ওবায়দুল কাদেরের কঠোর সমালোচনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুধু শারীরিক মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নন চেতনার মৃত্যুর কাছাকাছি উপনীত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করা হয়।

এর আগে, গত ৩০ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডি ৩/এ তে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, “যুদ্ধাপরাধী ও জামাত পরিবারের সন্তানরাও আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারবে, আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভূমিকা প্রাধান্য পাবে, কোন পরিবারের সন্তান সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়-হউক সে জামাত কিংবা যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সন্তান।”

তার মতে, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এসে এই সকল বিষয় সামনে এনে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা হাস্যকর।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আকম জামাল উদ্দিন।

এতে বলা হয়, ‘‘আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কোনো নেতা এ ধরনের বক্তব্য দেননি। আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনের মেনিফেস্টোতেও এ ধরনের কোনো বক্তব্যের লেশমাত্র ছিল না। এ ধরনের হীণ বক্তব্যে ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রকাশ পেয়েছে এবং এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় তিনি আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া করার এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘কিছুদিন আগে তিনি শারীরিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে বিদেশে চিকিৎসাধীন ছিলেন, মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। এখন দেখছি তিনি শুধু শারীরিক মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নন, চেতনার মৃত্যুরও কাছাকাছি উপনীত হয়েছেন। তার এই ধরনের আদর্শচ্যুত বক্তব্যে সারাদেশের হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে। যে কোনো সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ প্রিয় নেতাকর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে পারেন।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ওবায়দুল কাদেরকে এখনই অবসর দেয়ার বিনীত অনুরোধ জানানো হয়। নাহলে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জননেত্রী শেখ হাসিনা তথা সরকারের আরো বড় ধরনের কোন ক্ষতি করে ফেলবেন যা সামাল দেয়া কোনক্রমেই সম্ভব হবে না বলে দাবি করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ওবায়দুল কাদেরের এই ধরনের বক্তব্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে তিনি দলের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে শেখ হাসিনা তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নেতাদের হত্যা বা নিশ্চিহ্ন করার পথ প্রশস্ত করছেন।’

তারা বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুল জলিল ও কয়েকজন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাও ওয়ান ইলেভেনের দুঃসময়ে আদর্শচ্যুত ও বিশ্বাসঘাতক হয়ে বিপদগামী হয়েছিলেন। তবে সেটা ছিল এক বিশেষ প্রেক্ষাপট এবং আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা তা পরবর্তীকালে মেনেও নিয়েছিলেন কিন্তু বর্তমানে সেই ধরনের কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপট নেই সুতরাং ওবায়দুল কাদেরের এ ধরনের বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোনক্রমেই মেনে নিতে পারে না।

লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক বলেন, ‘আমি সারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীদেরকে জনাব ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করার জন্য ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।’

জাতি আশা করে জনাব ওবায়দুল কাদের আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তার এই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন। যদি তিনি তা না করেন তা হলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ তার পদত্যগের দাবিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘‘তার এই অসংলগ্ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদে আগামী ৬ জুলাই ২০১৯ বিকেল ৫টায় শাহবাগে জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, মানববন্ধন শেষে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করার অপরাধে জনাব ওবায়দুল কাদেরের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হবে।

প্রয়োজনবোধে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গণআদালত গঠন করে যুদ্ধাপরাধের বিচার করেছিলেন, আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মারক পূণ্যভূমি পবিত্র শিখা চিরন্তন চত্বরে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ গণআদালত গঠন করে তার বিচার করবে।

এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য আগামীকাল ৫ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার বিকেল মাড়ে পাঁচটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্ত্বরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এক জরুরী সভা আহবান করা হচ্ছে।’’

তবে বৃহস্পতিবার সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের নবনির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের বলেছেন: যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না। এটা অনেক পুরোনো সিদ্ধান্ত, নতুন কিছু নয়।

ওবায়দুল কাদেরওয়ান ইলেভেনমুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