একাত্তরে মাগুরার পিটিআই গণহত্যা স্পট

ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময় যে বাংলাদেশের জন্ম সেই রক্তের অন্যতম অংশীদার মাগুরাবাসীও। মহান মুক্তিযুদ্ধে মাগুরার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বীরমুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, শিক্ষিত সচেতন তরুণ, গ্রামীণ তরুণ এবং সাধারণ নিরীহ মানুষকে জীবন দিতে হয়। অনেকেই দেশের জন্যে শত্রুর মুখোমুখি হয়ে সম্মুখ সমরে শহীদ হয়েছেন। অনেককে নিজবাড়ি, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট থেকে ধরে নিয়ে বর্বোরোচিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অনেকেই আবার নির্মম গণহত্যার শিকার হয়েছেন। এইসব হত্যাকাণ্ডে মূল ভূমিকা রাখে কুখ্যাত রাজাকার-আলবদর বাহিনী এবং পাকমিলিটারি।

মাগুরাবাসীর জীবন থেকে মুক্তিযুদ্ধকালের সেই দুঃসহ স্মৃতি আজো মুছে যায়নি। যে পরিবারগুলো মুক্তিযুদ্ধে সন্তান-স্বজন হারিয়েছে তাঁরা এখনও প্রিয়জনের কথা মনে উঠতেই ঢুকরে কেঁদে উঠেন। এখনও অনেক মা-বাবা তাঁর প্রিয় সন্তানকে খুঁজে ফেরেন। যুদ্ধক্ষেত্রে যে পরিবারগুলো বীরসন্তান বা স¦জনকে হারিয়েছে তাদের সান্তনা থাকলেও যে সব পরিবারের বুকের মাঝ থেকে পিতা, সন্তান বা স্বজনকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সেই পরিবারগুলো এখনও গভীর শোকেই ডুবে আছে। একাত্তরে ঘটে যাওয়া সেই মর্মন্তুদ ঘটনা তাঁরা এখনও ভুলতে পারেনি। এখনও সেই স্মৃতি তাদের জীবনের ভয়ানক এক কষ্টের উৎস। আর তাই পিতাকে মনে করে সন্তান, সন্তানকে মনে করে পিতা-মাতা, ভাইকে স্মরণ করে বোন এখনও চোখের জল ফেলেন। মাগুরাতে মুন্সী মজিবর রহমান, লুৎফুন্নাহার হেলেন, লুৎফর রহমান লুতু, জিয়াউল কবীর, মীর হাদেক, লালু, কাদের খান, মিন্টুসহ অসংখ্যজনকে ধরে নিয়ে ঠান্ডামাথায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মাগুরা, মহম্মদপুর, শালিখার অনেক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও এভাবে অনেককে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস অমানবিক হত্যাকান্ডগুলোর বেশিরভাগই সংঘটিত কওে পাকবাহিনী এবং কুখ্যাত রাজাকার আলবদর চক্র। যে হত্যাকান্ডের ভয়াবহ স্মৃতিগুলো মানুষের হ্নদয় থেকে আজও মুছে যায়নি।

একাত্তরে মাগুরা ছিল ছোট্ট এক মাহকুমা। মাত্র চারটি থানা নিয়ে মাগুরা মহকুমা গঠিত ছিল। মাগুরা সদর, শ্রীপুর, শালিখা এবং মহম্মদুপর এই চারটি থানা ছিল মাগুরা মহকুমার অন্তর্ভুক্ত। আর পৌরসভা বলতে ছিল শুধু মাগুরা পৌরসভা। ছোট্ট এক শহর ছিল মাগুরা। শহরের মানুষগুলোও ছিল একে অপরের পরিচিত এবং আপনজন।
মুুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপর দেশের অন্যান্য জায়গার মতো মাগুরাতেও পাকহানাদার বাহিনীর আগমন ঘটে। একই সাথে তাদের সহযোগী হিসেবে কূখ্যাত রিজু ও কবীরের নেতৃত্বে উত্থান ঘটে বর্বর নৃশংস রাজাকার-আলবদরবাহিনীর। এপ্রিল মাসে পাকবাহিনী প্রথম মাগুরা শহরে প্রবেশ করে অনেকটা বিনা প্রতিরোধেই। কারণ এর আগেই মাগুরা শহর খানিকটা অরক্ষিত হয়ে যায় শহরের আওয়ামী লীগ নেতারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত চলে যাওয়ার কারণে।

