কানাডার ৭০ শতাংশ বাংলাদেশী কানাডিয়ান মূলধারার রাজনীতিতে নিঃস্পৃহ, ১৫ শতাংশ গত ১০ বছরে একবারও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। টরোন্টোভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা প্রগ্রেসিভ অ্যাকশন ফর কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্ট (পেস) এর জরিপে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জরিপের ফলের উপর আলোচনা করতে গিয়ে বক্তারা এ ধরণের নির্লিপ্ততা আত্মকেন্দ্রিক ও সঙ্কীর্ণ মানসিকতা তৈরি করে বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের সামাজিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে সামাজিক সংগঠনগুলোর সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত।
শনিবার ড্যানফোর্থ এর অ্যাক্সেস পয়েন্টে পেস আয়োজিত “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নাগরিক সম্পৃক্ততা: নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের ভূমিকা” শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।
মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের অংশগ্রহণ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এটি দ্বিতীয় সেমিনার। এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন অব কানাডাও এ ধরণের সেমিনারের আয়োজন করেছিলো।
জরিপের মূল পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরেপেস’র ‘অ্যাক্ট’ প্রোগ্রামের সমন্বয়ক ব্যারিস্টার নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমাদের কম্যুনিটির বড় অংশই নাগরিক নিঃস্পৃহতা ও বিচ্ছিন্নতায় আক্রান্ত। এর থেকে উত্তরণের জন্য সামাজিক সংগঠনগুলোর জোরদার কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত।’
প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে বেসরকারি সংস্থা ‘সেটলমেন্ট এ্যাসিসটেন্স অ্যান্ড ফ্যামিলি সাপোর্ট সার্ভিসেস’-এর প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ড. কাজী হক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অভ্যন্তরীণ দলাদলি ও বিভক্তিই মূলধারার রাজনীতিতে আমাদের অংশগ্রহণের প্রধান অন্তরায়। কানাডায় বাংলাদেশি কমিউনিটি বড় হচ্ছে, সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে। তার সাথে সঙ্গতি রেখে আমাদেরও বদলাতে হবে।
ড. কাজী হক বলেন, প্রবাসে বাঙালি কমিউনিটির কানাডার রাজনীতির চর্চাই করা উচিৎ, বাংলাদেশীর দলীয় রাজনীতি নয়।
সাপ্তাহিক নতুন দেশ এর প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক শওগাত আলী সাগর বলেন, কানাডার ফেডারেল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুরুতে বাঙালি কমিউনিটির অনেকেই নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের অনেকেই দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সম্পৃক্ত নন। ভোট এলেই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ আর অন্য সময়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে কমিউনিটির প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোরও ভিন্ন ধারণা তৈরি হয়। তিনি প্রার্থীতার জন্য মনোনয়নের প্রার্থীতা ঘোষণা না করে যোগ্য এবং উপযুক্ত নেতৃত্ব গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
পেস’র প্রেসিডেন্ট জনাব ইমামুল হক বলেন, ‘পেস নাগরিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি এবং মূলধারায় আমাদের কম্যুনিটির ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাবে। এর জন্য পেস, অ্যাক্ট প্রোগ্রামের আওতায় বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।’
জরিপের ওপর মূল আলোচনা শেষে সেমিনারে যোগ দেওয়া বিভিন্ন পেশা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।