অবিশ্বাস্য বোলিং, হেরেও ম্যাচসেরা আফতাব

ফ্ল্যাশব্যাকে টাইগার ক্রিকেট (পর্ব-২)

‘আফতাব আহমেদ’ নামটা এলেই দুটি শব্দ উচ্চারিত হওয়ার কথা ‘সম্ভাবনা’ ও ‘আক্ষেপ’। অমিত সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করলেও খেলতে পেরেছেন মাত্র ৬ বছর। অকালে ঝরে পড়া এ ক্রিকেট তারকাকে নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই। ছিলেন মূলত ব্যাটসম্যান। ব্যাটে প্রমাণ দেয়ার আগেই বল হাতে এমন এক কীর্তি গড়ে ফেলেন, যা তাকে নিয়ে যায় ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ে।

বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন আফতাব। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে টাইগাররা হেরেছিল ৩ উইকেটে। যদিও জাদুকরী বোলিং করার সুবাদে আফতাবের হাতে উঠেছিল ম্যাচসেরার পুরস্কার।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

২০০৪ সালের ৫ নভেম্বর। ভেন্যু, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। চট্টগ্রামে প্রথম ম্যাচে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ২২৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে হাবিবুল বাশার সুমনের দল গুটিয়ে গিয়েছিল একশর আগেই।

ফ্ল্যাশব্যাক: পর্ব-১: মাশরাফীর তাণ্ডবে বাংলাদেশের প্রথম তিনশ

১৩৮ রানের বিরাট ব্যবধানে হারের পর ঢাকায় ফিরে টস জিতে ব্যাটিং। দিবা-রাত্রির ম্যাচে ৫১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে একশর আগেই আবার অলআউট হওয়ার ভয়ে তখন বাংলাদেশ। খালেদ মাসুদ পাইলট ও রাজিন সালেহ ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৫৭ রান দিলে তিনঅঙ্ক পেরোয় দল। যদিও খুব বেশিদূর এগোয়নি স্বাগতিকদের ইনিংস। ৬.২ ওভার আগেই ১৪৬ রানে সব উইকেট শেষ।

সহজ লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ছিল বেশ দাপুটে। ফিফটি পেরিয়ে যায় কিউইদের ওপেনিং জুটি। মনে হচ্ছিল ম্যাথু সিনক্লেয়ার ও নাথান অ্যাস্টলই শেষ করে দেবেন ম্যাচটা। কিন্তু জুটি ভাঙতেই শুরু ‘বল টু বল’ রোমাঞ্চ। স্বল্প রানের ম্যাচটা অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে একাই জমিয়ে তুলেছিলেন আফতাব।

সেদিনের আগে মাত্র তিন ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আফতাবের। ইংল্যান্ডের মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ঘটে অভিষেক। সেখানে সাউথ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার পর চট্টগ্রামে খেলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচ। প্রথম তিনটি পরীক্ষাতেই ব্যর্থ হন ব্যাটে। নামের পাশে রান তখন- ০, ২১, ৪। চতুর্থ পরীক্ষাতেও ৪ রানের বেশি করতে পারেননি।

হার নিশ্চিত জেনেই হয়ত আফতাবকে সেদিন বোলিংয়ে ডেকেছিলেন হাবিবুল। মিডিওকার একজন বোলার এত বড় অর্জনে নাম লেখাবেন তা কে জানত! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই আফতাব চমকে দেন সবাইকে। মিডিয়াম পেস দিয়ে ধসিয়ে দেন নিউজিল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ। বোলিংয়ে খুব একটা গতি ছিল না, লাইন-লেন্থ এতটাই নিখুঁত ছিল যে দল হারলেও ম্যাচের নায়ক বনে যান আফতাব।

ইনিংসের ২০তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন আফতাব। প্রথম ডেলিভারিতেই অ্যাস্টলকে (২৯) আউট করে ভাঙেন ৭৪ রানের ওপেনিং জুটি। পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউ করেন হামিশ মার্শালকে (২)। টানা বোলিং করে গেছেন। দলীয় সংগ্রহকে শতরানে নিয়ে সিনক্লেয়ার আউট হন মোহাম্মদ রফিকের ঘূর্ণিতে। ২২ গজ ছাড়ার আগে খেলে যান মূল্যবান ৬২ রানের ইনিংস।

আফতাব তৃতীয় শিকারের দেখা পান নিজের সপ্তম ওভারের প্রথম বলে। বোল্ড করে দেন স্কট স্টাইরিশকে (১২)। প্রথম ওভারের মতো জোড়া শিকারের দেখা পান নিজের শেষ ওভারেও। চতুর্থ ও ষষ্ঠ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করেন ক্রেইগ ম্যাকমিলান (৭) ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে (০)।

১০ ওভারের টানা স্পেলে মাত্র ৩১ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট দখলে নেয়ার ইতিহাস রচনা করেন ১৯ বছরের তরুণ টাইগার। কিউইরা ১২৫ রানে ৬ উইকেট হারালে জমে ওঠে ম্যাচ। ১৩৩ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারায় সফরকারীরা। তাপস বৈশ্য আউট করেন ক্রিস হ্যারিসকে (৭)। ক্রিস কেয়ার্নস (১৭*) ও অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টরি (৩*) ১৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যান জয়ের লক্ষ্যে।

আফতাবের সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ডটি ভাঙতে সময় লাগে দুই বছর। ২০০৬ সালের আগস্টে নাইরোবিতে স্বাগতিক কেনিয়ার বিপক্ষে ২৬ রানে ৬ উইকেট নেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। নড়াইল এক্সপ্রেসের সেই রেকর্ড এখনো ভাঙতে পারেননি কেউ। তবে ছুঁয়েছেন রুবেল হোসেন। ২০১৩ সালে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬ রান খরচায় হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট নিয়েছিলেন এ ডানহাতি পেসার।

টাইগার ক্রিকেটবাংলাদেশ ক্রিকেটমাশরাফীলিড স্পোর্টস