যশোর অনেক আগেই পাক হানাদারা দখল করলেও ২৩ এপ্রিল মাগুরা এলাকায় রাজাকারদের সহায়তায় অনুপ্রবেশ করে পাকবাহিনী। যশোর থেকে ঝিনেদা এলাকার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল পেরিয়ে মাগুরা শহরে আসে পাকসেনাদের সাঁজোয়া বহর। এরপর পিটিআই, ডাকবাংলা, সহ বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প গড়ে তোলে পাকবাহিনী। পাকবাহিনী যেদিন যশোর হয়ে মাগুরাতে প্রবেশ করে সেদিন থেকেই তারা সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা শুরু করে। দিন যতই যেতে থাকে ততই এই হত্যাকান্ডের মাত্রা ও চিত্র আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই হত্যাকান্ডে যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্তও অব্যাহত থাকে। প্রতিদিনই হত্যাকান্ড আর নির্যাতনের ভীতি ছড়িয়ে তারা মুক্তিকামী মানুষের মনোবল ভেঙে দিতে স্বচেষ্ট ছিল। আর তাই হত্যা আর নির্যাতনে মেতে উঠেছিল তারা।

পিটিআইসহ বিভিন স্থায়ী কাম্পে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষকে ধরে এনে টর্চার সেলে রেখে দিনের পর দিন তারা নির্যাতন নিপীড়ন করতো। অনেককেই নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদীতে ফেলে দিত। পারনান্দুয়ালীর ডাইভারশন ক্যানেল এলাকাও ছিল মানুষ হত্যা করে ফেলে রাখার এক অন্যতম স্থান। এপ্রিল এবং মে মাসে পাকসেনারা মাগুরার পিটিআই, মাইক্রোয়েভ স্টেশন, দত্তবিল্ডিং, গোল্ডেন ফার্মেসি, ডাকবাংলা, আনসার ক্যাম্পসহ কয়েকটি স্থানে নির্যাতন ক্যাম্প (টর্চার সেল) গড়ে তোলে। একই সাথে আলমখালী, ইছাখাদা, হাজীপুর, বিনোদপুর, শালিখা ডাকবাংলাসহ শহরের আশপাশ এবং আরো বিভিন্ন ইউনিয়নেও গড়ে তোলা হয় রাজাকার ক্যাস্প। স্থানীয় আকবরবাহিনীর দৃঢ়তায় একমাত্র শ্রীপুর থানাতেই কেবল পাকবাহিনী এবং তাদের দোষররা কোনো ধরনের স্থায়ী ক্যাম্প গড়তে ব্যর্থ হয়।

পিটিআই পাকহানাদার ক্যাম্প ছিল পাকবাহিনীর মূল যোগসূত্র। বিভিন্ন জায়গা থেকে জোরপূর্বক সাধারণ মানুষকে ধরে এই ক্যাম্পে এনে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো। মাগুরা এলাকায় যেদিন পাকবাহিনী প্রথম প্রবেশ করে সেদিন থেকেই তারা নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পথ বেছে নিয়েছিল। এই ক্যাম্পে কতজনকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রকৃত হিসাব কারো কাছে নেই। তবে অনেকেই মনে করেন বিভিন্ন দূরবর্তী স্থান থেকে সাধারণ মানুষকে এখানে যেমন নির্যাতন করা হতো, তেমনি হত্যাও করা হতো। কেননা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পিটিআই অভ্যন্তরে অনেক গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়।

একাত্তরে মাগুরা শহর কুখ্যাত খুনী রাজাকারদের স্বর্গে পরিণত হয়েছিল। পাকমিলিটারিরা দ্রুতই শহর দখলে নেওয়ায় রাজাকাররা দিনের পর দিন পুরো শহর অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। আর তাই অপহরণ হত্যা, লুটতরাজ, অপহরণ ছিল নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। রাজাকাররা চারিদিকে এমন আতংক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছিল যে সাধারণ মানুষেরা কথা বলার সাহসই পেত না।

