করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন: ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আগামী রমজানেও তারাবীহ নামাজসহ যাবতীয় ইবাদত ঘরে বসে করতে হবে।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ঢাকা বিভাগের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন: সৌদি আরবেও মসজিদে জামায়াতে নামাজ বন্ধ করা হয়েছে। তারাবীহ নামাজও ঘরে বসে পড়তে বলা হয়েছে। এসব থেকে আমাদেরও শিক্ষা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: আল্লাহর ইবাদত তো যেকোন জায়গায় বসে করতে পারেন। সামনেই রমজান মাস আসছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মেনে তারাবীহ নামাজ ঘরে বসে পড়ুন। এতদিন সব নির্দেশনা মেনে চলেছেন বলেই আমরা এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আমার আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় দেশবাসীকে অভিনন্দন।
তিনি আরও বলেন: ঢাকা জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কেন এত বেশি হলো সেই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। সবকিছুই এখন বন্ধ। অনেক মানুষের কষ্ট হচ্ছে বিশেষ করে যারা দিনমজুর। সেটা মাথায় রেখে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। ৫০ লাখ মানুষের রেশন কার্ড করা আছে আরও ৫০ লাখ কার্ড করা হবে। তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হবে।
এই ভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব আতঙ্কগ্রস্ত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: সারাবিশ্ব এই ধরনের ঘটনা আর দেখেনি। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত। একটা অদৃশ্য শক্তি। তাকে কেউ চোখে দেখে না। তারা জন্য পুরো বিশ্ব একসাথে চলে এসেছে, অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এর ফলে অর্থনৈতিক মন্দা বা দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। দেশকে আমরা কীভাবে রক্ষা করবো সেটা ভাবতে হবে। মন্দা আসলে যেন মোকাবেলা করতে পারি সেই জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছি। তিন অর্থবছরের পরিকল্পনা নিয়েছি।
তিনি যোগ করেন: এই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। আবার কাজ করতে হবে, না করলে তো হবে না। খুব বেশি জনসমাগম হবে না এমন কাজ করতে হবে। কৃষিকাজটা খোলা মাঠে হয়, সূর্যের তাপে বা বাতাসে ভাইরাসটি নষ্ট হয়। আবার ধান কেটে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। অনাবাদি জমি যেন না থাকে। এই গৃহবন্দী সময়ে টবে গাছ লাগান। বিভিন্ন জায়গায় হাটও বসতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে জনসমাগম যেন না হয়। দূরত্ব বজায় রেখে খোলা জায়গায় হাট বসুক। বারবার গরম পানি খান। ফ্লাস্কে করে পানি রাখুন। একটু একটু করে খান। তাহলে এই ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত কম হবেন। বাইরে থেকে কেউ এলে সংক্রমিত হচ্ছে, অনেক এলাকায় প্রাদুর্ভাব না থাকলেও এভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। কেউ সন্দেহ থাকলে বা পরিবারের কেউ সংক্রমিত তারা অন্য কোথাও যাবেন না। তার দ্বারা অন্যদের সংক্রমিত হতে পারেন।
এসময় সবাইকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন: মানুষ আতঙ্কগ্রন্থ হলে অমানুষও হয়। মায়ের একটু সর্দি জ্বর হলে দূরে ফেলে আসে অনেকে। এতটা অমানবিক হওয়ার কিছু নেই। এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার করুন। বাংলাদেশের মানুষের তো এমন অমানবিক হওয়ার কথা না। এমন একটা ভাইরাস এসেছে যে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোর অর্থ সম্পদ অস্ত্রের মহড়া এখন কোনো কাজেই লাগলো না।
দুর্নীতিগ্রস্তদের বিষয়ে তিনি বলেন: কিছু মানুষের আচরণ আমাদের দু:খ দেয়। কেউ কেউ গরীবকে দেওয়া সাহায্যের ওপর থাবা দেয়। সেটার খবর পেলেই আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। যদিও সংখ্যাটা কম। তবে সেটুকুও হোক তাও আমরা চাই না। অনেকে আবার ষড়যন্ত্র করে আরেকজনকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন। এই দুর্যোগের সময়ে এভাবে একে অন্যের পেছনে লেগে থাকবেন না। ১১টা ডিলার শিপ বতিল করা হচ্ছে। আর কিছু মামলা দেওয়া হয়েছে। আপনারা আন্তরিকতার সাথে কাজ করুন।
প্রবাসীদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: দেশে আমরা যেভাবে মানুষকে সুরক্ষিত করতে পেরেছি, প্রবাসে সেভাবে পারিনি। তাই প্রবাসে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর হার বেশি। সেটা খুবই দু:খের।