‘ওয়ার্নার বলছিল, বি স্মার্ট’

সিলেট থেকে: ডেভিড ওয়ার্নার তখন উইকেটে জমে গেছেন। কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারছিলেন না কেউ। সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২২ গজে এলেন জাকের আলী অনিক। অভিজ্ঞ ওয়ার্নার ২০ বছরের তরুণকে বললেন, ‘শুধু ব্যাটে বল লাগাও। আর কিচ্ছু করার দরকার নেই।’ অধিনায়কের কথা মাথার ভেতরে ঢুকে গেল অনিকের। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের মাঝে গড়ে উঠল ৬৩ রানের দারুণ এক জুটি। সেটিও আবার মাত্র ৩৫ বলে।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারের সঙ্গে ব্যাটিং করে শেখার সুযোগ হাতছাড়া করেননি অনিক। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে সিলেট সিক্সার্সের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান সাতনম্বরে নেমে করেছেন ১৮ বলে ২৫ রান। পরামর্শ মেনে সফল হয়ে অনিক বুঝেছেন ওয়ার্নার কত বড় মাপের খেলোয়াড়।

‘চাপ ছিল না ওয়ার্নারের সঙ্গে ব্যাট করতে। ও শুধু বলছিল ব্যাটে বল লাগাও। আর কিচ্ছু না। আমার ওটাতেই মনোযোগ ছিল এবং সেটা অটোমেটিক হচ্ছিল। একবারও স্কোরকার্ডের দিকে তাকাইনি। ও বলছিল, বি স্মার্ট। তুমি শুধু তোমার খেলা খেল।’

৪৩ বলে ৬৩ করে ওয়ার্নার আউট হলে ভাঙে জুটি। জুটি গড়ার পথে ছিল উভয়ের একটি করে ছয়ের মার। অনিকের একটি চার ওয়ার্নারের ৫ চার। তবে চোখে লাগার মতো ব্যাপার ছিল রানিং বিটুইন দ্য উইকেট। তারা দৌঁড়ে নিয়েছেন ১১টি সিঙ্গেলস, সাতটি ডাবলস (সাত বলের ব্যবধানে ৫টি)। এর পেছনে মূল ভূমিকা ৩২ বছর বয়সী ওয়র্নারের। সিক্সার্সের আরেক তরুণ ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন ধ্রব’র সঙ্গেও ২২ গজে দেখা গেছে ওয়ার্নারের দারুন রসায়ন।

মাঠের বাইরেও দলের তরুণ ক্রিকেটারদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন ওয়ার্নার। আজকের দিনের একটি উদাহরণ টেনে অনিক জানালেন, ‘সে সকাল বেলায় বলছিল ফিটনেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যত বয়সই হোক তোমার এটা ঠিক রাখতে হবে। ম্যাচের পরের দিন জিম করতে হবে। বিশেষ করে টি-টুয়েন্টি ম্যাচে দ্রুত রিকভার করতে হবে। ঠিকমতো ঘুমাতে হবে। তোমার অনেক এনার্জি, পাওয়ার লাগবে। জিমে কিছু ওয়েট নিয়ে কাজ করবে। এই তো।’

ব্যাট হাতে ২২ গজে দ্রুতগতির ওয়ার্নারের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই দৌঁড়েছেন অনিক। ডাবলস কলে দুজন দুজনকে দিয়েছেন দারুণ সাড়া।

ওয়ার্নার হোম টিমে খেলায় তাকে নিয়ে সিলেটের দর্শকদের অন্যরকম উন্মাদনা। যেন ওয়ার্নার এলাকার সন্তান! ‘সিলেট সিলেট’ কোরাসের পাশাপাশি ওয়ার্নার ওয়ার্নার কোরাসও মাঝেমধ্যে ধরছেন গ্যালারির দর্শকরা। কিন্তু এক ম্যাচ পরই ওয়ার্নারের দেশে ফিরে যাওয়ার খবরে আবেগপ্রবণ এখানকার দর্শকরা।

গ্রিন গ্যালারিতে কয়েকজন তরুণ কাগজে লিখে এনেছেন, প্লিজ ডোন্ট গো ওয়ার্নার। কুনইয়ের চোটের চিকিৎসা করাবেন বলে রোববার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খেলেই সিক্সার্সের ডেরা ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে তিনি।

বিপিএলে জয়ের দিক থেকে দলকে খুব ভালো অবস্থায় রাখতে না পারলেও পারফরর্মার ওয়ার্নার ঠিকই রেখে যাচ্ছেন তার পেশাদার ছাপ। দলের জন্য অবদান রাখতে কতটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তার নজির দেখিয়েছেন অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে, ব্যাটিংয়ে (৬ ম্যাচে তিন ফিফটি)। সেসব চোখ এড়ায়নি অনিকের, ‘অনেক কিছু শেখার আছে তার কাছ থেকে। গত ম্যাচে দেখেছেন, যখন ৪ বলে ৪০ রান দরকার তখনও তার কী চেষ্টা, কী দুর্দান্ত ডাইভ দিচ্ছে। জাস্ট কমিটমেন্ট। সেটা সে দেখিয়েছে। মিস তো অবশ্যই করব।’

ওয়ার্নারবিপিএল-২০১৯বিপিএল-৬লিড স্পোর্টস