হরতাল, ট্র্যাফিক জ্যাম আর আবহাওয়া। এই তিনটি দেশের উন্নয়নের পথে বেশ বড় বড় তিনটি কাঁটা।
ঠিক একইভাবে এসব ছোট ছোট বিষয়ই ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলো দুজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রবাসী নারীর উন্নয়ন কার্যক্রমেও। লীলা পড়েন ক্যালিফোর্নিয়ার লস গ্যাটোস হাই স্কুলে। তাদের ‘আউটরিচ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব’ নামে একটি ভাষা শিক্ষা ক্লাব আছে। এর মাধ্যমে তারা সেখানে বাইরে বসেই এই দেশের কিছু পিছিয়ে থাকা শিশুকে স্কাইপির মাধ্যমে ভাষা শিক্ষা দিয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশের সাজেদা ফাউন্ডেশনের সাথে একত্রিত হয়েই কাজটা করছিলেন। কিন্তু ওই তিন বাধার কারণে তাদের কাজ ঠিকঠাক এগোচ্ছিলো না।
মেয়েদের ওই কষ্টগুলো উপলদ্ধি করছিলেন বাবা ইঞ্জিনিয়ার শাহ তালুকদার। তিনি চাইছিলেন এমন কিছু করতে যেনো মেয়েরা ঠিকঠাক কাজ করতে পারে। কেননা একই সাথে সেটা যেমন মেয়েদের জন্য কাজ হবে তেমনই হবে দেশেরও জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে বসে টানা চার বছর কাজ করে গেলেন বাবা শাহ তালুকদার।
ওই সমস্যা আর সমস্যা সমাধান বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, চার বছর চেষ্টার পর তৈরি করতে পারলাম ‘ইয়াকসি’। এখন আর স্কাইপ করে অনেক কষ্ট করে পড়াতে হবে না। বরং ওরা একই সাথে ক্লাস করাতে পারবে দেশে থাকা সব শিক্ষার্থীদের।
তিনি বলেন, এখন আর মেয়েদের পড়াতে গিয়ে বাধা পেয়ে কষ্টও পেতে হবে না। এটাও মূলত আন্ত:যোগাযোগের একটি মাধ্যম। অন্যান্য মাধ্যমগুলোতে একজনের সাথে যোগাযোগ করা গেলেও এই মাধ্যম ব্যবহারে একসাথে অনেকের সাথেই যোগাযোগ করা যাবে। এজন্য স্বতন্ত্র এই সম্প্রচার মাধ্যমটি অন্যগুলো থেকে আলাদা।
‘এর মাধ্যমে শুধু যে কারো সাথে এককভাবে ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবেন তাই নয়। বরং আপনি চাইলো পুরো একদল মানুষের সাথে একসাথেই ভিডিওচ্যাট করতে পারবেন। আর কোনো বাধাই আসবে না।’ এমনটাই বলছিলেন ‘ইয়াকসি’র নির্মাতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার শাহ তালুকদার।
‘ইয়াকসি’র মাধ্যমে এখন এদেশের গরিব ছেলেমেয়েরা কেবল একটি বাটনে চাপ দিয়েই যুক্ত হতে পারবেন বিদেশে বসে পড়ানো শিক্ষকদের সাথে। এজন্য বেশি কিছু করতে হবে না। শুধু মাত্র একটি বাটন দিয়েই কাজ হবে সম্পূর্ণ।
সেবাটি পেতে শিক্ষার্থীদের কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। শুধুমাত্র একটি মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হবে। তবে যদি কোনো শিক্ষার্থীর এইটুকু করতেও সমস্যা হয় তাহলে তারা চাইলে ভিডিও অফ করে দিয়ে শুধু মাত্র অডিও শুনেই শিক্ষা নিতে পারবে। সেটাও নিশ্চয়ই বেশ কাজে আসবে বলে মনে করছেন শাহ তালুকদার।
‘আমি আজ এতোদূর এসেছি শুধুমাত্র শিক্ষার জন্য। শিক্ষাই পারে দেশকে উন্নত করে তুলতে। সেই দেশে যদি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে না পারি তাহলে মনে শান্তি আসবে কী করে!’ বলছিলেন শাহ তালুকদার।
২৮ জুন যাত্রা শুরু করেছে ‘ইয়াকসি’। এর মাধ্যমে দেশের সবখানেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাবে- দেশের বাইরে বসেও দেশের জন্য এমনই স্বপ্ন আঁকেন শাহ তালুকদার।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে বসবাস করেন শাহ তালুকদার। প্রবাসী এই বাংলাদেশী বিগত ২৮ বছর ধরে টেলিকমিউনিকেশন, মেডিক্যাল ইলেকট্রনিক্স, এন্টারপ্রাইজ সিস্টেম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে নিজের প্রতিষ্ঠান ইয়াকশি আইএনসি এর চেয়ারম্যান ও সিইওর দায়িত্ব পালন করছেন।