একাত্তরে মাগুরা শহরে সবচেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতির তৈরি করে কুখ্যাত খুনী রাজাকার রিজু এবং কবীর-এর নেতৃত্বাধীন আলবদর-আলশামস গ্রুপ। এই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের মাঝে ভয়-ভীতি তৈরি করতে একের পর এক নুশংস হত্যাকা- সংঘটিত করে। সেইসব হত্যাকা-গুলো এখনও মাগুরাবাসীর হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে আছে। এই কুখ্যাত জুটি নিজেরা যেমন সরাসরি অনেক মুক্তিযোদ্ধা, প্রগিতশীল নেতা কর্মীকে হত্যা করে তেমনি অনেক সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে তারা পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। কুখ্যাত রাজাকার রিজু-কবীর চক্র এবং অন্যান্য রাজাকারদের নেতৃত্বে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী, মেধাবী স্কুল শিক্ষিকা লুৎফুন্নাহার হেলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হাজীপুরের মুন্সী মুজিবর রহমান, মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক, পারনান্দুয়ালীর লূৎফর রহমান লুতু, মোল্লাপাড়ার মেধাবী ছাত্র জিয়াউল কবীর, শহরের আমিনুল ইসলাম মিন্টু, মীর পাড়ার মীর হাদেক, মীর ইদ্রিস, খাঁ পাড়ার কাদের খানসহ আরও অনেককে। সবগুলো হত্যাকা-ের নেতৃত্বেই ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘের রিজু-কবীর চক্র এবং তাদের সহযোগীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, একাত্তরে পাকবাহিনী কর্তৃক অরক্ষিত মাগুরা শহরে ভয়ানক এক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল কুখ্যাত রিজু এবং কবীর জুটি তাদের সহযোগীরা। তাদের নির্দেশেই সব হত্যাকান্ড সম্পন্ন হতো। হত্যাকান্ডে আরো যারা সরাসরি অংশগ্রহণ করতো এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মশিউল আলম হাসনু (কসাই হাসনু বলে পরিচিত), খন্দকার আবু ফতেহসহ আরো অনেকে।

মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের টুপিপাড়া গ্রামের ধ্রুব কুন্ডকে ধরে এনে হত্যা করা হয়েছিল পিটিআইতে। শহীদ ধ্রুব কুন্ডুর বাবার নাম স্বর্গীয় কুঞ্জলাল কুন্ডু। যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম দিকেই পাকবাহিনী তাঁকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে। আকবরবাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেনের কাছ থেকে জানা যায়, ধ্রুব কুন্ডু পেশায় ছিলেন সুপরিচিত এক দলিল লেখক। শ্রীপুর রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখার কাজ করতেন। দলিল লেখালেখির কাজ করে তিনি জীবনযাপন করতেন। প্রতিদিন খামারপাড়া থেকে নদী পার হয়ে শ্রীপুরে আসতেন। কর্মমূখর মানুষটি কাজ ছাড়া কিছুই বুঝতেন না। মে মাসের কোনো একদিনে নিজের পেশাগত কাজ সেরে তিনি বাড়িতে ফিরছিলেন। ঐসময় ধ্রুব কুন্ডুকে পাকবাহিনী ধরে ফেলে। নিজেকে বাঁচাতে শত কাকুতি মিনতি করলেও পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর হ্নদয় জয় করতে ব্যর্থ হন। পাকসেনারা ধ্রুবকুন্ডুকে মাগুরার পিটিআই-এ অবস্থিত ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওখানেই তাঁকে নিপীড়ন নির্যাতন করার পর হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঐদিনই শ্রীপুর স্কুলে জনৈক পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে সভা হয় যেখানে মুসলিম লীগ নেতা মসিউল আজমসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। শহীদ হওয়ার আগে ধ্রুবকুন্ডু দুই ছেলে বাদল চন্দ্র্র কুন্ডু, দিলীপ কুমার ওরফে মন্টু কুন্ডু এবং স্ত্রী রাধারাণী কুন্ডুকে রেখে যান। শহীদ ধ্রুবকুন্ডের স্ত্রী রাধারাণী কুন্ডু মারা গেছেন বেশ আগেই। ধ্রুব কুন্ডের দুই ছেলে বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। মুক্তিযুদ্ধে পিতাকে হারানোর শোক এখনও তাঁরা ভুলতে পারেননি।

