রমজুন শব্দ থেকে রমজান শব্দের উৎপত্তি। রমজুন অর্থ ভস্ম করা, জ্বালিয়ে দেয়া। রমজান মাস মুমিনদের পাপকে জ্বালিয়ে দেয় বিধায় এমন নামকরণ হয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন আলেমগণ। এ মহামহিম মাসেই নাজিল হয়েছে আল কুরআন।
ইরশাদ হচ্ছে, “এটিই সেই মাস; যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে” (সুরা বাকারা)। আর নাজিলের উদ্দেশ্য হিশেবে বলা হয়েছে ‘হুদাল-লিন-নাস’; ‘যাতে মানুষেরা হেদায়ত পেতে পারে।’ সুতরাং হেদায়তপ্রাপ্তির সে গাইডবুক যে পবিত্র মাসে নাজিল হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে রহমতপূর্ণ। অতএব, এ পবিত্র মাসে আল্লাহ তাআলার দয়ার কমতি নেই।রমজান প্রবেশের সাথে সাথে মহান আল্লাহর অপার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বাঁধা পড়ে যায় জিন-শয়তানদের কারসাজি।
আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদিসটি বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জিনদের লোহার শিকল পরানো হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়; একটিও খোলা রাখা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়; একটিও বন্ধ রাখা হয় না। এবং একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন, হে সৎকর্মপরায়ণ, অগ্রসর হও! হে অসৎকর্মপরায়ণ, থেমে যাও!
আল্লাহ রমজানের প্রতিটি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দান করেন।” (সহিহ বুখারি-১৮৯৮
নবীজি রাহমাতুল-লিল-আলামিন। জগতসমূহের করুণার আধার। রমজান এলে আল্লাহ তাআলার দয়ার পাশাপাশি নবীজির দয়াও বেড়ে যায়। উম্মতের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়ার প্রমাণ মেলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস তিনি বলেন, “কল্যাণকর কাজের ব্যাপারে (মানুষের প্রতি দয়া) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী।
আর তাঁর হৃদয়ের এ প্রশস্ততা রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়ে যেত। রমজান মাসে প্রতি রাতে জিবরাইল আমিন রা. তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তিঁনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে(জিবরাইলকে) কুরআন শোনাতেন। জিবরাইল আমিনের সাক্ষাতের সময় তাঁর দান প্রবাহিত বাতাসের বেগের চেয়েও বেগবান ছিল। (সহিহ বুখারী ১৯০২)
এ প্রসঙ্গে হজরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকেও হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রমজান মাস শুরু হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বন্দীকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে দান করতেন।” (শু‘আবুল ঈমান-৩৩৫৭)
যদিও মাহে রমাযান পরিপূর্ণ রহমতে ঘেরা। তবুও হাদিস শরিফে প্রথম দশদিনের ব্যাপারে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “রমজান মাসের প্রথম অংশ রহমত, মধ্যম অংশ মাগফেরাত ও শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির।” (আল-কামেল ফি দুয়াফায়ির রিজাল লি ইব্ন আদি ১/১৬৫)। একটু গভীর দৃষ্টিপাত করুন।
মাগফিরাত তথা বান্দাকে মাপ করা এবং নাজাত তথা বান্দাকে আজাব থেকে রেহায় দেয়াও কিন্তু আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভূক্ত। কেননা দয়া শব্দটি প্রত্যেকটা অনুদানের দিকে ইঙ্গিত করে। সে অর্থে রমজান কেন্দ্রীক আল্লাহ তাআলার যত পুরস্কার রয়েছে সবই তাঁর রহমতের পর্যায়ে পড়ে।
সর্বোপরি সাহরি, ইফতার, তারাবিহ, শবে কদর, কুরআনের অবতরণ, ই‘তিকাফসহ আল্লাহর অগুনতি রহমতের ভা-ার এ রমজান। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের দয়ার সাগর এ মাসে উন্মুক্ত হয়ে যায়। তবুও কেমন যেন আলস্য! বান্দারা বেখবর! অধিকাংশ লোকেই এ বিশাল রহমত থেকে নিজেদের বঞ্চিত রাখে। অন্যান্য মাসের মত এ মাসেও দুনিয়াবী কাজেই মত্ত থাকে।
রহমতের মাসেও অনেক বান্দার রহমত তার গরীব প্রতিবেশীর প্রতি জাগে না। অথচ নবীজির শিক্ষা ভিন্ন; যা উপরে আলোচনা হয়েছে। সুতরাং স্বাবলম্বীরা অন্যান্যদের প্রতি দয়ার হাত প্রসারিত করুন, রাহামানুর রাহিম আপনাদের প্রতি দয়াবান হবেন। “আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করেন না, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না”। (বুখারী ও মুসলিম)
বিজ্ঞাপন