প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: আইন, বিচার এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্য এই তিন বিভাগের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক অপরিহার্য।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারকদের আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন: দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সবার জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি জেলায় জেলায় চিফ জুডিশিয়াল আদালত তৈরী করা হচ্ছে। আমরা চাইছি বিচার কাজটা যেনো একটা সুন্দর পরিবেশে করা হয়। এছাড়া আরো নানা কর্মপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
বিচারকদের নিরপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: বিচারকদের নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা করেছি। তাদের নিরাপত্তা সবচেয়ে জরুরী। সেটা একসময় কেউ খেয়ালই করত না। দু’জন বিচারককে প্রাণ দিতে হয়েছে। এসব থেকে যাতে তারা রক্ষা পায় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। বিচারকদের জন্য ফ্ল্যাটগুলোও বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে।
‘বিচার বিভাগের সফলতা অর্জনের জন্য বাজেটে বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি। এছাড়া বেতন কাঠামোও আলাদা করে দিয়েছি। আরো অনেকগুলো ভাতার ব্যবস্থা করেছি। ৩৩৪ ভাগ বেতন আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমনটা করা হয়নি। বাজেট বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের উন্নয়নটাও যাতে হয় সেদিকটাও খেয়াল রাখছি। আপনারা দেখবেন আমাদের বিচারকদের অনেক ভাতা সংযোজন করেছি। এটা কিন্তু কেউ দাবি করেনি। আমি দেখে পড়ে বুঝে দিয়েছি একটা মানুষের জন্য কী কী প্রয়োজন।’
বিচারবিভাগে ই-জুডিশিয়ারি কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা করেছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন: এতে করে মামলার জট খুলতে শুরু করবে। তবে একটা কথা মামলার রায় শুধু ইংরেজি ভাষায় লেখা হয় তা সাধারণ মানুষ পড়ে বুঝতে পারে না। তারা জানতেই পারে না মামলার কী রায়। তাদের সাথে যে উকিলরা থাকেন তারা যা বুঝিয়ে থাকেন সেটাই তারা বুঝে থাকেন। তাই আমি আপনাদের অনুরোধ করবো রায়টা ইংরোজির পাশাপাশি যাতে বাংলাতেও লেখা হয়।
‘অনেক সময় পথে আসামি ছিনতাইয়েরও ঘটনা ঘটে। আমরা সেদিকটাও বিবেচনা করছি। ভার্চুয়াল কোট বসানোরও উদ্যোগ নিচ্ছি যাতে করে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে।’
‘আমরা মনে করি সকল নাগরিকেরই ন্যায়বিচার পাবার অধিকার আছে। সকল নাগরিক যাতে আইনের আশ্রয়লাভের সুযোগ পায় আমরা সেদিকে খেয়াল রাখবো।’
রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারাধীন বিষয়ে আদালতকে প্রশ্ন উত্থাপন না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন: ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৫(৬) ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সরকারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিধানসমূহ প্রণয়ন করে থাকেন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্স গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং এতে যে কোনো পরিবর্তন আনার এখতিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতির। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫১(১) এবং ৫৫(৫) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কার্যক্রম বিষয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় না। কিন্তু প্রায়শই মহামান্য রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারধীন বিষয়ে আদালতের আদেশ প্রণয়নের বিষয়ে লক্ষ্য করা যায়।’
জাতির পিতার হত্যায় অনেক বাধা ছিলো সেটা উপেক্ষা করে রায় দেওয়ায় ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সন্ত্রাসীদের বিচার, ফেনির ঘটনায় নুসরাতের দ্রুত রায়ের বিষয়েও ধন্যবাদ জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন: আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি। ভালো লেগেছে। এটা নতুন প্রস্তাব। আলোচনা করে হয়তো এটা করে দেব।