রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলো বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, উপবৃত্তি পরিশোধ ও ইউটিলিটি বিল আদায়সহ সরকারকে বিনা পয়সায় এতদিন যেসব সেবা দিয়ে আসছিল, সেসব সেবায় বর্তমানে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি বা মাশুল দাবি করছে। ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান মূলধন ঘাটতি মেটাতে তারা সরকারের কাছে এই দাবি তুলছে।
কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর এই দাবি যৌক্তিক নয়। কারণ সরকার ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন ভাবে সরাসরি আর্থিক সুবিধা দিয়ে আসছে। আবার সরকারি অর্থ আমানত রেখে অর্থ উপার্জনের পথও তৈরি করে দিচ্ছে। সেই হিসাবে জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলো থেকে বিনা পয়সায় কিছু সুবিধা নিতেই পারে।
জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ৮ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এতে ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি চিন্তায় পড়ছে অর্থমন্ত্রণালয়ও। এর সমাধানের পথ বের করতে গত বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ রাষ্ট্রায়াত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সাথে বৈঠক করেছে। বৈঠকে এসব ব্যাংকের এমডিরা বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা প্রদান ও ইউটিলিটি বিল নেওয়াসহ সরকারকে বিনা পয়সায় যেসব সেবা দিচ্ছে সেগুলোর উপর নতুন করে সেবা ফি পরিশোধ করার অনুরোধ জানিয়েছে।
ওইদিন বৈঠক শেষে অার্থিক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো বিনা পয়সায় সরকারকে ২৭ ধরনের সেবা দিয়ে আসছে। এসব সেবার বিনিময়ে তারা মাশুল দাবি করছে। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান।
‘তাই আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি, যেন এসব খাতে সেবা প্রদানের বিনিময়ে ন্যুনতম ফি দেয়া হয়।’
সরকারি এসব সেবার বিনিময়ে অর্থ দাবি করা কোনোভাবেই উচিত নয় বলে মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সরকার নির্ধারিত হারে বড় অংকের আমানত রাষ্টায়াত্ত ব্যাংকগুলোতে রাখে। এছাড়া সরকারের অনেক ব্যবসার জন্য এলসি খোলে। সেগুলোও এসব ব্যাংকের মাধ্যমে খোলা হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো অবশ্যই আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকে।
ইব্রাহীম খালেদ বলেন, সরকার যেহেতু ব্যাংকগুলোতে এসব অর্থ জমা রাখে বা এলসি খোলে, সেই হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে জনগণের স্বার্থে বিনা পয়সায় কিছু সেবা নিয়ে থাকে।
‘তবে এই জন্য এসব সরকারি ব্যাংকগুলো জনসেবার বিপরীতে অর্থ আদায়ের দাবি করাটা যৌক্তিক নয় বলে আমি মনে করি।’
রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সরকার হতদরিদ্রদের যেসব সেবা প্রদান করে তার বিপরীতে অর্থ না কেটে বরং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনা পয়সায় যেসব সুবিধা দেয়া হয় সেক্ষেত্রে খরচ বাবদ কিছু অর্থ পরিশোধ করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, উপবৃত্তিসহ যেসব সেবা দেয়া হয় সেক্ষেত্রে সুবিধাভোগীদের থেকে অর্থ কেটে রাখা ঠিক হবে না। কারণ এটাও সরকারি প্রোগ্রাম।
‘তবে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে ইউলিটি যেমন, ওয়াসা, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতের বিল আদায় করে থাকে সরকার। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সেসব প্রতিষ্ঠান খরচবাবদ ব্যাংকগুলোকে কিছু ফি দিতে পারে।’
এতে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব বেশি ব্যয় বাড়বে বলে মনে করেন না সাবেক এই গভর্নর।
বিজ্ঞাপন