করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন পোশাক শ্রমিকেরা।
কিন্তু এই দুর্যোগময় মূহুর্তেও অনেক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে। এ কারণে সবসময় ছাঁটাই আতঙ্কের এক ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে কর্মস্থলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত, যাতায়াত ও ঝুঁকি ভাতা প্রদান এবং কর্মী ছাঁটাই বন্ধসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা।
সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মান্ত্রণালয়ে এসব দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে পোশাক শ্রমিকদের সংগঠন ‘সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন’।
সংগঠনের সভাপতি নাজমা আক্তার চ্যানেল আই অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, যেহেতু করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে তাই পোশাক শিল্পে আরো দৃষ্টি দেয়া উচিত সরকারের। কারণ এই শিল্পে যদি শ্রমিকেরা আক্রান্ত হয় তাহলে পুরো শিল্পখাত লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। অর্থনীতিও ভেঙ্গে পড়বে। সেজন্য সরকারকে সজাগ থাকতে হবে।
“শ্রমিকদের যেনো হয়রানি ও নির্যাতন না করা হয়। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকি ভাতা দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। ”
শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, সরকার শুধু মালিকদের অনুরােধেই শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলােচনা ছাড়াই পােশাক কারখানা ‘লকডাউন’ এর আওতামুক্ত রেখেছে। কিন্তু কারখানার মালিকেরা সরকারের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করছেন না। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে কাজ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। তাই এসব বিষয় নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৯ এপ্রিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি আমরা।
চিঠিতে বলা হয়, করােনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ১৩ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। মালিকদের অনুরােধে শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলােচনা ছাড়াই পােশাক কারখানা ‘লকডাউন’ এর আওতামুক্ত রাখা হয়।
গত ১৩ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার সেখানে ৪ নং নির্দেশনা বলা হয়েছে, শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবে তা করা হয়নি।
১১ নং নির্দশনায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
১৩ নং নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এই নির্দেশগুলো বাস্থবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজনে সম্পুরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে। কিন্তু এসব নির্দেশনা মানেনি কারখানাগুলো।
১৪ এপ্রিল থেকে কারখানা কঠোর ‘লক ডাউন’ সময়কালে বেশির ভাগ কারখানায় কোন পরিবহনের ব্যবস্থা না করে, শ্রমিকদের নিজ খরচে প্রায় চারগুন যাতায়াত ভাড়া বেশি দিয়ে কাজে যোগদান করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুকিঁ নিয়ে গাদাগাদি করে যাতায়াত করে কারখানায় যেতে হচ্ছে। কর্মস্থলে শ্রমিকদের প্রবেশ বা বাহির হওয়ার সময় স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ কারখানায় ৩ ফিট দুরত্ব ও মানা হচ্ছে না । তাছাড়া কিছু কিছু কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করেছে। বিষয়গুলো পরিদর্শন বা মনিটরিং করার জন্য শ্রম মন্ত্রনালয়াধীন কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কারখানা পরিদর্শন দেখা যাচ্ছে না বা কোন কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে এখনও কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬ দফা দাবি জানিয়েছে শ্রমিক সংগঠনটি।
৬ দফা দাবি
১. স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থা না করলে শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত যাতায়াত ভাতা ঘােষণা করতে হবে।
২. কর্মস্থলে শ্রমিকদের প্রবেশ-বের হওয়ার সময় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও কাজের স্থানে ৩ ফুট দূরত্ব কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রয়ােজনীয় পরিদর্শন বা মনিটরিং করতে হবে। কারখানাগুলােয় পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক ও নার্স সেবা প্রদান করছে না এবং সব কারখানায় আইসােলেশন ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. কঠোর ‘লকডাউন’ চলাকালে যে সব শ্রমিক ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় কাজ করছেন তাদের ঝুঁকি ভাতা দিতে হবে।
৪. পােশাক শ্রমিকদের জন্য করােনাভাইরাস প্রতিরােধে টিকা প্রদান করতে হবে।
৫. এই মুহূর্তে কোনো কারখানা লে-অফ বা শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে না। এখনাে কিছু কারখানা মার্চ মাসের মজুরি প্রদান করেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের নির্দেশ দিতে হবে।
৬. সব শ্রমিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
তবে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ থেকে।
শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে জানতে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানকে ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন