আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে নেতাদের ‘টেনশন’

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে দলীয় মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা না থাকা, আশানুরূপ গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া কিংবা পদোন্নতির বিষয়ে ‘টেনশন’ দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে।

দলের সভাপতি পদে টানা আটবার নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময়ে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী থেকে শুরু করে জিল্লুর রহমান, আবদুল জলিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক পদে দেখা গেছে।

এবার সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন কে? ওবায়দুল কাদের থাকছেন নাকি নতুন কাউকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখা যাবে? এ নিয়েও রাজনৈতিক মহলে রয়েছে চাপা উত্তেজনা।

তবে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে থাকা তথ্যমতে ওবায়দুল কাদের তার স্বপদে বহাল থাকছেন। তবে শেষ মূহুর্তে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা এটা বলা যাচ্ছে না। কারণ আওয়ামী লীগের আগে অনুষ্ঠিত হওয়া দলটির সহযোগী সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিটের সম্মেলনে নেতৃত্বের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) সিদ্ধান্ত দলীয় সভাপতি জানিয়েছেন শেষ মুহূর্তে। সেই জায়গা থেকে আবদুর রাজ্জাক, মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বাহউদ্দিন নাছিম, তরুণ প্রজন্মের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেনসহ সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য যাদের নাম গত কয়েকদিন গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে, কাউন্সিলের শেষ পাঁচ মিনিটের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত তাদের আশা থাকবে।

এবারের সম্মেলনে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও পদই বলতে গেলে নিশ্চিত নয়। আওয়ামী লীগকে আরও গতিশীল করতে শেখ হাসিনাও চাইছেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে এমন নেতাদের নিয়ে নতুন একটি গতিশীল সংগঠন পুনর্গঠন করতে। এক্ষেত্রে সম্প্রতি আলোচনায় আসা শুদ্ধি অভিযান এবারের কাউন্সিলে বড় ভূমিকা রাখবে। এমন অনেকে আছেন শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তান হননি বা গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেননি, কিন্তু তাদের নেতিবাচক আমলনামা রয়েছে দলীয় সভাপতির হাতে। শাস্তি স্বরুপ তারা সম্মেলনে পদ হারাবেন।

এবারের কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনের আভাস রয়েছে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা কারও এবার আর স্বপদে না থাকার সম্ভাবনা বেশি। বর্তমান কমিটিতে থাকা দু’জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দেখা যেতে পারে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকা একজন স্বপদে বহাল এবং একজনের পদোন্নতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

এর বাইরে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা অনেকেই পদ হারানোর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। দলীয় সভাপতি এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে দলের নীতি নির্ধারনী ফোরাম ঠিক করে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। সেখানে বর্তমান কমিটিগুলোর ৪০ শতাংশ নেতা বাদ পড়তে পারেন।

এছাড়া কমিটিতে কে আসছেন, আর আগের কে থাকছেন তা জানার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দলীয় সভাপতির আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা যোগাযোগ রাখছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে তাদের নিয়ে করা মন্তব্যের পর্যলোচনা করে নেতারা বুঝতে চাইছেন, তাদের প্রতি দলীয় প্রধানের মনোভাব কী?

এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক কে থাকছেন এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব কী, জানতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা। প্রধানমন্ত্রীকে নানাভাবে প্রশ্ন করে মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন তারা। পরে প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন: তোমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা ভালোভাবে পালন করো। দলে কাকে কোন জায়গায় রাখতে হবে সেই সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে দাও।

২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগআওয়ামী লীগের সম্মেলন