বাংলাদেশে প্রতি মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রাখার প্রতিক্রিয়ায় ছেয়ে গেছে হাজারো মানুষের টাইমলাইন। নিউজ ফিডে ফেসবুক বন্ধে হচ্ছে এরকম ফিসফিস। ফেসবুক বন্ধ হচ্ছে এমন গুজব থেকে খবর প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যমে। সেসব গুজব নির্ভর খবর আবার নতুন গুজব ছড়াচ্ছে ফেসবুকেই।
গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে ফেসবুকে হাজারো ফলোয়ারে তারকা হয়ে যাওয়ারাও হয়েছে সরব। তাদের কেউ কেউ বলছে শিশু-কিশোরদের রাত জাগার প্রবণতা দূর করতে রাত ১২ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রাখাই ভালো। আবার কেউ করছেন হাসিঠাট্টা।
শিক্ষক ও লেখক হাসিম উদ্দীন আহমেদ লিখেছেন,”গুজব ছড়ানোর দায়ে সরকার নাকি শীঘ্রই ফেসবুক বন্ধ করে দিচ্ছে। এটাও নিশ্চয়ই একটা গুজব!’
রসিকতা করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ইব্রাহিম খলিল সবাক ফেসবুকে লিখেছেন,”রাত জেগে ফেসবুকিং করে আমার শুধু কর্মক্ষমতাই বাড়েনি, কর্মদক্ষতাও বেড়েছে।আগে শুধু ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর পারতাম। এখন এডব প্রিমিয়ার, আফটার ইফেক্টস, ফাইনাল কাট প্রো, এডব অডিশন, এডব এনিমেটও পারি।
সুতরাং সবাই রাত জেগে ফেসবুকিং করুন, দিনের বেলা ঝিমোন। দক্ষতা অটো বেড়ে যাবে।
এক বন্ধু আমার পরামর্শ শোনেনি। এখন সে কাজের ক্ষমতা, কামের ক্ষমতা, সব ক্ষমতা হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।”
তবে গুজব এবং গুজব নিয়ে হাসি-ঠাট্টার মধ্যে রসিকতার ছলে মানসিকতার উন্নয়নে জোর দিয়েছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ আর হোসাইন। ফেসবুক বন্ধ না করে বরং প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে সচেতন করে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার শুরু করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের লেখাটি পুরোপুরি তুলে ধরা হলো:
“প্রতিরাতে ফেসবুক ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে
…পলিসি মেকাররা যা ভাবছেন;
-সবাই গুড নাইট বলে নাইট ড্রেস পরে শুয়ে পড়বে
-জঙ্গিরা সকালে দলে দলে তওবা পড়তে পড়তে আত্মসমর্পণ করবে
-যে ছেলেটা আজ রাতেই ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করবে ভেবেছিল, সে বাথরুমে ঢুকে নিজের মাথা কমডে চেপে ধরে আত্মহত্যা করবে
…এই সাফল্য দেখে কয়েকদিন পর নোটিশ আসবে, ‘কর্ডলেস ফোন দিনে ৬ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে না। নেটওয়ার্ক ডাউন করে দেয়া হবে’
‘দা বটি কোরবানি ঈদের সময় ছাড়া ধার করানো যাবে না…চাকু ধার করার সাইকেল যদি কাউকে অন্য মৌসুমে চালাতে দেখা যায় তাহলে সেই বান্দারে ডাউন করে দেয়া হবে’
ছোটবেলায় পড়েছিলাম বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ
যেদিন যদি আজকের ২/১ টা বিজ্ঞ পলিসিমেকারদের চিনতাম, তাহলে রচনায় লেখতাম… “আরে ভুদাই, ডিনামাইট রাতে ব্যবহার করা বন্ধ করে দিলেই তো হয়… হয়ে গেলো বিজ্ঞান আশীর্বাদ”
ব্যাপারটা বিজ্ঞান, পিক টাইমে আশীর্বাদ… আর অফপিক টাইমে অভিশাপের মতো
জোকস এপার্ট; যে ছুরি দিয়ে হত্যা করা যায়, সেই ছুরিই আবার কাজে লাগে কারো হাতের দড়ি কেটে তাকে উদ্ধার করার জন্য। ব্যাপারটা মানসিকতায়।এটা যতদিন না চেইঞ্জ করার উদ্যোগ নেয়া হবে, ততদিন ছুরি চাকু দাড়ি-মোছ কামানো যতই লিমিটেড করেন, লাভ হবে না ভাইটি
এটা কেমনে চেইঞ্জ করবেন? মানুষের মানসিকতা কেমনে চেইঞ্জ করবেন?
যেমনে তারা ব্রেইন ওয়াশ করে, ঠিক তেমনে
তারা পারলে, আমরা পারব না কেন রে?
তারা ব্রেনওয়াশ করা ছোটবেলা থেকে শুরু করে… আমরাও শুরু করবো স্কুল কলেজ থেকে
তারা ফিউচার দেখায়… আমরাও দেখাবো ফিউচার
“দেশজুড়ে চলতে থাকা এই ন্যাশনাল ইস্যুর সমাধানটা আইসিটি মন্ত্রণালয় করতে পারবে না… পারলে পারবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়”
এটাই আমাদের ধরতে টাইম লাগছে… এই আর কি।”