান আলী জানান: কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জেলা শহরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বাজারে।

তিনি বলেন: এখন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩৭ ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

কক্সবাজার শহরের কাশেম অ্যান্ড সন্স এর মিজানুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ীকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন: জেলা পুলিশের কয়েকটি টিম বাজারে গিয়ে নিয়মিত মনিটরিং করছে। অতিরিক্ত মূল্য আদায় করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হচ্ছে। কারো কাছ থেকে বেশি মূল্য আদায় করা হলে তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ফোন করার আহ্বান জানান সাধারণ জনগণের প্রতি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন: দেশের মানুষের এই বিপদের সময়, দেশের দুর্যোগের সময় যারা নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করেছে তারা কোনদিন ভালো মানুষ হতে পারে না। তাই এসব খারাপ মানুষদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

করোনা ভাইরাসকরোনাচালডালডিমপেঁয়াজরসুন