রক্তের ধারাটাই বোধহয় এরকম! আফ্রিকান দেশ উগান্ডায় গিয়েছিলেন ব্যবসা করতে। কিন্তু রক্তে যে মিশে আছে ক্রিকেট। সব ছেড়েছুঁড়ে তাই ক্রিকেটেই নিবেদন। সেটিও আবার উগান্ডায়। পাকিস্তানি ক্রিকেটার শহিদ আফ্রিদির ভাতিজা ইরফান আফ্রিদি এখন মাতাচ্ছেন দেশটির ক্রিকেটে!
জন্ম, বেড়ে ওঠা সবকিছুই পাকিস্তানের করাচীতে। চাচা শহিদ আফ্রিদি বিশ্বসেরা তারকাদের একজন হলেও ইরফান কোনদিনই খেলেননি পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে। টেপ টেনিস বলে হাতেখড়ি। সত্যিকারের ক্রিকেট বলে ভীষণ ভয় থাকায় ভবিষ্যতে ক্রিকেটার হবেন এমন ভাবনাও ছিল না ইরফানের।
ভাতিজার জীবনের একটা গতি করতে তাই পারিবারিক ব্যবসায় লাগিয়ে দেন শহিদ ও তার ছোট ভাই মুস্তাক আফ্রিদি। ২৪ থেকে ২৮ বছর পর্যন্ত সাউথ কোরিয়ায় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানদারি করার পর ইরফানকে ২০১৩ সালে উগান্ডার রাজধানীতে পাঠিয়ে দেন আফ্রিদি। উদ্দেশ্য সেখানে মোটরগাড়ি আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার প্রসার ঘটানো!
পাশের দেশ কেনিয়ায় ক্রিকেটের প্রসার থাকায় উগান্ডাতেও মোটামুটি ক্রিকেট খেলা হয়। শখের বশে সেখানেই প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বল হাতে নেন ইরফান। বল হাতে নিয়েই দেখলেন চাচার মতো গুগলি বলটা ভালোই ছুঁড়তে পারেন!
শখের বশে বল করতে গিয়েই চোখে পড়ে যান উগান্ডার সাবেক পেসার আসাদু সেইগার। ক্রিকেটের বলে যে ভীতিটা ছিল ইরফানের, সেইগার হাত ধরে সেই ভয় কাটিয়ে ওঠেন দ্রুতই। খেলতে খেলতে দেশটির ক্লাব ক্রিকেটে সুযোগ পেয়ে একদিন ডাক পেয়ে যান উগান্ডা জাতীয় দলেও। ২০১৬ সালে ৩১ বছর বয়সে কাতারের বিপক্ষে উগান্ডার হলুদ জার্সি ওঠে তার গায়ে।
দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেললেও ইরফান নিজের জাত ছিনিয়েছেন চলতি বছর মালয়েশিয়াতে হওয়া ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের ডিভিশন ফোরে। ইরফানের ভাষায়, ‘৮০ শতাংশ লেগস্পিন, ১০ শতাংশ অফ-স্পিন ও ১০ শতাংশ ক্যারম বল’ দিয়ে সেই টুর্নামেন্টে ১৫ উইকেট তুলে নেন তিনি।
বোলিংয়ের রানআপ, উইকেট পাওয়ার পর হাত উঁচিয়ে উদযাপন এবং ব্যাটিংয়ে চাচা আফ্রিদির মতই বিধ্বংসী ইরফান। গত বছর মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ১০ ছক্কায় ৭১ বলে ১০৮ রানের একটি ইনিংসও আছে তার ঝুলিতে। কেবল চাচার মাথার চুলই পাওয়া হয়নি ইরফানের। শহিদ আফ্রিদির যেখানে মাথা ভর্তি সিল্কি চুল, ইরফানের মাথা সেখানে প্রায় বিরানভূমি!
অলরাউন্ডার কেমুথ কামুয়েকার পর আর কোনো আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার পায়নি উগান্ডা। ইরফানের উইকেট শিকারের দক্ষতা আর ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং দেখে এরইমধ্যে তাকে কামুয়েকার কাতারে ফেলেছে উগান্ডাবাসী। ইরফান মানেই এখন তাদের কাছে নিখাদ বিনোদন। দেশটির ক্রিকেট স্টাফ, সতীর্থ ও দর্শকদের কাছ থেকে এখন ভালকিছু করার তাগিদ পান বলে ইএসপিএনকে জানিয়েছেন ইরফান।
‘যতবারই তারা আমাকে চাপ দেয়, ততবারই আমার উপকার হয়। তারা আমাকে বলে আমরা তোমার সঙ্গে আছি, নিজের সর্বোচ্চটা দাও, কঠিন পরিশ্রম করো। দলের প্রত্যেকে আমার পাশে থাকে এবং খুব সাহায্য করে।’
নামের পাশে আফ্রিদি থাকায় এই প্রত্যাশার চাপটা আরও বেড়েছে ইরফানের কাঁধে। উগান্ডাবাসীর কামনা চাচা শহিদ আফ্রিদির মতো যদি একদিন নিজের নামটা আরও উজ্জ্বল করতে পারেন ইরফান। সঙ্গে উজ্জ্বল হবে উগান্ডার নাম-ক্রিকেটও!
ভাতিজা উগান্ডায় নাম করছে দেখে শহিদ আফ্রিদিরও বেশ গর্ব হয় বলে জানিয়েছেন ইরফান। ভানুয়াতুর বিপক্ষে ১৭ বলে ৫১ রান করার পর চাচার কাছ থেকে ‘ভালো খেলেছ’ লেখা একটি খুদে বার্তা পেয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন