১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। সেদিনও তৎকালীন পূর্ব বাংলায় বসন্ত ঋতু ছিল। বসন্তের আলো ঝলমলে দিনের পর তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় নেমে এসেছিলো বিভীষিকাময় রাত। এই কালরাতে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর নৃশংস গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ওই রাতে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যা প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালি ক্রমেই স্বাধীনতাকামী হয়ে ওঠে। এ ধারাবাহিকতায় বাঙালি ব্যালটের মাধ্যমে ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়। এর ফলে প্রথমবারের মতো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বাঙালিদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ কারণে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। এক পর্যায়ে সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের হাতে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা অর্পণ ঠেকাতে পূর্ব বাংলার স্বার্থবিরোধী রাজনীতিকদের সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আড়ালে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেন। তার নির্দেশ মতে, ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় মেশিনগান, কামান, রাইফেল, মর্টার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ রাজধানীর অনেক জায়গায় তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই কালরাতেই পাকিস্তানি ঘাতক সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলার অকুতোভয় বীর সন্তানরা প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসে বাঙালির কাঙ্খিত স্বাধীনতা। জাতীয় সংসদ ইতোমধ্যে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমরা মনে করি, জাতীয়ভাবে এই দিবসের পাশাপাশি ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে আমরা আহ্বান জানাই। এছাড়া পাকিস্তানিরা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে জড়িত সৈন্যদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিলেও গত ৪ যুগেও তা বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি ১৯৭১ সালের মতোই পাকিস্তানিরা এখনো নিজেদের বর্বরতাকেই ধারণ করে চলছে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি স্বাধীনতার চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হোক সবার একমাত্র লক্ষ্য। স্বাধীনতাকামী বাঙালির রক্তেভেজা ২৫ মার্চের এই তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষণে নিহত সকল শহীদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।