নজিরবিহীন পুলিশি নিরাপত্তা আর হইচই-হট্টগোলের ভোটে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা দিয়ে পার হলো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের প্রথম দিন।
সারাদিনে দুই দফায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির মাঝেই পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন প্রায় এক ডজন সাংবাদিক। এছাড়া আজকে নানা প্রেক্ষাপটে আহত হয়েছেন বহু আইনজীবী।
বিরোধের জেরে সকাল গড়িয়ে দুপুরে শুরু হওয়া এই নির্বাচনে ২২১৭ ভোট পড়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
অন্যদিকে, আজকের ভোটকে ‘অবৈধ ভোটগ্রহণ’ দাবি করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপের পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল ৭টা থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে ছিল শত শত পুলিশের উপস্থিতি। এছাড়া সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনের (ভোটকেন্দ্র) ভেতরে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হইচই-হট্টগোলের মাঝেই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এতে প্রায় এক ডজন সাংবাদিক আহত হন। সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা ঘটনায় মর্মাহত উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। অন্যদিকে, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এইবন্যক্কার জনক হামলা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ল’রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।
১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোঃ মনসুরুল হক চৌধুরীর পদত্যাগের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মোঃ মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন।
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন। একপর্যায়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। সেই সাথে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং আইনজীবী সমিতি ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
এবারের নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপ–কমিটি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল হতে আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামান আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনার উপ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে গত ২ মার্চ উভয়পক্ষের সম্মতিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উপ-কমিটি পুর্নগঠন করা হয়। কিন্তু সোমবার মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগপত্র জমা দেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ৬০২ জন আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন— সহ-সভাপতি পদে মোহাম্মদ আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা, ট্রেজারার পদে মাসুদ আলম চৌধুরী, সহ-সম্পাদক পদে নুরে আলম উজ্জ্বল ও হারুনুর রশিদ।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মনোনীত সাত প্রার্থী হলেন— মো. সাফায়েত হোসেন সজীব, মহিউদ্দিন রুদ্র, শফিক রায়হান শাওন, সুভাষ চন্দ্র দাস, নাজমুল হোসেন স্বপন, মো. দেলোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান রানা।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি পদে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন— সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির মঞ্জু, সরকার তাহমিনা সন্ধ্যা, সহ-সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে অ্যাডভোকেট আশিকুজ্জামান নজরুল, ফাতিমা আক্তার, ফজলে এলাহি অভি, ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ ও রাসেল আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিজ্ঞাপন