একইভাবে পিটিআইতে নিয়ে হত্যা করা হয় বলরাম কুন্ডুকেও। বলরাম কুন্ডের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানাতে। শ্রীপুর গ্রামেই ছিল তাঁর বাড়ি। বলরাম কুন্ডের বাবার নাম স্বর্গীয় বদ্যিনাথ কুন্ডু। অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে পাকসেনারা বলরাম কুন্ডুকে ধরে নিয়ে পিটিআই ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওখানেই তাঁকে হত্যা করা হয়। পাকসেনাদের হাতে ধরা পরার আগে তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে যান। শহীদ বলরাম কুন্ডের ছেলে বর্তমানে ভারতে থাকেন। একমাত্র মেয়ে বসবাস করেন নড়াইলের চন্ডীতলাতে।

মাগুরার পিটিআইতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় শ্রীপুর উপজেলার আমতৈল গ্রামের বিনয়েন্দু ঘোষকে। বিনয়েন্দু ঘোষের পিতার নাম স্বর্গীয় বৈদ্যনাথ ঘোষ। মাতার নাম স্বর্গীয়া রাধারাণী ঘোষ। বিনয়েন্দু ঘোষ পেশায় ছিলেন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে আঠারোখাদার লোহার ব্রীজের কাছ থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় রাজাকাররা। তাঁকে সোপর্দ করা হয় পাকসেনাদের হাতে। পরবর্তীতে পাকসেনারা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। চার ভাইবোনের মাঝে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর অন্য দুই ভাই-এর নাম নির্মলেন্দু ঘোষ, নিখিলেন্দু ঘোষ এবং একমাত্র বোনের নাম বিরু ঘোষ। শহীদ হওয়ার আগে তিনি স্ত্রী বানু ঘোষ এবং চার ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে যান। তাঁর চার ছেলের নাম -বিকাশ ঘোষ, প্রকাশ ঘোষ, প্রশীষ ঘোষ এবং প্রীতিশ ঘোষ। একমাত্র মেয়ের নাম বানু ঘোষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসের কোনো একদিন তিনি পায়ে হেঁটে মাগুরাতে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে লোহার ব্রীজের কাছে শ্রীপুরের বাখরা গ্রামের রাজাকার বিলায়েত সর্দার এবং তার কিছু সহযোগী বিনয়েন্দু ষোষকে ধরে ফেলে। কথিত আছে এই রাজাকাররাই তাকে পিটিআইতে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। শহীদ বিনয়েন্দু ঘোষের ছেলে প্রীতিশ ঘোষ জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পিতার স্নেহ থেকে তারা চিরবঞ্চিত হয়েছেন। পিতাকে হারানোর পর তাঁরা অনেক কষ্টেসৃষ্টে বড় হন। পিতাকে হারানোর দুঃখ তারা ভুলতে পারেননি। প্রীতিশ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পিতা শহীদ হলেও তার সামান্যতম মূল্যায়ন আজ পর্যন্ত হয়নি।

