‘ঈদে বাক্সবন্দী হয়ে কাজ করলেও শক্তিশালী গল্পের জোরে টিকে গিয়েছি’

সময়ের আলোচিত নাট্যনির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ। তার নির্মিত নাটক মানেই দর্শকদের বাড়তি আগ্রহ। অনলাইনে মাতামাতি! গেল ঈদে বেশকিছু নাটক নির্মাণ করে নতুন করে আলোচনায় আসা পরিচালকের সঙ্গে সম্প্রতি আলাপের বিশেষ অংশ তুলে ধরা হলো চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য…

করোনার মধ্যেও ঈদুল আজহায় একাধিক নির্মাণ দর্শক দেখেছেন। এই পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা বলুন…
করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। পুরো টিম নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে কাজ করছি বলে কোনো সমস্যায় পড়িনি। এজন্য এখন টেনশন ফ্রি। করোনার মধ্যেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে জয়ী হয়েছি বলে অন্যরকম প্রশান্তি পাচ্ছি। করোনার কারণে গল্পে অনেক বাধ্যবাধকতা রাখতে হয়েছে। স্বাধীনভাবে যেখানে সেখানে শুটিং করতে পারিনি, গল্পের প্লট বিস্তৃত করতে পারিনি। তারপরও কাজগুলো দর্শক পছন্দ করার পজিটিভ ফিডব্যাক দিচ্ছে এটাই পরম শান্তির।

তারমানে শুটিং বেশ প্রতিবন্ধকতার মধ্যে করেছেন?
‘ব্যঞ্জনবর্ণ’ বাদে সবগুলো কাজ করতে প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে। প্রত্যেকটা কাজ ও গল্প একটা নির্দিষ্ট বাক্সে বন্দী করতে হয়েছে। মিডিয়ায় কাজ করি বলে সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজের দায়িত্বটা অন্যদের চেয়ে আমাদের বেশি। কারণ, মানুষ আমাদের অনুসরণ করে। টিমের প্রত্যেক সদস্যের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি খেয়াল করতে হয়েছে। সার্বিকভাবে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতা ফেস করতে হয়েছে।

যে নাটকগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছেন?
তাহসান খান ও সাফা কবিরকে নিয়ে বানানো রোমান্টিক-কমেডি নাটক ‘এ বিটার লাভ স্টোরি’তে হিউজ সাড়া পেয়েছি। টিভি, ইউটিউব মিলিয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। টিআরপি-তেও চার নাম্বারে ছিল। মোশাররফ করিম ও সায়লা সাবিকে নিয়ে ‘ব্যঞ্জনবর্ণ’ টিভিতে প্রচারেই ফিডব্যাক আসতে শুরু করে। ইউটিউবে দেরিতে আসায় একটু সমস্যা হয়েছে। তবে শেষদিকে ইউটিউবে এলেও এ কাজটি দেখে দর্শক নতুন করে নড়েচড়ে ওঠে। সত্যি সাকসেসফুল, আমি তৃপ্ত। ইভেন এখনও প্রতিদিন শতশত টেক্সট পাই। ৭ বছর পর অ্যালেন শুভ্রকে নিয়ে ‘আমার অপরাধ কী’ বানিয়েছি, সাথে মারজুক রাসেল ছিলেন। এ কাজটাও মানুষ দারুণ পছন্দ করেছে। তাহসান খান ভাই, মনিরা মিঠু আপার ‘মা আই মিস ইউ’ কাজটাও দর্শক অন্যরকমভাবে গ্রহণ করেছে। এছাড়া জোভান-সাবিলার ‘ডেট রুম’ থেকেও ভালো সাড়া পেয়েছি। ঈদে বাক্সবন্দী হয়ে কাজ করলেও শক্তিশালী গল্পের জোরে টিকে গিয়েছি। দর্শকদের থেকে পাওয়া ফিডব্যাক আমাকে সন্তুষ্ট করেছে।

টিভিতে ভালো নাটক প্রচার হলে তেমন আলোচনা হয় না! কিন্তু ইউটিউবে এলেই হৈ-চৈ পড়ে যায়। তারমানে নাটক কী এখন সত্যি অনলাইন কেন্দ্রিক?
এইবার যে দর্শক টিভিতে আবারো ফিরে এসে অনলাইনের চেয়েও বেশি নাটক দেখেছে সেটা প্রমাণিত। ব্যঞ্জনবর্ণের মতো নাটক টেলিভিশন রেটিং পয়েন্টে ১ নম্বর এ। এটি দারুণ আশার কথা। শক্তিশালী গল্প নির্ভর গল্পের জয় দেখে আশা করি আমার পাশাপাশি এই ইন্ডাস্ট্রির শুভাকাঙ্খীদেরও সকলের ভালো লাগছে। আর যতই আমরা অনলাইন অনলাইন বলি না কেন, টিভির গ্রহণযোগ্যতা অনস্বীকার্য। অনলাইনের চাইতে ম্যাস ভিউয়ার্স টিভিতেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এটাই সত্য। টিভি টিভিই, এটা ভুললে চলবে না।

