ইসির মনোনয়নপত্রে লিঙ্গ বৈষম্য!

মেয়েরা জন্মের পর বাবা, বিয়ের পর স্বামী আর স্বামীর মৃত্যুর পর পুত্র সন্তানের অধীন। নিজেদের যোগ্যতা ও সক্ষমতা থাকার পরও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আজীবনই কোনো কোনো পুরুষের পরিচয় বহন করতে হচ্ছে তাদের।

অার এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার যেনো চরম প্রতিফলন ঘটালো নির্বাচন কমিশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের ফরম বহন করছে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের এক জ্বলজ্বলে দৃষ্টান্ত। ফরমে দেখা দিয়েছে অসঙ্গতি।

ফরমে বিবাহিত নারীদের স্বামীর নাম বাংলা ও ইংরেজিতে লেখার জন্য একটি সারি বরাদ্দ থাকলেও প্রার্থী বিবাহিত পুরুষ হলে তাদের জন্য এ ধরনের আলাদা কোনো সারি নেই স্ত্রীর নাম লেখার।

বিষয়টিকে অত্যন্ত দু:খজনক ও পুরষতান্ত্রিক মানসিকতার ঘৃণ্য প্রতিফলন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানিয়েছেন তাদের এ ধরনের অবস্থান থেকে সরে এসে ক্ষমা চেয়ে মনোনয়ন ফরমে স্ত্রীর নাম সংযুক্ত করার।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে মনোনয়নপত্র দাখিলের ফরমে এ ধরনের বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: ‘এটা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে এ দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নারী-পুরুষের মাঝে এখনো কী পরিমাণ বৈষম্য বিরাজমান।’

‘পিতৃতান্ত্রিক মন-মানসিকতা আমাদের সমাজের কতোটা গভীরে প্রোথিত এ মনোনয়ন ফরমেই তার প্রমাণ মিলছে। ইলেকশন কমিশন যদি সত্যিকার অর্থে নারী-পুরুষের মাঝে এ ধরনের ব্যবধান করে থাকে তা হলে তা অত্যন্ত দু:খজনক। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই এটি আশঙ্কার।’

নির্বাচন কমিশনকে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সমানভাবে ভাববার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন: ‘পুরুষদের কথা শুধু না ভেবে নারীদের কথাও ভাবতে হবে। এ ধরণের ঘটনা খুবই দু:খজনক।’

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের তথ্য সংক্রান্ত ফরমটিতে মোট আটটি ঘর আছে। যেখানে ১ নম্বর সারিতে মনোনয়ন পত্র দাখিলকারীল নাম বাংলা ও ইংরেজিতে। ২. নম্বর সারিতে পিতার নাম (বাংলায় ও ইংরেজিতে)। ৩. নম্বর সারিতে মাতার নাম (বাংলায় ও ইংরেজিতে)। ৪. নম্বর সারিতে স্বামীর নাম (বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে) (বাংলায় ও ইংরেজিতে)। ৫ ও ৬ নম্বর সারিতে যথাক্রমে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা। ৭. নম্বর সারিতে মন্তব্য (মনোনয়নপত্রে ঋণ/মামলা সংক্রান্ত কোনো তথ্য)।

কেউ কেউ আবার বিষয়টিকে সমাজের অপরিবর্তনীয় মূলধারা বলে মন্তব্য করেছেন। নারী শক্তি ও ক্ষমতায়নের অবমাননার শামিল বলে মনে করছেন।

ড. তানিয়া হক

একইরকম ভাবছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানিয়া হক। চ্যানেল আই অনলাইন-কে তিনি বলেন, ‘অামাদের অনেক পরিবর্তন এলেও মূল জায়গাটিতে এখনো কোনো পরিবর্তন অসেনি। আমাদের চাহিদা এখনো তেমনই। ছেলেদের অধীনে মেয়েদের অস্তিত্ব। মেয়েরা যে একটা স্বতন্ত্র স্বাধীন সত্ত্বা এটাকে আমরা এখনো মেনে নিতে পারি না।’

মেয়েরা সবসময়ই কোনো না কোনো পুরুষের অধীন উল্লেখ করে তানিয়া হক বলেন: ‘একজন পুরষকে লক্ষ্য করেই একজন নারীর যাবতীয় বিকাশ ঘুরপাক খায়। প্রয়োজনের কারণেই আমরা এখন সমাজের এ জায়গাটাতে অবস্থান করছি।’

এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন: ‘আগে যেমন কোথাও মায়ের নামটা ব্যবহৃত হত না। কিন্তু এখন মায়ের নামের ব্যবহার হচ্ছে। ঠিক একইভাবে আমরা সচেতন হলে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হবে তাদের এ ধরণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে তাদের ভুল স্বীকার করতে।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনছেলে-মেয়েনারী-পুরুষনির্বাচননির্বাচন কমিশনমনোনয়ন ফরমমনোনয়নপত্রলিঙ্গ বৈষম্যলিড নিউজ