আওয়ামী-বামপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশের বিরোধীতা, বিএনপি-জামায়াত পন্থী সাদা দলের বর্জন এবং আইনি বাধা মোকাবেলা করে শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বিশেষ অধিবেশন।পরবর্তী চার বছর কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন, তা ওই অধিবেশনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সিনেটের এ বিশেষ সভা থেকে তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচন করা হবে। এই তিনজনের মধ্য থেকে যেকোন একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
ঢাবি সিনেটের বর্তমান হাল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ২০(১) ধারার বিভিন্ন উপধারা অনুযায়ী সিনেটের নির্বাচিত এবং মনোনীত মোট সদস্য সংখ্যা ১০৫ জন। বর্তমানে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধিদের ২৫টি এবং ছাত্রদের ৫ জন প্রতিনিধিসহ মোট ৫০টি পদই শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে ৩৫ জন নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি, সরকার মনোনীত পাঁচজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মনোনীত পাঁচজন, স্পিকার মনোনীত পাঁচজন সংসদ সদস্য প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুই উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ এবং নিবন্ধকের পাঁচটি পদসহ মোট ৫৫ জন প্রতিনিধি বর্তমানে বহাল রয়েছেন।
প্যানেল নির্ধারণ হবে যেভাবে
সিনেট সদস্যরা তিন সদস্য বিশিষ্ট এক বা একাধিক প্যানেলের নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। তবে যাদের নাম প্রস্তাব করবেন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের জন্য তাদের লিখিত সম্মতি দিতে হবে সিনেট সভাপতির কাছে। যদি একাধিক প্যানেল হয় তবে ভোটাভুটি হবে। সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া তিনজনই চূড়ান্ত প্যানেলে যাবেন। এই তিনজনের মধ্য থেকে যে কোন একজনকে রাষ্ট্রপতি উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন; সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তই নিয়োগ পাবেন এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
একাধিক প্যানেল হওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
উপাচার্য সাধারণত রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। সেক্ষেত্রে আওয়ামী-বামপন্থী নীল দল এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের সিনেটের সমান সংখ্যক বা কাছাকাছি সংখ্যক সদস্য থাকলে একাধিক প্যানেল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমান সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধিদের মধ্যে ৩৩ জনই নীল দলের। দুই জন মাত্র সদস্য আছে আছে সাদা দলের। বাকী ২০ জনও সরকার মনোনীত প্রতিনিধি। সাদা দলের মাত্র দুইজন প্রতিনিধি নিয়ে চাইলে তারাও প্যানেল দিতে পারে।কারণ তাদের একজন প্রস্তাবক এবং একজন সমর্থক রয়েছে। কিন্তু সিনেটের এ বিশেষ অধিবেশন তারা বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় সে সুযোগও থাকছে না। তাই একটি প্যানেল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি এবং সেটি নীল দল থেকেই।
নীল দলের প্যানেলে থাকার সম্ভাবনা যাদের
একাধিক সিনেট সদস্যের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এমন সিনিয়র অধ্যাপকদের সমন্বয়েই নীল দলের তিন সদস্যের প্যানেল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন এমন অধ্যাপকদেরই প্যানেলে আনার ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখছেন সিনেটররা। প্যানেল থাকতে পারেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও।
একজন সর্বোচ্চ কয় মেয়াদে উপাচার্য হতে পারবেন?
কয়েকজন সিনেট সদস্য চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন, একজন সর্বোচ্চ কয় মেয়াদে উপাচার্য হতে পারবেন তার কোন স্পষ্ট নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে নেই। নেই কোন বাধাধরা নিয়মও।
এ পর্যন্ত সর্বাধিক তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ। বিএনপি জোটের সবশেষ আমলে নিয়োগ পেয়ে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে তৃতীয় মেয়াদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়েছিল।
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ২০০৯ সালে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১৩ সালে সিনেটরদের দ্বারা নির্বাচিত হন। কয়েকজন সিনেটরের মতে, নিয়োগ পাওয়া হিসেবে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলেও নির্বাচিত হিসেবে এটা তার প্রথম মেয়াদ।
নির্বাচন কেন্দ্রিক ঘটনা প্রবাহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর ২১(২) ধারার অর্পিত ক্ষমতাবলে উপাচার্য ২৯ জুলাই বিকাল চারটায় সিনেটের বিশেষ সভা আহবান করেছেন মর্মে সিনেট সদস্যদের কাছে গত ১৬ জুলাই একটি চিঠি দেন ঢাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এনামুজ্জামান। এতে বলা হয়, উক্ত বিশেষ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩, ১১(১) ধারা অনুযায়ী চ্যান্সেলর কর্তৃক ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল মনোনয়ন করা হবে।
এরপর সিনেটের ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রনিনিধি নির্বাচন না করেই এ সভা আহ্বানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৫ জন রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট হাইকোর্টে রিট করেন।এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ জুলাই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করতে ঢাবি সিনেটের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। কিন্তু তার মাত্র দুই দিন পর, ২৬ জুলাই হাইকোর্টের সে রায় স্থগিত করে দেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের এ আদেশের পর অধিবেশন অনুষ্ঠানের পক্ষের আইনজীবীদের দাবি: এর ফলে আগামী ২৯ জুলাই অধিবেশন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আর কোন আইনি বাধা নেই। নির্ধারিত সময়েই হবে সিনেটের বিশেষ অধিবেশন। ওইদিন বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হবে সিনেটের বিশেষ অধিবেশন।
সবশেষ শুক্রবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে সিনেটে ২৫ জন নির্বাচিত গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিসহ ৫০ জন প্রতিনিধি না থাকায় ভিসি প্যানেল নির্বাচনের এ অধিবেশন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন