কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগেরি’র বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বাংলাদেশী স্কলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ)’র আয়োজনে ১৭ আগস্ট প্রথমবারের মত হয়ে গেল ‘থ্রি-মিনিট থিসিস’ এর আদলে করা ‘নলেজ মোবালাইজেশন’ অনুষ্ঠান।
সারা বিশ্বে ‘থ্রি-মিনিট থিসিস’ একটি সাম্প্রতিক ধারণা যেখানে গবেষকরা বহু বছর ধরে যে জটিল গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন সেটিই তিন মিনিটের মধ্যে তাঁরা সাধারণ মানুষের জন্য বোধগম্য করে সবার সামনে তুলে ধরেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর দূরত্ব কমিয়ে আনতে গত প্রায় দশ বছর ধরেই ‘থ্রি-মিনিট থিসিস’ একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ‘নলেজ মোবালাইজেশন’ বা জ্ঞান সম্প্রসারণ বিষয়ক এই আনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগেরীতে অধ্যয়নরত বর্তমান শিক্ষার্থীরা তিন মিনিটের মধ্যে তাদের গবেষণা ক্যালগেরিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি, ইউনিভার্সিটি এলামনাই এবং প্রফেশনাল এসোসিয়েশনের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করার অনন্য এই সুযোগ পেল।
দুই ঘণ্টা ব্যাপী এই অনুষ্ঠানটি ক্যালগেরির বাংলাদেশ সেন্টারে বিকাল ৫টায় শুরু হয়। মূল অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে চা-চক্রের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে পরিচিত হন অংশগ্রহণকারীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানান বিএসএ’র বর্তমান এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগেরিতে পিএইচডি গবেষণারত জনাব সাইফ উদ্দিন সিকদার। সূচনা বক্তব্যের পরে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের গবেষণা উপস্থাপন পর্ব।
অনুষ্ঠান শেষে নৈশভোজের সময়ে শিক্ষার্থীরা নেটওয়ার্কিং ও কমিউনিটির সাথে মেলবন্ধন স্থাপনের সুযোগ পান। অনুষ্ঠানে আসা দেশি-বিদেশি কমিউনিটি মেম্বাররা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গও সুযোগ পান মেধাবী এসকল শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার এবং তাঁদের কাজ সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার। অনুষ্ঠানের প্রধান স্পন্সর – ক্যালগেরির স্বনামধন্য রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায়ী এবং ইকবাল রিয়েল এস্টেটের স্বত্ত্বাধিকারী জনাব ইকবাল রহমান বলেন, ‘আমি এ ধরনের প্রচেষ্টার সাথে সংযুক্ত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি এবং ভবিষ্যতেও এধরনের আরও অনুষ্ঠান হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি’।
অনুষ্ঠান শেষে একান্ত সাক্ষাতকারে ডঃ তুরিন বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এরকম কমিউনিটি একাত্ত্বিকরণ অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। যেভাবে আজকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ কমিউনিটি সদস্যদের সাথে একটি পরিচিত ঘটল সেভাবে ভবিষ্যতে স্কুল, কলেজগামী তরুণদের নিয়ে কাজ করা গেলে বাংলাদেশি কমিনউটির তরুণরা আরও উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।
অংশগ্রহণকারী একাধিক শিক্ষার্থী এই অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পিএইচডি অধ্যয়নরত মহসীন রানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত নতুন শিক্ষার্থীদের গবেষণার সাথে কমিউনিটির সবার পরিচিত হওয়ার জন্য এই প্রোগ্রাম এক অনন্য সুযোগ’। অনুষ্ঠানে নিজেদের কাজ উপস্থাপনাকারীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষার্থী ১৬ বছর বয়সী সাকিব বলেন, ‘আমার জানার উৎসাহ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উদ্দ্যোগের সাথে নিজেকে জড়িত করেছি এবং এ থেকে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি’।
বিএসএ’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও কিনিসিওলজি বিভাগে পিএইচডি গবেষণারত নবাংশু শেখর দাস সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রোগ্রামের সমাপ্তি ঘোষণায় বলেন, ‘আজ এই অনুষ্ঠানে আগত দর্শকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি আমাদেরকে আবারও এই ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজনে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমি আশা করছি এই আয়োজন ক্যালগেরিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সাথে বিশ্ববিদ্যালেয়র ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে’।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের স্বীকৃতিস্বরূপ বিএসএ’র পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।যে কোনো গবেষকই চেষ্টা করেন জ্ঞানের উৎকর্ষতা আরও উপরে নিয়ে যেতে। এ ধরণের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।