‘আদিল বলছিল আল্লাহ পক্ষেই আছেন, বললাম ভাগ্য পাশে ছিল’

বহু সংস্কৃতির এক ইংল্যান্ড দল

ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাল ম্যাচের রূপ। একবার হেলে পড়ছিল ইংল্যান্ডের দিকে, তো আরেকবার এগিয়ে যাচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। শেষপর্যন্ত ভাগ্য দেবী রায় দিয়েছেন ক্রিকেটের ‘জনকের’ পক্ষে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ উঠেছে ইংল্যান্ডের হাতে। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভাগ্য কতটা পক্ষে ছিল এমন প্রশ্ন পরে ছুঁড়ে দেয়া হয় ইয়ন মরগানের দিকে। ইংলিশ অধিনায়ক জবাবটা দিয়েছেন চমকানোর মতোই! টেনেছেন ইংল্যান্ড দলে বহু সংস্কৃতির মিলনমেলার কথা।

রোববার এমন এক ম্যাচ হয়েছে যে, দুর্বলচিত্তের মানুষদের খেলা দেখাই দায় হয়ে উঠেছিল! নির্ধারিত ১০০ ওভারেও ফল দিতে যখন ব্যর্থ লর্ডসের ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল, তখন সুপার ওভারই ভরসা। কিন্তু সেখানেও ম্যাচ টাই। ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে বাউন্ডারি সংখ্যার হিসাব দিয়ে।

ভাগ্য যেন পুরোপুরি ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে! নয়ত ইংল্যান্ডের জায়গায় বিজয়ীর নাম হিসেবে লেখা হতে পারত তাদের কথাই। একটি ‘দুর্ভাগা’ ওভার থ্রো কাল হয়েছে কিউইদের! ইনিংসের শেষ ওভারে গাপটিলের থ্রো স্টোকসের ব্যাটে লেগে সীমানার বাইরে চলে গেলে অতিরিক্ত ৪ রান পায় ইংল্যান্ড। সেটির সুবিধায় ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। যেখানে ইংল্যান্ডের সমান ১৫ রান করেও ম্যাচে বাউন্ডারি সংখ্যা কম থাকার কারণে হেরে যায় উইলিয়ামসনের দল।

ম্যাচ শেষে ‘আইরিশ ভাগ্য’ ইংল্যান্ডের পক্ষে ছিল কিনা এমন প্রশ্ন শুনে হেসেছেন আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে জন্ম নেয়া মরগান। জবাবে বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ আমাদের পক্ষে ছিলেন!’

‘আমি আদিল রশিদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, সে বললো আল্লাহ নিঃসন্দেহে আমাদের পক্ষেই আছেন। আমি বললাম ভাগ্য আমাদের পাশে ছিল। এটাই আমাদের দল। আমরা বিচিত্র পরিবেশ আর সংস্কৃতি থেকে এসেছি। অনেকে অন্য দেশে বেড়ে উঠেছে। কঠিন পরিস্থিতিতে বিচিত্র সব হাস্যরস আমাদের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।’

মরগানের বক্তব্যের আসল অর্থ বুঝতে না পারার কোনো কারণ নেই। বলিহারি বৈচিত্র্য আর পুরো বিশ্বের সংস্কৃতির মিলনমেলা যেন হয়ে উঠেছে ইংল্যান্ড দল। ঠিক যেন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স! যে দলে নিখাদ ফরাসিদের চেয়ে আফ্রিকান অভিবাসীদের আধিক্যই ছিল বেশি।

মরগান নিজে জাতিতে আইরিশ। খেলেছেন আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলের হয়েও। ফাইনাল জিতিয়ে ইংল্যান্ডকে প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ দিতে সবচেয়ে বেশি যার অবদান, সেই বেন স্টোকসের জন্ম নিউজিল্যান্ডে। শৈশবও কেটেছে সেখানে। বিধ্বংসী ওপেনার জেসন রয় জন্মেছেন সাউথ আফ্রিকায়। মঈন আলি ও আদিল রশিদরা ইংল্যান্ডে পাকিস্তানিদের দ্বিতীয় প্রজন্ম।

জফরা আর্চারই বা বাদ যাবেন কেন? বিশ্বকাপের ঠিক আগমূহুর্তে এই পেসারকে দলে পেতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন ইংলিশ সাবেকরা। ২৪ বছর বয়সী পেসার তার প্রতিদানও দিয়েছেন বিশ্বকাপে ২০ উইকেট নিয়ে।

অথচ আর্চার খেলতে পারতেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েও। ক্যারিবীয়দের হয়ে অনূর্ধব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন। বার্বাডোজে বড় হওয়া পেসারই ইংলিশদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সারথী। ভিন্ন রক্ত আর সংস্কৃতি একবিন্দুতে মিলেই বিশ্বজয়ী এক ইংল্যান্ড দল।

ইয়ন মরগানবিশ্বকাপ-২০১৯