জনতা ব্যাংকের প্রশ্ন ফাঁস: প্রমাণ দাবির বিপরীতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন আগের রাতেই অনলাইনে ফাঁস হয়েছে দাবি করে পরীক্ষার্থীরা তার স্বপক্ষে বিভিন্ন ‘প্রমাণ’ উপস্থাপন করলেও বিষয়টিকে নাকচ করে এ অভিযোগকে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ বলছেন এ পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘স্লাইড শো’ প্রদর্শন এবং লিখিতভাবে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কিছু নজির তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। এসময় ২৭ এপ্রিলের মধ্যে এ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা। দাবি আদায় না হলে তারা হাইকোর্টে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

তাদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান বলেন, ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ২০ এপ্রিল রাত থেকেই ব্যাপকভাবে ফাঁস হয়। আর এই ফাঁসের মাধ্যম হিসেবে সামাজিক যোগোযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুক ও মেসেঞ্জারকে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া হাতে লেখা ও ছাপা প্রশ্নপত্রের কিছু অংশ প্রদর্শন করে দাবি করা হয়। তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক ছাত্র পরীক্ষার আগের দিবাগত রাত ১২ টা ২২ মিনিট অর্থাৎ পরীক্ষা শুরুর ১৫ ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র হাতে পায়।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন পান দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে, শহীদুল্লাহ হলের এক শিক্ষার্থী দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে প্রশ্ন পান বলে দাবি করা হয়।

প্রদর্শিত প্রশ্নপত্রের কিছু অংশ হাতে লেখা এবং কিছু অংশ ছাপানো। তাই রকিবুল হাসানের অভিযোগ, ‘প্রশ্নপত্র তৈরির সময় অর্থাৎ ছাপানোর আগেও কিছু অংশ ফাঁস হয়েছে এবং ছাপানোর পরেও ফাঁস হয়ে।’

এই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ আহমেদের বক্তব্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের ইঙ্গিত বহন করে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা প্রমাণসহ অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি মুঠোফোনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সম্পুর্ণ অস্বীকার করেন। পরে আমরা প্রমাণ দিতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষার আগে আসলে পদক্ষেপ নিতে পারতেন, এখন তার আর করার কিছুই নেই। তার এ বক্তব্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের ইঙ্গিত বহন করে।

তবে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগকে পুরোপুরি নাকচ করে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমার এবং বাংলাদেশে ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্যই একটি চক্র গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সে ষড়যন্ত্রেরেই অংশ।’

আন্দোলনকারীদের ৯৯শতাংশই পরীক্ষার্থী নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘পেছন থেকে একটি চক্র তাদেরকে (আন্দোলনকারীদের) আমার বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের লাইন, ফ্যান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের জোর করে আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে আমার কাছে তথ্য প্রমাণ আছে।’

‘পরীক্ষার আগে এমনকি পরীক্ষার সময়ও এমন অভিযোগ কেউ করেনি। আর আইটির যুগে অনেক কিছুই বানানো যায়’ বলেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন।

পরীক্ষার আগেই কেন প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষকে জানালেন না? সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে রকিবুল হাসান বলেন, ‘আগে প্রশ্ন পেলেও শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত ছিলেন না যে এটাই আসল প্রশ্ন। পরে পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেলে আমরা বুঝতে পারি যে ওই প্রশ্নই মূল প্রশ্ন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার পর ২২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর প্রতিবাদে সমাবেশ এবং ২৩ এপ্রিল ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির প্রধান মো: মোশাররফ হোসেনের কাছে এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দেয় আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ২৪ এপ্রিল মানববন্ধনও করে তারা।

বিজ্ঞাপন

জনতা ব্যাংকপ্রশ্ন ফাঁস