নির্বিচারে মানুষ হত্যা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে ইসলামে। ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। ফিতনা-ফ্যাসাদ ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী। ইসলামের অন্যতম মূলমন্ত্র: শত্রুতা নয় একে অপরের প্রতি, সব মুসলমান ভাই-ভাই।
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম প্রচারের শুরুতে শত্রু দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। শত্রুর কবলে অত্যাচারিত হয়ে, রক্তাক্ত হয়ে তিনি প্রিয় (সব মানুষেরই মাতৃভূমি তার নিকট প্রিয় স্থান) মাতৃভূমি মক্কা নগরী থেকে মদিনায় হিজরত করেন। শত্রুর আঘাতে জর্জরিত হয়েও তিনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেন- “এদের জ্ঞান দাও, প্রভু এদের ক্ষমা কর”। আল্লাহ ক্ষমাশীল, আর ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। মহানবী (সা:) ছিলেন ক্ষমার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
অতীতের অনেক মহাপুরুষদের মহত্বের কথা আমরা ইতিহাস থেকে জেনেছি। যাদের দেখার সুযোগ আমাদের ঘটেনি। কিন্তু আজ আমরা যাঁকে দেখতে পাচ্ছি- তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলেছেন,- “তোমরা ছেলেটিকে (হামলাকারীকে) মেরো না।” ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেয়ার আগেই জানতে পারলেন চির বিদায় নেয়ার পর তার জন্য কী হতে পারে।
স্বচক্ষে দেখতে পেলেন, অস্ত্র হাতে নিয়ে তাকে হত্যা করার কাজটি চলছিল। দেখতে পেলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রিয় ছাত্ররা তাকে রক্ত দেয়ার জন্য কতটা ভিড় জমিয়েছিল, সরকারি তৎপরতাসহ দেশের মানুষ তাকে কতটা ভালবাসে।
ধর্মান্ধ ধার্মিকদের মনে বড় ক্ষোভ-জাফর ইকবাল ‘নাস্তিক’। তাই আসরের নামাজ বাদ দিয়ে নাস্তিক হত্যা করতে চেয়েছিলেন! একজন মানুষ অন্তরের গভীরে ধর্ম কিভাবে পালন করল সেটা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ তার নিজের গৃহে ইবাদত-অর্চনা-আরাধনা, উপাসনা করল কী-করল না; সেটা ব্যক্তির নিজের কিংবা নিজ পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা।
আল কুরআন কিংবা যেকোন ধর্মগ্রন্থের নির্দেশনা অথবা বাণী পালন করা ধার্মিকের করণীয় কাজ। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী। ইসলামে আরো বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি একজন মানুষকে হত্যা করল সে যেন পুরো জাতিকেই হত্যা করল। খ্রিস্টধর্মে অহিংসা পরম ধর্ম। হিন্দুধর্মে অহিংসা দিয়ে হিংসাকে দমন করতে বলা হয়েছে।
অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা প্রদানের স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ‘আমাদের গ্রাম’ রচনাটির মধ্যে উল্লেখ থাকে- “আমাদের গ্রামের জনসংখ্যা…। গ্রামের মধ্যে আমরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল ধর্মের মানুষ মিলে মিশে বসবাস করি।’’
সুসাহিত্যিক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থার মতবাদ ব্যক্ত করে থাকেন তার লেখার মাধ্যমে নিজস্ব আঙ্গিকে। বর্তমান প্রজন্মের কিশোরদের আলোকিত মানুষ তৈরির তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার লেখা কিশোর উপন্যাসগুলো কেবল ছোটদের জন্যই নয়। এখান থেকে সংশোধনের জন্য, জ্ঞান আহরণের অংশীদার হতে পারেন যে কোন মা-বাবা, অভিভাবক, শিক্ষক।
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর লেখা এইসব উপন্যাস পড়ে কিশোর সমাজ মাদকের মতো ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে। খুজে পাচ্ছে আলোকিত ভবিষ্যত। দিপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনীসহ অসংখ্য বই এর মধ্যে দিয়ে কিশোর মনে আলো প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়েছেন।
হামলাকারীর আলোচিত বই “ভূতের বাচ্চা সোলায়মান” বইটি এখনো হাতে না পাওয়ায় পড়তে পারলাম না। তবে ধারণা এবং আশা করছি বইটিতে শিশুদের অনাবিল আনন্দের নানা বিষয়ও বৈচিত্রময়তায় ছড়িয়ে আছে।
সৃষ্টিকে ধ্বংস করা ধার্মিকের কাজ নয়। ধার্মিকের ইসলামের বিধান- দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। দেশের মানুষকে হত্যা করা নয়।
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (শাবিপ্রবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, যিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের দেশের শিক্ষার্থীদের তৈরি করছেন সংস্কারমুক্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর। তার প্রচেষ্টা সফল হোক। দেশে হোক সংস্কার মুক্ত। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃতী সন্তান। তার অবদান হোক সর্বজন সমাদৃত। তার হামলাকারীর সুষ্ঠু বিচার হোক। তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি যেন দেশ ও জাতিকে সেবা দানের মতো অবদান রাখতে পারেন। এই আমাদের প্রত্যাশা
বিকেকানন্দের ভাষায়-
“জীবে সেবা করে যেইজন
সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।”
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
বিজ্ঞাপন