হারের মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য গল্পে শেষ হল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টুয়েন্টি সিরিজ। তিন ম্যাচ জিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ল সাকিব আল হাসানের দল। ১ উইকেট হারিয়ে ১০০ ছুঁয়ে ফেলা ইংলিশরা ১৫৯ রান তাড়ায় থামে দেড়শর আগেই।
১৬ রানের জয়ে বাংলাদেশ পেল পূর্ণতা। আয়ারল্যান্ডের পর এই প্রথম তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল টিম টাইগার্স। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের চূর্ণ-বিচূর্ণ করে প্রমাণ করল ঘরের মাঠে কতটা শক্তিশালী লাল-সবুজের দল।
টি-টুয়েন্টিতে ১৭ বছরের পথচলায় এর আগে বাংলাদেশ তিন ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল মাত্র একটি। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে ৩-০তে সিরিজ হারিয়েছিল। ১১ বছর পর নিজেদের ডেরায় ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ (৩-০) করে টি-টুয়েন্টি সংস্করণে অন্যতম সেরা সাফল্যের দেখা পেলো বাংলাদেশ।
১৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান পর্যন্ত যেতে পারে ইংল্যান্ড। ডেভিড মালান ও জস বাটলারের লড়াই থামানোর পর ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।
প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচের প্রথম ওভারেই তানভীর ইসলাম পেয়ে যান উইকেট। বাংলাদেশকে শুরুতেই সাফল্য এনে দেয়ায় সমান অবদান রাখলেন লিটন দাসও, দারুণ স্টাম্পিংয়ে ফেরান ফিল সল্টকে। ইংলিশ ওপেনারের ‘গোল্ডেন ডাক’ ম্যাচে এগিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। তবে মালান ও বাটলারের কাউন্টার অ্যাটাক বদলে দেয় ম্যাচের চেহারা।
৯৫ রানের জুটিতে জয়ের পাল্লা ভারী হয় ইংলিশদের। বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে অনেকটা দেরিতে। ইংল্যান্ডের দলীয় সংগ্রহ একশ ছোঁয়ার পর মোস্তাফিজুর রহমানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মালান। ৪৭ বলে করেন ৫৩ রান। হাঁকান ৬টি চার, ২টি ছক্কা।
টি-টুয়েন্টিতে মোস্তাফিজের এটি ১০০তম শিকার। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে উইকেটের সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন বাঁহাতি পেসার।
পরের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন সফরকারী অধিনায়ক বাটলার। ৩১ বলে ৪০ রান করেন তিনি। পরে তাসকিন আহমেদের জোড়া শিকারে জয়ের সুবাস পায় বাংলাদেশ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকলে শেষ ২ ওভারে সফরকারীদের প্রয়োজন হয় ৩১ রান।
১৯তম ওভারের প্রথম বলেই সাকিব তুলে নেন স্যাম কারেনের উইকেট। ওই ওভারে খরচ করেন মাত্র ৪ রান। পেসার হাসান মাহমুদের করা শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় ২৭ রান। প্রথম দুই বলে ক্রিস ওকস চার মারলেও আর বাউন্ডারি হজম করতে হয়নি। শেষ ৪ বলে হাসান দেন ২ রান।
বাংলাদেশ সফরে প্রথমবার টস জিতে আগে বোলিং বেছে নেয় ইংল্যান্ড। রনি তালুকদার ও লিটন ওপেনিং জুটিতে ছাড়ান ফিফটি। তিনে নেমে ঝড় তোলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
ইংলিশদের ছন্নছাড়া ফিল্ডিং ও ক্যাচ মিসের মহড়ায় বড় সংগ্রহের আশা জাগায় বাংলাদেশ। তবে স্লগ ওভারে রান তোলার গতি কমে আসে। ১২.২ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে একশ ছোঁয়া স্বাগতিকরা শেষের ৪৬ বলে একটি উইকেট হারিয়ে যোগ করে মাত্র ৫৮ রান। শেষ ৫ ওভারে আসে মাত্র ২৭ রান।
২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে টিম টাইগার্স তুলেছে ১৫৮ রান। নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৬ বলে ৪৭, সাকিব আল হাসান ৬ বলে ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
টি-টুয়েন্টিতে ইংলিশদের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। সিরিজের শেষ ম্যাচে রানে ফেরেন লিটন। ৭৩ রান করে আউট হন তারকা ওপেনার। টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটিই তার সর্বোচ্চ। আগের সেরা ইনিংস ছিল ৬৯ রানের। লিটন চার মারেন দশটি, ছক্কা একটি। শান্ত মাত্র একটি চার মারলেও বড় দুটি ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে।
ওপেনিংয়ে লিটনের সঙ্গী রনি ২২ বলে ২৪ রান করেন। লেগ স্পিনার আদিল রশিদের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন। ৫৫ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। পরে লিটন-শান্তর জুটিটি হয় ৮৪ রানের।
বিজ্ঞাপন