তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র শিশু রুবাইয়েদ আহমেদকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় বিচার ও আদালতের রায় ১০ বছরে আগে ঘোষণা হলেও এখন রায় কার্যকর হয়নি। অবিলম্বে ওই রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছে রুবাইয়েদের পরিবার এবং এলাকাবাসী।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রুবাইয়েদের পরিবারের সদস্য এবং এলাকাবাসী রায় কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন করেছে।
রুবাইয়েদের মেঝো বোন লাকি আক্তার বলেন: আমার ভাইকে যখন হত্যা করা হয় তখন আজকের প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। তিনি স্বান্তনা দিতে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। বাপ্পীর খুনিদের শাস্তির দাবিতে তিনি সংসদে ও সংসদের বাইরে সোচ্চার ছিলেন। তার বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্যই আমার ভাই হত্যার বিচার পেয়েছি। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশা করছি তিনি অবিলম্বে রায় কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিবেন।
হত্যাকাণ্ডের শিকার রুবাইয়েদের ছোট বোন অ্যাডভোকেট হ্যাপি আক্তার বলেন: সকল বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে ২০০৯ সালে। এরপর মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও ক্ষমা পায়নি আসামীরা। এরপর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত দুই আসামীর ফাঁসি রায় এখনও কার্যকর করা হয়নি।
অবিলম্বে দণ্ডিতদের রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন: আমরা আমাদের ভাইকে হারিয়েছি। সরকারের কাছে অবিলম্বে এ রায় কার্যকরের বিনীত আবেদন করছি।
রুবাইয়েদের বড় বোন ফারজানা আক্তার বলেন: একমাত্র পুত্রের হত্যাকারীদের বিচারের দিকে তাকিয়ে থেকে আমাদের বাবা-মা দুইজনেই মারা গিয়েছেন। কিন্তু উনারা রায় দেখে যেতে পারেননি। আমরা বোনেরা রায় দেখেছি কিন্তু কার্যকারিতা দেখতে পাইনি এখনো। আমরা শিশু ভাইটির হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেতে চাই।
মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে রায় কার্যকর করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
এর মধ্যে শিশু রুবাইয়েদের পরিবারের পক্ষ থেকে পারিবারিক আত্নীয় মোঃ শাহ আলম চৌধুরী আগামি তিন মাসের মধ্যে রায় কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
শিশু রুবাইয়েদকে ২০০২ সালে ৫ আগস্ট অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করা অপহরণকারী রুবাইয়েদের আপন খালাতো ভাই শিপন ও তার সহযোগীরা। অপহরণের ৯ দিন পর শীতলক্ষা নদী থেকে উদ্ধার রুবাইয়েদের মরদেহ। ঘটনার চার মাসের মাথায় ওই বছর ৩০ নভেম্বর ঢাকার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমণ বিশেষ আদালত-৩ পাঁচ আসামী শিপন, সঞ্জিত, রিপন, শংকর এবং বাদলের ফাঁসির আদেশ দেন। ২০০৬ সালে হাইকোর্ট দুই আসামীর ফাঁসি বহাল রাখে ও তিন আসামীকে ফাঁসির পরিবর্রিতে যাবজ্জীবনের রায় দেয়।
এরপর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত দুই আসামী শিপন এবং সঞ্জিত রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেও ব্যর্থ হয়। এরপর দশ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ফাঁসির এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।