১৯৬৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড হোল্ট পোর্টসি বীচে সাঁতার কাটতে নেমে সেই যে নিখোঁজ হলেন, একান্ন বছর পর এখনো পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞান, কোনো গবেষকই সুরাহা করতে পারছে না তার অন্তর্ধানের আসল রহস্য কী!
তিনি সুঠামদেহি ছিলেন। নিয়মিত ব্যায়াম ছাড়াও সাঁতার, ডুবুরিপনা, সার্ফিং, নৌকা চালনা, মাছ-ধরা ইত্যাদি জলভিত্তিক সবরকম ক্রীড়া-কৌতুকেই দক্ষ ছিলেন। পানির নীচে ডুব দিয়ে কয়েক মিনিট দম ধরে রাখতে পারতেন। সংসদে কৌতুকচ্ছলে সেটি দেখিয়েছেনও দু’তিনবার। বেশির ভাগ সময়ই ফরমাল পোশাকের নীচে বীচ-স্যুট পরে থাকতেন যাতে অফিস শেষ হওয়া মাত্রই বীচে বা পানিতে নামা যায়। সমুদ্রের পাড়ে তার তিনটি কটেজ ছিল। প্রত্যেকটি কটেজ ছিল জলক্রীড়ার সরঞ্জামে সজ্জিত। এই রকম একজন মানুষের কুলের অগভীর জলে ডুবে মরা সম্ভব কি?
ডুব দেয়ার পর তাকে আর দেখা না যাবার ঘন্টাখানেক পর হতেই রাডার, জিপিএস ইত্যাদি অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম-সজ্জিত উদ্ধারকারী ও সন্ধানকারী হেলিকপ্টার, জাহাজ, ডুবুরিদল সব রকম চেষ্টা চালায়। কিন্তু সবই ব্যর্থ। হোল্ট ভোজবাজির মতো গায়েব।
অন্তর্ধানের মাত্র তেইশ মাস আগে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন হোল্ট। প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিশাল ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে চলতে অসম্মতি জানালেন তিনি। তার যুক্তি ছিল ফালতু টাকা নষ্ট হয়, জনগণের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে, নিজেকে সাধারণ জনগণের প্রভু-প্রভু লাগে, প্রাইভেসি নষ্ট ইত্যাদি। কিন্তু ১৯৬৬তেই তার অফিসের জানালায় এক বন্ধুকবাজের গুলি এবং বিরোধি দলের নেতাকে হত্যাচেষ্টার পর তিনি একজন সার্বক্ষণিক নিরাপত্তারক্ষী রাখতে রাজি হলেন; রাখলেনও। তার অন্তর্ধানের পর সেই নিরাপত্তা রক্ষীও বলল, আমি হয়ত অন্যমনস্ক ছিলাম। আরো দু’চারজন থাকলে কেউ না কেউ নজর রাখতে পারত।
বলা আবশ্যক, হোল্ট বিষয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বও আছে। চীনা সাবমেরিন বা সিআইএর সাবমেরিন তাকে নিয়ে দ্রুত পগার পার হয়েছে—এই সন্দেহ আছে। আরো নানারকম সংশয়-সন্দেহ আছে। ইমরান খান বিষয়ে হোল্ট-এর বিষয়টি বিবেচনার প্রয়োজন আছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনেই সকল দেশের সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)