এক ম্যাচ খেলিয়ে ছুঁড়ে ফেলার সংস্কৃতি বন্ধ হবে তো!

চট্টগ্রাম থেকে: টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ দলে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে তরুণদের। চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে টাইগার স্কোয়াডে নতুন মুখের ছড়াছড়ি। ঘরোয়া ক্রিকেটের টপ পারফর্মার তারা কেউই নন, তারপরও তাদের মাঝেই ভবিষ্যৎ খুঁজে নিচ্ছেন নির্বাচকরা। সরাসরি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিয়েই পরখ করা হচ্ছে তাদের। যারা শুরুর ম্যাচেই নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন তারা টিকে থাকছেন, অনেকে আবার যাচ্ছেন হারিয়ে।

টি-টুয়েন্টি সংস্করণের জন্য আলাদাভাবে চিন্তা করে খেলোয়াড় তুলে আনতে পারেনি বিসিবি। এক ম্যাচ খেলিয়ে ছুঁড়ে ফেলা ক্রিকেটারদের তালিকা বেশ লম্বা- মোহাম্মদ রফিক, নাজমুস সাদাত, শাহরিয়ার নাফীস, ধীমান ঘোষ, সোহরাওয়ার্দী শুভ, সাজেদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, রনি তালুকদার, জুবায়ের হোসেন লিখন, মোহাম্মদ শহিদ, মুক্তার আলী, সাকলাইন সজীব, জাকির হাসান, মেহেদী হাসান।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

বাংলাদেশ প্রথম টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলে ২০০৬ সালে, খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে টাইগারদের নেতৃত্ব দেয়া শাহরিয়ার নাফীস পরে আর টি-টুয়েন্টি খেলারই সুযোগ পাননি। টি-টুয়েন্টি স্পেশালিষ্ট তৈরি হয়নি গত ১৩ বছরেও। র‌্যাঙ্কিংয়ে দশ নম্বর জায়গাটা ‘স্থায়ী’ হয়ে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ হতে পারে এটি।

বাংলাদেশ দলে টি-টুয়েন্টি স্পেশালিষ্ট নেই, খেলোয়াড়-নির্বাচক থেকে শুরু করে এ কথা মানেন সবাই। বলের ওপর জোর খাটিয়ে বড় শট খেলার দুর্বলতাই গড়ে দিচ্ছে প্রতিপক্ষের সঙ্গে মূল পার্থক্য। ‘পাওয়ার হিটিং’ দিয়ে আফগানিস্তান টি-টুয়েন্টিতে বাংলাদেশকে হারাচ্ছে বারবার। কারণটা সবাই অনুধাবন করলেও ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার মতো হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান নেই বললেই চলে।

টি-টুয়েন্টির দাবি মেটানোর আশা যাদের ঘিরে সঞ্চার হয়েছিল জাতীয় দল থেকে তাদের অনেকেই দূরে। জিয়াউর রহমান, অলক কাপালি, নাঈম ইসলাম, ধীমান ঘোষ, নাদিফ চৌধুরি, ফরহাদ রেজা, আরিফুল হকের মাঝে দেখা গিয়েছিল টি-টুয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হয়ে ওঠার ছায়া। কিন্তু ফরম্যাটের তালগোলে জাতীয় দল থেকে তারা অনেক দূরে। তাদের মধ্যে কেবল ফরহাদ ও আরিফুলের আশা খানিকটা টিকে আছে। তারা দুজনই ছিলেন সবশেষ সিরিজের প্রাথমিক দলে।

টি-টুয়েন্টি এত জনপ্রিয়তা পাবে, ক্রমেই ম্যাচ খেলার সংখ্যা বাড়বে, তা হয়ত বিসিবি বুঝে উঠতে পারেনি শুরু থেকেই। হতে পারে সে কারণেই সমন্বিত পরিকল্পনায় যেতে পারেনি ম্যানেজমেন্ট। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট প্রচলনের পর থেকে প্রধান নির্বাচকের পদে বসেছেন রফিকুল আলম, আতহার আলি খান, আকরাম খান, ফারুক আহমেদ, মিনহাজুল আবেদীন। প্রত্যেকের সময়েই দেখা গেছে কোনো না কোনো খেলোয়াড়কে একটি টি-টুয়েন্টি খেলিয়েই বাতিলের খাতায় ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ দল প্রথম টি-টুয়েন্টি খেলার পর পেরিয়ে গেছে এক যুগেরও বেশি। এই সংস্করণে টাইগারদের প্রথম অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস পরে আর সুযোগই পাননি। টি-টুয়েন্টিতে দেশের ৬৫তম খেলোয়াড় হিসেবে বুধবার চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছে আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের। তার আগে ১৪জন ক্রিকেটার এক ম্যাচ খেলেই ঝরে গেছেন এই ফরম্যাট থেকে।

