‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ পাচ্ছেন দুই সাহিত্যিক

‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২০’ পাচ্ছেন হাসনাত আবদুল হাই এবং নাহিদা নাহিদ।

শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য প্রবীণ কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই এবং নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে (অনূর্ধ্ব চল্লিশ বছর বয়স্ক লেখক) নাহিদা নাহিদ এবার পুরস্কার পাচ্ছেন। নগদ অর্থের পাশাপাশি তাদের দেওয়া হবে ক্রেস্ট, উত্তরীয় এবং সার্টিফিকেট।

২০১৫ সালে প্রবর্তিত হয় ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এই পুরস্কার এদেশের প্রবীণ এবং নবীন এই দুই শ্রেণির কথাসাহিত্যিকদেরই অনুপ্রাণিত করবে।

২০১৫ সালে এই দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন যথাক্রমে শওকত আলী এবং সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। ২০১৬ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক এবং স্বকৃত নোমান। অন্যদিকে ২০১৭ সালে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতি প্রকাশ দত্ত এবং মোজাফ্ফর হোসেনের হাতে। ২০১৮ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন রিজিয়া রহমান এবং ফাতিমা রুমি। আর ২০১৯ সালে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল রাবেয়া খাতুন এবং সাদাত হোসাইনকে।

আগামী ১২ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে হাসনাত আবদুল হাই এবং নাহিদা নাহিদের হাতে।

হাসনাত আবদুল হাই
ছয় দশক ধরে হাসনাত আবদুল হাই লিখছেন। তার লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, বৈচিত্র্য। গতানুগতিকতা ও পৌনঃপুনিকতা পরিহার করে নতুনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তাঁর গল্প উপন্যাসে মূর্ত হয়ে উঠে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়-আশয়, মানুষের যাপিত জীবন, প্রেম ইত্যাদি। তিনি এ দেশের সাহিত্যে জীবনী ভিত্তিক উপন্যাসের ধারার প্রচলন করেছেন। ভ্রমণকাহিনিতে রেখেছেন নিজস্বতার ছাপ। উন্নয়ন অর্থনীতি এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট, নন্দনতত্ত্ব এবং রাজনীতি নিয়েও তিনি লিখেছেন সমান উদ্দীপনায়। পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার, সৈয়দাবাদ গ্রামে।হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৭ মে, কলকাতায়। বাবা আবুল ফতেহ। মা আয়েশা সিদ্দিকা।

হাসনাত আবদুল হাইয়ের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে উপন্যাস: আমার আততায়ী (১৯৮০), তিমি (১৯৮১), মহাপুরুষ (১৯৮৬) সুলতান (১৯৯১), মোরেলগঞ্জ সংবাদ (১৯৯৫), নভেরা (১৯৯৫), বাইরে একজন (১৯৯৫), হাসান ইদানিং (১৯৯৫), সোয়ালো (১৯৯৬), ইন্টারভিউ (১৯৯৭), সিকস্তি (১৯৯৭), লড়াকু পটুয়া (২০১০), পানেছার বানুর নকশীকাঁথা (২০১০)। গল্প : যখন বসন্ত (১৯৭৭), নির্বাচিত গল্প (১৯৭৮), শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৯৩), মরচে পড়া স্টেনগান (২০০৮), বৈশাখে ভার্জিনিয়া উলফ (২০১৪)। কবিতা : কিয়েতো হাইকু; পুলিশ এলে বলব আইডি নেই। ভ্রমণকাহিনি : ট্রাভেলগ (১৯৯২), ট্রাভেলগ/২ (১৯৯৩), সাফারি (১৯৯৪), সানাডু; আন্দালুসিয়া; কলকাতা রানাঘাট (২০১৯)। প্রবন্ধ : পল্লী উন্নয়ন, সবার জন্য নন্দনতত্ত্ব, জাপানের সংস্কৃতি, চলচ্চিত্রের নন্দনতত্ত্ব, নদী।

বাংলা সাহিত্যে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে হাসনাত আবদুল হাই পেয়েছেন বহু পুরস্কার। বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৮) এবং একুশে পদক (১৯৯৫) উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও পেয়েছেন: জগদীশচন্দ্র বসু পুরস্কার (১৯৯৪), মওলানা আকরম খাঁ পুরস্কার (১৯৯৫), শেরে বাংলা পুরস্কার (১৯৯৫), এস এম সুলতান পুরস্কার (১৯৯৫), শিল্পাচার্য জয়নুল পুরস্কার (১৯৯৬) ইত্যাদি। কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২০’ পাচ্ছেন হাসনাত আবদুল হাই।

নাহিদা নাহিদ
প্রতিশ্রুতিশীল এক গল্পকার নাহিদা নাহিদ। জন্ম ১৯৮৩ সালের ৫ জানুয়ারি, চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার চরভৈরবী গ্রামে। বাবা আবদুল মজিদ দেওয়ান। মা ইয়ারন নেছা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। তার লেখালেখির সূচনা দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত ‘নারকেল পাতার চশমা’ শিরোনামের ছোটগল্প দিয়ে। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অলকার ফুল’ (২০১৭)। এরপর প্রকাশিত হয়েছে আরও দুটি গল্পগ্রন্থ ‘যূথচারী আঁধারের গল্প’ (২০১৮) এবং ‘পুরুষপাঠ’ (২০১৯)।

নাহিদা নাহিদ ইতিপূর্বে পেয়েছেন ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’। এবার ‘পুরুষপাঠ’ গল্পগ্রন্থের জন্য নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২০’ পাচ্ছেন তিনি।

সাহিত্যিক