একাত্তরে রমজান মাসে খামারপাড়া বাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে মতিয়ারকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়। তারপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় মাগুরার পিটিআই পাকসেনা ক্যাম্পে নিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মতিয়ারের বাবার নাম মরহুম মওলানা আজগর হোসেন। বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামে। অনুসন্ধানে জানা যায়, মতিয়ারকে যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তখন পাশেই ছিলেন তারই আপন ভাতিজা মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক মিয়া। শামসুল হক শহীদ মতিয়ারের বড় চাচা আব্দুল মজিদ মিয়ার ছেলে। তাঁর ভাষ্য মতে, মতিয়ার একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন। হাট শ্রীকোল জুনিয়র হাইস্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। এরপর বাড়িতে চাষবাসের কাজ করতো। ঘটনার দিন খামারপাড়া বাজারের এক জায়গায় তিনি এবং চাচা মতিয়ার একসাথেই ছিলেন। হঠাৎ করেই খামারপাড়া বাজারে মিলিটারি আসে। মিলিটারিদরে সাথে কিছু চামচা রাজাকারও আসে। মুনির নামে এক রাজাকারের ইঙ্গিতে পাকসেনারা তরুণ মতিয়ারকে জিজ্ঞেস করে ‘তোমহারা নাম কিয়া?’ নাম বলার পরপরই তারা মতিয়ারকে গ্রেপ্তার করে। আমি শামসুল হক বলেন, ঐদিন আরও কয়েকজনকে বাজার থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকসেনারা। পরবর্তীতে কাউকে কাউকে ছেড়েও দেয়। কিন্তু মতিয়ার এবং জোকা গ্রামের আরেক তরুণ ইসরাইলকে তারা আর ছেড়ে দেয়নি। ওদরেকে নৃশংসভাবে পাকসেনারা হত্যা করে। তবে অনেকেরই ধারণা ছিল মতিয়ারসহ অন্যদের হয়তা ছেড়ে দেবে। কারণ অনেক সময় অস্ত্র এবং গোলাবারুদ টানানোর জন্যে পাক মিলিটারিরা ছেলেপেলেদের নিয়ে যেত। কিন্তু মতিয়ার, ইসরাইল আর কোনোদিন ফিরে আসেনি।

শহীদ মতিয়ারের বাবা মওলানা আজগর হোসেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় মা বেঁচে ছিলেন। বাড়িতে বসে তিনি ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সংবাদ পান। দেশ স্বাধীন হলে অনেকের মতো মতিয়ারের মাও ছেলের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন। কিন্তু ছেলে আর ফিরে না আসায় মতিয়ারের মা শোকে পাগল হয়ে যান। রাতদিন ছেলের জন্যে কাঁদতেন তিনি। এভাবেই একদিন মতিয়ারের মা পৃথিবী থেকে চিরজনমের জন্যে চলে যান। বারো ভাইবোনের সংসারে মতিয়ার ছিলেন সবার ছোট। তার বাবা দুটি বিয়ে করেছিলেন। ছোট মায়ের সংসারে তিনি ছিলেন একমাত্র ছেলে। তাঁর আরও তিন বোন রয়েছে।

যুদ্ধের মধ্যে কোনো একদিন খামারপাড়া হাট থেকে যাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শহীদ ইসরাইলকে। পুরো নাম ইসরাইল হোসেন মোল্লা। বাবার নাম আহম্মদ মোল্লা। মায়ের নাম শুকুরুন নেছা। শহীদ ইসরাইলের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার আমলসার ইউনিয়নের জোকা গ্রামে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শহীদ ইসরাইলকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকসেনারা। ধারণা করা হয় খামারপাড়া বাজার থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে তাকে পিটিআইতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন এবং পরবর্তীতে হত্যা করা হয়। এ কারণেই ইসরাইলের লাশ তার পরিবারপরিজন আর কোনোদিন খুঁজে পায়নি। স্বভাবতই ইসরাইলের শোকার্ত পিতা মাতা সারাজীবন প্রিয় সন্তানের জন্য চোখের জলে বুক ভাসিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিবারে ইসরাইল ছিলেন সবার বড়। একাত্তরে তিনি ছিলেন তরতাজা এক যুবক।