ফরম্যাট বিবেচনায় দলে ধরে রাখা হয়েছে বা নিয়মিত সুযোগ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এমন কাউকেও দেখা যায়নি। প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে ২০১৬ সালের জুনে সরে যাওয়া ফারুক আহমদে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন খেলোয়াড় নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েই।

‘আমরা যদি গত এক-দেড় বছর দেখি, তাহলে কত ক্রিকেটার খেলেছে সেটা আমরা বলতে পারব না। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। ফরম্যাটের ভিত্তিতে ক্রিকেটার উঠিয়ে আনতে হবে। আফগানিস্তান দুই-তিন বছরে যা উন্নতি করেছে তা অসাধারণ। তাদের ১৩জন টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটার এসেছে। টেস্ট আর টি-টুয়েন্টি দলে মাত্র তিনজন একই প্লেয়ার- রশিদ, নবি আর আসগর। ওরাও কিন্তু এই ধারাটা ধরেছে যেকোনো ফরম্যাটে।’

‘আমি নিশ্চিত যে ছেলের প্রতিভা আছে সে কয়েক ফরম্যাটে খেলতে পারে। যেমন কালকে একজন লেগস্পিনারকে দেখেছি। তার কিন্তু সেভাবে কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। সে প্রতিভাবান, কিন্তু তার প্রতিভাকে আমাদের খুব ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে। তাকে ঘরোয়াতে সব ম্যাচ খেলাতে হবে, দুর্বল প্রতিপক্ষের সাথে চার দিনের ম্যাচ খেলাতে হবে। এখন তাকে যদি পরের ম্যাচে আমরা দেখি খুব ভালো করল না, এরপর তাকে ফেলে দেই, সে কিন্তু ভালো কিছু করতে পারবে না।’

‘এখন আমার মনে হয় আরেকটা জিনিস মিসিং। তা হচ্ছে, কোন খেলোয়াড়কে কোন ফরম্যাট দিয়ে শুরু করব সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না। যেমন নাজমুল হোসেন শান্ত। ছেলেটা প্রতিভাবান। কিন্তু কোন ফরম্যাট দিয়ে শুরু করে ওকে মানিয়ে নিয়ে আরেক ফরম্যাটে আনা হবে সেটাই আমরা করতে পারছি না। আমরা দেখেছি শান্ত খুব কঠিন একটা জায়গায় খেলার সুযোগ পেল, ভালো করল না। সেটা নিউজিল্যান্ডে, টেস্টে। সে বাদ হয়ে গেছে ৫০ ওভারের ম্যাচ থেকেও। এখন আবার দেখি টি-টুয়েন্টি দলে। এটা কিন্তু তরুণ একটা খেলোয়াড় থেকে অনেক বেশি চাওয়া হয়ে যায়।’

ফারুক আহমেদের সময়ও দেখা গেছে কাকে কোন ফরম্যাটে খেলানো হবে সেটি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার অভাব। তার সময়ে সবচেয়ে বড় উদাহরণ রনি তালুকদার। ঘরোয়া লংগার ভার্সন ক্রিকেটে রানের ফল্গুধারা ছুটিয়ে আসেন ওয়ানডে দলে। অনেক অপেক্ষার পর তাকে নামিয়ে দেয়া হয় টি-টুয়েন্টিতে। পরে এক ম্যাচ খেলেই শেষ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।

গত বছর ডিসেম্বরে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন সংবাদমাধ্যমে বলেন আফিফ হোসেন ও জাকির হাসান প্রত্যাশিত উন্নতি করতে পারেনি। গত বছর একটি টি-টুয়েন্টি খেলিয়েই তাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া হয়েছিল। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বিপিএলের সবশেষ আসরে দারুণ খেলা আফিফ ফিরেছেন ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে। প্রত্যাবর্তন আলোকিত করেছেন দুর্দান্ত এক ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় পায় তার ব্যাটেই। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এক বছরেই আফিফ বদলে গেলেন নাকি এক ম্যাচ দেখেই ছুঁড়ে ফেলার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল!

লিড স্পোর্টস