তবে এটা সত্য সময়ের সাথে সাথে নাটক যে অনলাইন কেন্দ্রিক সেটা গত দুই তিন বছরে ধরে দেখা যাচ্ছে। আগে নির্দিষ্ট সময়ে শুধু টিভিতেই নাটক দেখা যেত বলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে টিভির সামনে বসে থাকতো। এখন ইউটিউবে পাওয়া যাবে জেনে আর টিভির জন্য অপেক্ষা করে না। কারণ, এখন সবারই সময়ের মূল্য বেশি। নির্দিষ্ট সময় ধরে নাটক দেখার কালচারটা অনেকটাই চলে গেছে।

ভালো নাটকের পাশাপাশি আপনার কিছু কিছু নাটক দেখে দর্শক বলেছেন, ওগুলো আপনার কোয়ালিটির সঙ্গে যায় না…
নাটকে এখন সব শ্রেণির দর্শক রয়েছে। নির্মাতা হিসেবে আমি সবসময় সব শ্রেণির দর্শকদের জন্য নাটক বানাতে চাই। কখনই নির্দিষ্ট গ্রুপ, তথাকথিত বোদ্ধা, এলিট ক্লাসদের জন্য নাটক বানাই না। আমি সব শ্রেণির দর্শকদের চাওয়াকে মূল্য দেই। শ্রেণি ভেদাভেদ করিনা। যে কাজটা একজনের ভালো লাগে না, ঠিক ওই কাজটা অন্য দুজন পছন্দ করে। ঠিক উল্টোটাও হয়। এজন্য আমার কাছে সবশ্রেণির দর্শকদের কাজ থাকে।

এবার ঈদের কাজগুলোতে ভিউ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে?
এবার ওভারঅল মার্কেটে ভিউ কম। আগে ঈদের ১৫ দিনের মধ্যে আমার অনেক নাটকে ৫০-৬০ লাখ ভিউ হয়ে যেত। কিন্তু এবার তা হয়নি। সব নাটকেই একই অবস্থা। করোনার কারণে নাটকে ভিউ কম। মানুষের পকেটে টাকা নেই, অনেকে চাকরি হারিয়েছে, শহর ছেড়েছে। মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিত খেতে হচ্ছে; অনেকেই শুধু খেয়ে বেঁচে থাকতে চাইছে, তাহলে ইন্টারনেট কিনবে কীভাবে? এ অবস্থায় মানুষ আগের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে নাটক দেখবে আমি বিশ্বাস করিনা। প্রবাসী বা মধ্যপ্রাচ্যে অগণিত নাটকের দর্শক আছে। তারাও ভালো নেই। আমার মনে হয়, ওই অংশের অনেক দর্শক এবার মিসিং।

আপনার নাটকের মাধ্যমে নতুনদের সবসময় ব্রেক দেন। এটা কোন চিন্তা থাকা?
আমি চাই না আর্টিস্ট সংকট থাকুক। আমি চাই, কাজে ভিন্নতা থাকুক। ভিন্নতা আনতে গেলে বিভিন্ন ধরনের আর্টিস্ট প্রয়োজন। শুরুতে যখন কাজ করতাম তখন এটার অভাব অনুভব করতাম। তখন থেকে আমার যে আর্টিস্ট লাগতো তাকেই তৈরি করে নিতাম। বিশেষ করে তারুণ্যনির্ভর কাজ করতে গিয়ে অনেক আর্টিস্ট তৈরি করেছি। আমার তৈরি আর্টিস্টদের নাম জানাতে চাইনা। যারা নিয়মিত নাটক দেখেন তারা ভালো করেই জানেন কারা আমার হাতে তৈরি আর্টিস্ট। দর্শক এও জানে, তারা অনেকেই এখন নাটকে ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাদের আমি ভালোবাসি, তাদের আজকের অবস্থানের জন্য আমার গর্ব হয়।

আবার শুটিংয়ে ফিরবেন কবে?
আপাতত দুই মাস কাজ করবো না। এরমধ্যে প্রায় একমাস তো হয়েই গেল। ১১৪ দিন ঘরে থাকার পর ঈদের আগে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। নিজের পরিবার রয়েছে। তাদের কথা ভেবে ঈদ থেকে দুমাস কাজে বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনা পরিস্থিতি হয়তো আগামীতে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। তারপর শুটিংয়ে যেতে চাই।

অনলাইনইউটিউবঈদটিভিতাহসাননাটকভিউমাবরুর রশিদ বান্নাহমোশাররফ করিমলিড বিনোদন