আকবরবাহিনীর প্রধান আকবর হোসেনের মতে, ১৭ নভেম্বর শুক্রবার ২৭ শে রমজানের দিন যুবক ইসরাইল নিজগ্রাম জোকা থেকে খামারপাড়া হাটে আসেন। কিন্তু অকস্মাৎ তিনি পাকহানাদারদের সামনে পড়েন। পাকহানাদাররা প্রথমেই তাকে কিছু প্রশ্ন করে। হানাদারদের মনে হয় যুবকটি মুক্তিযোদ্ধাদেরই সহযোগী। সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনারা ইসরাইলকে বেঁধে ফেলে এবং তাদের সাথে যাওয়ার নির্দেশ দেন। প্রথমে তাঁদেরকে দারিয়াপুরের পীরসাহেবের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জনসূত্রে প্রকাশ। তারপর ওখান থেকে মাগুরা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে যুবক ইসরাইলের আর কোনো সন্ধান মেলেনি। তার লাশও কোথাও পাওয়া যায়নি। পরিবার পরিজনের সদস্যদের অপেক্ষার বহু প্রহর পেরিয়ে গেলেও কোনোদিন সে আর ফিরেও আসেনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছেলেকে হারানোর শোকে পাগলের মতো হয়ে যান তাঁর পিতা আহাম্মদ মোল্লা। ছেলেকে ফিরে পাবার আশায় তিনি মাগুরা, ঝিনেদা, যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় তন্ন তন্ন করে ছেলেকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু ছেলেকে আর কোনোদিন ফিরে পাননি। ছেলেকে হারানো বেদনা নিয়েই ২০০৪ সালে তিনি মারা যান। শহীদ ইসরাইলের মা শুকুরুনেছা মারা যান ২০১০ সালে।
শহীদ ইসরাইলের ছোট ভাই মো. বদিয়ার রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় বড় ভাইকে হারানোর ঘটনা তিনি তাঁর পিতার মুখে শুনেছেন। এই ঘটনা মনে করে পিতাকে তিনি অজ্রুবার শোকে কাঁদতে দেখেছেন, বেদনায় মুষড়ে পড়তে দেখেছেন। মাকেও কাঁদতে দেখেছেন বহুবার। ছেলের কথা চিন্তা করে তাঁর মা বহুদিন ভাত খেতে পারেননি। কষ্ট আর বেদনার পাথর বুকে নিয়েই তাঁর পিতা এবং মাতা প্রয়াত হয়েছেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শহীদ ইসরাইলের পরিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রেরিত কিছু আর্থিক সহায়তা এবং একটি শোকবার্তা পান। এরপর শহীদ ইসরাইলের পরিবার আর কোনো স্বীকৃতি পাননি। স্থানীয়ভাবে এই তরুণকে মনে রাখতে কোনো্ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী পিটিআই ইন্সপেক্টর আমানউদ্দিন এর বক্তব্য: ১৯৬৬ সালে ইনস্পেক্টর হিসেবে মাগুরা পিটিআইতে যোগদান করেন আমান উদ্দিন। ‘আমান’ মাস্টার হিসেবেই তিনি পরিচিত। এখনও জীবিত আছেন। মাগুরা হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা। গ্রামের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুরে। একাত্তরে তাঁর চোখের সামনেই পাকসেনা কর্তৃক পিটিআই দখল হওয়ার ঘটনা ঘটে। একদিন সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন পাকসেনারা এসে পিটিআই দখলে নিয়েছে। তখন পিটিআই-এর সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন আলিমুর রহমান। সে সময় ইনস্পেক্টর হিসেবে পারনান্দুয়ালি গ্রামের আবুল খায়ের, মুন্সী গোলাম আজম, আজিজুল ইসলামসহ আরও অনেকে কর্মরত ছিলেন। সেই সময়ের ঘটনা মনে করে তিনি বলেন, ‘পাকহানাদাররা এপ্রিলের শেষ দিকে ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মাগুরাতে এসে এবং পিটিআইতে অবস্থান করে। আনুমমাণিক ৫০ থেকে ৭০ জন মতো সৈন্য পিটিআই এর মূলভবনে অবস্থান করে। পাক সৈনারা পিটিআই-এর যে মূল দ্বোতলা ভবন সেটা দখলে নেয়। একই সাথে হোস্টেল এবং পিটিআই স্কুলও দখল করে। আমাদেরকে বলে দেওয়া এখানে কোনো কার্যক্রম চলবে না। ওখান থেকে যেনো আমরা সরে পড়ি। আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে প্রথমে মাগুরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের একটি কক্ষে অনিয়মিত অফিস করি। এরপর আমরা মাগুরা সরকারি স্কুলে চলে যায়। ওখানে অনিয়মিতভাবে কাজকর্ম করতে থাকি। আমি মাঝে মধ্যে পিটিআইতে যেতাম। সৈন্যরা আমাদের তেমন কিছু বলতো না। তবে এখানে গিয়ে বুঝতে পারতাম এটি একটা টর্চার সেল বা নির্যাতন কেন্দ্র। বিভিন্ন জায়গা থেকে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে এখানে নির্যাতন নিপীড়ন করা হতো। অনেককে হত্যাও করা হতো। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমরা দেখেছি দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে বেশ কয়েকটি গর্ত ছিল। সাধারণ মানুষকে হত্যা করে ঐসব গর্তে রাখা হয়েছিল। মাগুরা মুক্ত হওয়ার পর প্রথমেই ভারতীয় সৈন্যরা পিটিআই দখল করে। কিছুদিন পর তারা চলে যান। আমরা আবার স্বাধীন দেশে কাজ শুরু করি।’

