মহান আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনাবলির মধ্যে মাসসমূহ এক বিশেষ নিদর্শন। পৃথিবী এবং চন্দ্র-সূর্যের আবর্তনের ফলে দিনরাত্রির পরিবর্তনের মাধ্যমে মাসের সৃষ্টি। মাসসমূহ আবার নানান বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। আল্লাহ তা’আলা নানাবিধ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে প্রত্যেক মাসকে বিশেষ বিশেষ সম্মানের অধিকারী করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় পবিত্র রমজানকে সাজিয়েছেন সম্পূর্ণ আলাদা আঙ্গিকে।
হাদিসে পাকে ইরশাদ হয়েছে “সকল মাসের সরদার হচ্ছে রমজান”(দায়লামি শরীফ)। নানান বৈশিষ্ট্যে ঘেরা এ মাসের শ্রেষ্ঠত্বের আলোচনায় চলমান প্রবন্ধ।
আল্লাহ তা‘আলা পুরো রমজানকে সাজিয়েছেন সাওম তথা রোজার মাধ্যমে। ইরশাদ হচ্ছে “তোমাদের উপর (রমজানের) রোজাকে ফরজ করা হয়েছে” (সুরা বাকারা)। আর এ ফরজ করা রোজাতে রেখেছেন অফুরন্ত নেয়ামত। যেমনটি রোজা ফরজের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, “যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো”। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা রোজাকে ফরজ করেছেন মানুষেরা যেন গোনাহ থেকে বেঁচে পরহেজগারিতা অবলম্বন করতে পারে।
এ ছাড়াও রোজা রাখার মধ্যে রয়েছে ফজিলতের মহাসমুদ্র, গোনাহ মাফের খোশখবরী ও প্রভুর নৈকট্য হাসিলের সহজ উপায়। হাদিসে রাসুলে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি ইমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখলো, তার পূর্বের গুনাহরাশি ক্ষমা করা হলো” (সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৪১)।
সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব মহাগ্রন্থ আল কুরআনের অবতরণও এ মাসেই। সুরা বাকারায় কুরআনের আত্মকথন উঠে এসেছে এভাবে, “রমজান ঐ মাস; যেটিতে আমি কুরআন নাজিল করেছি”। আর কুরআন নাজিলের রাত হিসেবে সহস্র মাস অপেক্ষা দামী ‘লাইলাতুল কদর’ও তাই এ মাসে।
ইরশাদ হয়েছে “খায়রুম মিন আলফি শাহর” (সুরা কদর)। অর্থাৎ, এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। শুধু তাই নয়, কুরআনের ভাষ্যমতে এ রাতে জিবরাঈল (আ.)’র নেতৃত্বে অগণিত ফেরেশতার আগমন ঘটে এ পৃথিবীতে। যারা ফজর অবধি আমাদের জন্য শান্তি কামনা করতে থাকেন।
হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, একবার রমজান উপস্থিত হওয়ার পর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “এই মাস তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়েই গেল। এই মাসে এমন একটি রাত্রি রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি ঐ রাতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হল, সে যেন সর্বপ্রকার কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত থেকে গেল। আর চিরবঞ্চিত ছাড়া ঐ রাতের কল্যাণ থেকে অন্য কেউ বঞ্চিত হয় না” (ইবনে মাজাহ-১৬৪৪)।
এ মহামহিম মাসের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এ মাসে রয়েছে ফজিলতপূর্ণ তারাবিহ নামাজ। যা প্রতিরাতে ২০ রাকাআত করে আদায় করলে পাপসমূহ মাফের ঘোষণা এসেছে নবীজির পক্ষ থেকে। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ, –“যে ব্যক্তি ইমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসে কিয়াম করবে (তারাবিহ পড়বে), তার পূর্বেকার পাপসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে” (বুখারি ও মুসলিম)।
এ ছাড়াও হাদিস শরিফে রমজানের প্রথম অংশকে রহমত, মাঝের অংশকে মাগফেরাত এবং শেষাংশকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ফরজ ইবাদতে তো ৭০গুণ বৃদ্ধি আছেই, নফলকেও করা হয়েছে ফরজের সমান মর্যাদাপূর্ণ। শয়তানকে করা হয় শিকলাবদ্ধ, জাহান্নামকে করা হয় তালাবদ্ধ। বিপরীতে খোলে দেয়া হয় জান্নাতের আট দরজা। সাহরি ও ইফতারে প্রচুর বরকত দৃশ্য ও অদৃশ্যমান দুদিক থেকেই আছে। অতএব শৃঙ্খলাবদ্ধ নিয়মে চলা রমজান আর অন্যান্য মাসের পার্থক্য এ থেতে সহজেই অনুমেয়।
আসুন, প্রভুর দেয়া শ্রেষ্ঠ মাসের কদর কিছু শ্রেষ্ঠ কাজের মাধ্যমে করি। আল্লাহ তা‘আলা সেই তাওফিক দান করুন, আমিন।