পিটিআইতে পাকসেনা কর্তৃক নির্যাতিত হওয়া তৎকালীন গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান আনোয়ার হোসেন খান মন্টু মারা গেছেন কয়েক বছর হলো। টানা ২৯ দিন তাঁকে পিটিআই ক্যাম্পে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তাঁর ছোট ভাই সাবেক ব্যাংকার মনোয়ার হোসেন খান রেন্টু সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এপ্রিলে তৃতীয় সপ্তাহে প্রথমে পাকবাহিনী মাগুরা শহরে প্রবেশ করে এবং আমাদের বাড়ির নিকটবর্তী স্থান পিটিআইতে অবস্থান করে। পিটিআই এর দ্বোতালা বিল্ডিং, হোস্টেল এবং পিটিআই স্কুলের কক্ষগুলোর তারা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। কিছুদিনের মধ্যেই এখানে টর্চার সেলও গঠন করা হয়। জুনের দিকে তাঁর আমার আপন ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন খান মন্টুকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকসেনারা। দুপুরে গোসল করছিল বড় ভাই। হঠাৎ পাকসেনারা আসে। টানা ২৯ দিন তারা ভাইকে আটকিয়ে রাখে। এরপর তারা তাঁকে ছেড়ে দেয়। সেসময় আমার মা হাসিনা খানমও বেঁচে ছিলেন। আমার মায়ের সামনে থেকেই তাঁর ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ২৯ দিন ভাই আনোয়ার হোসেন খান মন্টুর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিল। ঐ একই দিনে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভায়নার স্ট্যাটার কাজী সিরাজুল ইসলামকেও। পিটিআইতে নিয়ে নির্যাতন করা হয় শহরের কাউন্সিল পাড়ার চাকুরিজীবী খোন্দকার আশফাকুল ইসলামকে। একদিন ধরে রাখার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আশফাকুল ইসলাম মারা গেছেন অনেক আগেই । বেঁচে আছেন তাঁর স্ত্রী রোকেয়া সুলতানা।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসা ছিল কাউন্সিল পাড়াতে। তখন আমার এক ছেলে কোলে নাম ইমন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যভাগে রাত আটটার দিকে আর্মিরা গাড়িতে আসেন। আর্মিরা এসে জিজ্ঞেস করে ‘গুলু’ কোথায়। ‘গুলু’ উনার ডাক নাম। ওরা সব ঘরবাড়ি চেক করে। এর মধ্যে কেউ একজন এসে বলল রাঙা চাচাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা উনাকে নিয়ে যান। উনাকে রাতে পিটিআইতে রাখেন। পরের দিন বিকালবেলা উনাকে ছেড়ে দেন। উনাকে বাঁচানোর জন্য আমরা সকাল থেকে বিভিন্ন মানুষের কাছে যাই। পাকিস্তানিদের স্বপক্ষে থাকা মওলানা শামসুল হক কাছে গিয়ে বলি যেনো আমার স্বামীকে মুক্তি দেওয়া হয়। মওলানা ওবায়দুল্লাহকেও বলি। আমার স্বামীকে ফেরত দেওয়া হয়। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসে আমার স্বামী।’

৭ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত শুরু হয় মাগুরা শহর। এর আগে ৪ ডিসেম্বর আকবরবাহিনী তথা শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেনের কাছে মিত্র বাহিনী মাগুরাতে পাক বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে একটি মানচিত্র চেয়ে পাঠায়। আকবর বাহিনীর রেকি আব্দুল ওহাব জোয়ার্দার ওরফে বাঁশী মিয়াকে দিয়ে মানচিত্র তৈরি করে ক্যাপ্টেন আব্দুল ওয়াহ্হাবের কাছে পাঠানো হয়। ম্যাপ অনুযায়ী মিত্রবাহিনী আকাশপথে মাগুরার পিটিআই ও ওয়ারলেসের পাশে বোমা ফেলে। এই আক্রমণে ২৫০ জন পাকসেনা নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়। মিত্রবাহিনীর আক্রমণে পাকবাহিনী হতাশ হয়ে পড়ে এবং শহর ছেড়ে পালাতে থাকে।

৭ ডিসেম্বর ভোরে আকবর হোসেন বাহিনীর যোদ্ধাদের নিয়ে মাগুরা প্রবেশ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে শহরের লোকেরা পরিত্যক্ত বাড়িতে ফিরে আসে। আকবর হোসেন মিয়া তার বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন জায়গায় নিজ নিজ কমান্ডারের নেতৃত্বে অবস্থানের নির্দেশ দেন। আকবর হোসেন মিয়া সহযোগী নবুয়ত মোল্লাকে নিয়ে শহর ঘুরে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ করে দেন। মাগুরা স্লুইচ গেটের কাছে ও তার আশপাশে মজবুত ব্যুহ তৈরি করা হয়, যাতে পাকবাহিনী মাগুরা ঢুকতে না পারে। বিকাল পাঁচটা থেকে মিত্রবাহিনী পিটিআই এর নিকট অবস্থান গ্রহণ করে। ৮ ডিসেম্বর ভোরে আকবর হোসেন মিয়া আব্দুল লতিফকে সঙ্গে নিয়ে মেজর চক্রবর্তীর কাছে যান এবং সেখানে গিয়ে দেখেন মেজর চক্রবর্তী প্রস্তুত। তিনি ও আকবর হোসেনসহ উপস্থিত সবাই ট্যাঙ্কে উঠেন। ট্যাঙ্ক বাহিনী এগিয়ে পারনান্দুয়ালী পার হতেই এন্টি ট্যাঙ্ক মাইন বিস্ফোরণে তৃতীয় ট্যাঙ্কটি খালে উল্টে যায়। ট্যাঙ্কে অবস্থানরত ৭ জনের মধ্যে ৩ জনই ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। বাকি ৪ জন গুরুতর আহত হয়। মিত্রবাহিনী যাতে পার হতে না পারে সেই জন্য পাকসেনারা ডাইভারশন ক্যানেলের ব্রিজটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। মেজর চক্রবর্তীর নির্দেশে হ্যাঙ্গিং ব্রীজ নির্মিত হয়। এতে সহযোগিতা করেন মিত্রবাহিনীর প্রকৌশলী এবং স্থানীয় শ্রমিকরা। ক্যাপ্টেন ওয়াহ্হাব তার দলবল নিয়ে মাগুরা পৌছেন এবং ডাকবাংলায় সবাই মিলে আলোচনা করেন। আকবর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সাথে একত্রিত হয়ে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং মাগুরা শত্রুমুক্ত করে।

মাগুরা পিটিআইতে যে গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল তা সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে এখানে যে ৭-৮ ডিসেম্বর যুদ্ধ হয়েছিল সেই স্মৃতিটুক ধরে রাখা হয়েছে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

একাত্তরমাগুরা